কুবির ৪ ছাত্রীর বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ
Published: 25th, February 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সুনীতি শান্তি হলের চার আবাসিক নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সুনীতি শান্তি হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগপত্রে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হলে কিছু শিক্ষার্থী ২১৪ নম্বর কক্ষ দখল করে সেখানে মাদক সেবন করছেন। ওই কক্ষে (২১৪ নম্বর) কারো সিট বরাদ্দ হলে তারা হুমকি দিয়ে বের করে দেন এবং হলের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করেন।
অভিযোগপত্রে আরো বলেন, মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীদের হল থেকে বহিষ্কার, জড়িতদের ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ, হলের নিরাপত্তা জোরদার ও বহিরাগত প্রবেশে বিধি-নিষেধ আরোপ এবং মাদক ও অপরাধ প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে ক্যাম্পেইন ও কাউন্সেলিংয়ের দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগপত্রে মাদক সেবনে অভিযুক্ত ছাত্রীদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের সবাই ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ও সুনীতি শান্তি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
তারা হলেন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের রাবিনা ঐশি (২১৪ নম্বর কক্ষ), একই বিভাগের লাবিবা ইসলাম (২১৩ নম্বর কক্ষ), ফার্মেসী বিভাগের আতিফা লিয়া (৩২৩ নম্বর কক্ষ) এবং আইন বিভাগের মাইশা রহমান রোদিতা (২১৭ নম্বর কক্ষ)।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সুনীতি শান্তি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাদিয়া ফেরদৌস বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি, ২১৪ নম্বর রুমে মাদকের আসর বসে। এর আগেও কয়েকবার প্রাধ্যক্ষ ম্যামকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। আজকে হলের শিক্ষার্থীরা মিলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, “২১৪ নম্বর কক্ষে প্রতিনিয়ত মাদকের আসর বসে। গতকালও (সোমবার) বসেছে। গন্ধে সারা হলে টেকা যায় না, আমরা অতিষ্ঠ। হল প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আতিফা লিয়া বলেন, “আমি তো ২১৪ নম্বর রুমে থাকি না। আমার রুম নম্বর ৩২৩ ৷ ওই রুমে আমার ফ্রেন্ড থাকে, মাঝেমধ্যে যাওয়া হয়। আমি এগুলো করেছি বা করি, ওদের কাছে অ্যাভিডেন্স কী? যা অভিযোগ আনা হয়েছে, তা হল প্রশাসন দেখবেন। দরকার হলে আমি রুম খুলে দেব। হল প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে, হল প্রশাসন দেখবে। এখানে আমার কিছু বলার নেই।”
অভিযুক্ত মাইশা রহমান রোদিতা বলেন, “ওই রুমে আমার ফ্রেন্ড থাকে। এছাড়া, আমার ফ্রেন্ডের সঙ্গে ঝামেলা হওয়ায় কয়েকদিন আমি যায়নি ওই রুমে। তবে গতকাল (সোমবার) তার বার্থডে থাকায় গিয়েছিলাম। কিন্তু এমন কিছু তো হয়নি।”
অভিযুক্ত লাবিবা ইসলাম বলেন, “যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তার কি কোনো প্রমাণ আছে কারো কাছে? কেউ দেখেছে? আমাকে শুধু শুধু হয়রানি করা হচ্ছে। আমি আগে ছাত্রলীগ করতাম। বিবেকের তাড়নায় আমি আন্দোলনও করেছি। এখন আমার পড়াশোনার শেষ দিকে এসে হয়রানি এবং হল থেকে বের করার জন্য এ অভিযোগ সাজানো হয়েছে।”
তবে অভিযুক্ত রাবিনা ঐশিকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সুনীতি শান্তি হলের প্রাধ্যক্ষ ড.
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে ‘আমরা জমিদার’ বলা সেই কর্মকর্তার পদোন্নতির আবেদন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ২০০৬ সালের জুলাইয়ে। তখন পদ ছিল নিম্নমান সহকারী, অর্থাৎ তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। এরপর পদোন্নতি পেয়ে ২০২২ সালে হন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। এখন সহকারী রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি পেতে আবেদন করেছেন তিনি।
পদোন্নতির জন্য আবেদন করা ওই ব্যক্তির নাম সিরাজুল ইসলাম। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন তিনি। সিরাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ আংশিক) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পর তাঁর মনোনয়ন বাতিল করে জামায়াত।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সিরাজুল ইসলাম হাটহাজারী উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার শুরা সদস্য। তিনি ১৯৯৪ সালে ডিপ্লোমা, ১৯৯৬ সালে স্নাতক (বিএ) আর ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর (এমএ) পাস করেন। তবে তিনি নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম নামে পরিচয় দিতেন। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচির প্রচারপত্রেও তিনি এ নাম লিখতেন। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর পদোন্নতির সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারের পর তিনি সেকশন অফিসার (নবম গ্রেড) পদ থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার (ষষ্ঠ গ্রেড) পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। তবে এ পদোন্নতির বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত হবে।
অবশ্য শুধু সিরাজুল ইসলাম নয়। তাঁর মতো আরও অন্তত ৫০ জন পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাক পেয়েছেন। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পদোন্নতিতে বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার বলে অভিযোগ তাঁদের। এসব পদের মধ্যে রয়েছে নিম্নমান সহকারী থেকে উচ্চমান সহাকরী, উচ্চমান সহকারী থেকে সেকশন অফিসার ও সহকারী রেজিস্ট্রার থেকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার। যদিও সিরাজুল ইসলাম ২০১০, ২০১৩ ও ২০২২ সালে মোট তিনবার পদোন্নতি পেয়েছেন।
এর আগে চলতি বছরের ৩০ ও ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য, তৎকালীন প্রক্টরসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এ সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের মতবিনিময় সভা হয়। এ সভায় সিরাজুল ইসলামের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মালিক। আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এটা আমরা মেনে নেব না।’
সিরাজুল ইসলামের এ বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হন। ওই দিন রাতেই গোলচত্বর, ছাত্রদের আবাসিক এ এফ রহমান হল ও শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের সামনে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ প্রতিক্রিয়ার পর তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে জামায়াতে ইসলামী। পাশাপাশি তাঁকে উপজেলা আমিরের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাঁকে শোকজ করে।
নথিপত্রে দেখা যায়, চলতি বছর ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬৪তম সিন্ডিকেট সভায় বৈষম্যর শিকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করতে কমিটি হয়। এ কমিটি ৫ নভেম্বর উপাচার্যের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সভায় কে কে পদোন্নতি পেতে পারেন, তা চূড়ান্ত করে। মূলত তাঁদের পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়েছে। আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার এ সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা ছিল। তবে সাক্ষাৎকারের তারিখ পিছিয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার করা হয়।
জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি পদোন্নতিতে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। পাঁচবার সাক্ষাৎকার দিয়ে ষষ্ঠবারে তিনি পদোন্নতি পেয়েছিলেন। এ কারণে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতির আবেদন করেছেন। নিয়ম মেনেই তিনি সাক্ষাৎকার দেবেন। তিনি সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শোকজের জবাব দিয়েছেন। তাঁর দল থেকেও ওই ঘটনার পর তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন‘আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর হস্তক্ষেপ মেনে নেব না,’ বললেন জামায়াত নেতা০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫যা বলছে প্রশাসনপদোন্নতির নথিতে দেখা যায়, সেকশন অফিসার থেকে সহকারী রেজিস্ট্রারে পদোন্নতিতে সিরাজুল ইসলামসহ চারজনের নাম রয়েছে। তাঁদের সাক্ষাৎকার নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মু. জাফর উল্লাহ তালুকদার।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় সিরাজুল ইসলামের থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। তিনি সে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাকা মানেই পদোন্নতি দেওয়া নয়। পদোন্নতির বিষয়ে কোনো তদবিরও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারও তদবিরের তোয়াক্কা করে না।