আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার তাগিদ দিলেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেছেন, ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নত করতে হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আকর্ষণে স্থিতিশীল নীতি প্রণয়ন এবং জ্বালানি–সংকট সমাধানে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

রাজধানীর বনানীর শেরাটন হোটেলে বাংলাদেশ আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) আয়োজনে ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি: ব্যবসায়িক পরামর্শ, আইনশৃঙ্খলা ও জ্বালানি–সংকট ব্যবস্থাপনা মূল চাবিকাঠি’ শীর্ষ সংলাপে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। অ্যামচেমের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার ওপর জোর দিয়ে অ্যামচেমের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নীতিমালা ও বাস্তবায়নের জন্য পৃথক ইউনিট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে কার্গো পরিবহনের অপ্রতুলতার কারণে কাঁচামাল প্রাপ্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।

সিটি ব্যাংক এনএর সিটি কান্ট্রি অফিসার মো.

মঈনুল হক দেশের অর্থনীতির ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে, ফরেন চেম্বারের সভাপতি জাভেদ আখতার প্রমুখ। অ্যামচেমের সাবেক সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংলাপে এইচএসবিসি, ফিলিপ মরিস, আরবিডি ফাইবারস, মেটলাইফ, শেভরন, অ্যাভেরি ডেনিসন, বিএটি, কোকাকোলা, পেপসিকো, জিই, বাংলা ট্র্যাকসহ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন।

সংলাপে পানীয় খাতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা অতিরিক্ত শুল্ক ও ন্যূনতম কর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ থেকে ২৫ শতাংশ এবং টার্নওভার কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৬ শতাংশ করা হলে বিনিয়োগ বাড়বে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার দাবি করেন তাঁরা।

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা ও মুদ্রাস্ফীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে কাজ করছে, যা অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

আইনের হাত বনাম নিজের হাত  

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিশেষত বাংলাদেশে গত ২৬ জুলাই-পরবর্তী আট মাসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। গণপিটুনি, স্থানীয়ভাবে বিচারকাজ পরিচালনা, মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ এসব অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং আইনশৃঙ্খলার ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস দানা বাঁধে, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। জনগণ যখন ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। এর ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ে।

এ সমস্যা নিরসনে যথাযথ আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে তার কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং মিথ্যা অভিযোগ ও গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি সুস্থ, ন্যায়ভিত্তিক ও স্থিতিশীল সমাজ গঠন সম্ভব।

অনেক সময় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ সময় এবং অর্থ ব্যয় করতে হয়। অতীতে বহু অপরাধের বিচার হয়নি; প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে এবং অপরাধীরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ব্যবহার করে অথবা আইন ও পুলিশি ব্যবস্থার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিচার কার্যক্রম প্রভাবিত বা অসম্পূর্ণ করে তোলে। অনেক সময় পুলিশের গাফিলতি ও প্রশাসনিক দুর্নীতির কারণে অনেক অপরাধী বিচারের আওতার বাইরে থেকে যায়, যা জনগণের আইনের প্রতি আস্থা হ্রাস করে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত অভিযোগকারীরা ন্যায়বিচার পান না। বরং মিথ্যা অভিযোগকারীরা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে সক্ষম হয়। আমরা দেখেছি, পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে জনগণ গণপিটুনির মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করছে। এটি মূলত সমাজে ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া ও প্রশাসনের প্রতি মানুষের ক্ষোভের ইঙ্গিত দেয়। 

সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। তারা মনে করে, প্রশাসন বা পুলিশ তাদের কাজ সঠিকভাবে করছে না। ফলে তারা নিজেদের উদ্যোগে শাস্তি দিয়ে প্রশাসনকে শেখাতে চায়– কীভাবে ন্যায়বিচার করতে হয়। প্রশাসনকে বিচার শেখানোর উদ্দেশ্যে এটি করা হলেও যদি বারবার তা ঘটতে থাকে, তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। এভাবে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা কোনোভাবেই আইনি বা ন্যায্য পদ্ধতির অংশ নয়।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যখন জনগণ ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

একটি সুস্থ সমাজ গঠনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন অপরিহার্য। জনগণের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা রোধ এবং মিথ্যা অভিযোগকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সহজ হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে দেশ আরও নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক হবে। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো এবং বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করার মধ্য দিয়েই একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

উছমান গনি: শিক্ষক
    usmgoni@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে  
  • আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
  • ভোলাগঞ্জে বিজিবির সদস্যদের ওপর চড়াও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীরা
  • অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ মাসে আড়াই হাজার গ্রেপ্তার
  • উদ্ধারপ্রক্রিয়ায় এলাকাবাসীকে যুক্ত করুন
  • আইনের হাত বনাম নিজের হাত  
  • জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার চিন্তা ইসির