সারা দেশে খুন, হত্যা, ধর্ষণ ও আওয়ামী লীগের বিচার কার্যকর এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগের দাবিতে চট্টগ্রামে গণ–অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ‘অ্যান্টি রেপ ইউনিটি, চট্টগ্রাম’–এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় জামালখান রোডের একাংশ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।

সন্ধ্যা সাড়ে আটটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনশন চলছিল। সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার ছড়িয়ে সড়কের ওপর বসে আছেন কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী। তাঁদের সঙ্গে পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন আরও ১০ জন শিক্ষার্থী। এ সময় তাঁরা ধর্ষণের প্রতিবাদে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। এ ছাড়া নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

এতে বক্তব্য দেন অ্যান্টি রেপ ইউনিটির প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসতিয়াক, নাহিয়ান আবরার, মোহাম্মদ ইমদাদুল হক, তানিয়া আক্তার, সাইফুল ইসলাম, শরাফত হোসেন চৌধুরী, প্রত্যয় বড়ুয়া, রাকিব আল ইসলাম ও আহসানুল হক চৌধুরী। এ ছাড়া বক্তব্য দেন সাকিরা ইসলাম, জান্নাতুল মাওয়াসহ অন্য নারী শিক্ষার্থীরা।

বক্তারা বলেন, দেশে অপরাধ বেড়েছে। বিশেষ করে নারীদের নিরাপত্তাঝুঁকি বেড়েছে। অথচ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। সন্তোষজনক হলে কেন নারীরা ঘর থেকে বের হতে নিরাপদ বোধ করছেন না? কেন তাঁদের পরিবার আতঙ্কে?’

বক্তারা আরও বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দায়ী। সড়কে যে ভোগান্তি হচ্ছে, সেটির জন্যও তিনি দায়ী। তাঁকে ব্যর্থতায় দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে। পরে কর্মসূচি থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা দেন নেতারা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির ফলে জামালখানসহ আশপাশের সড়কে যানজট দেখা গেছে। সন্ধ্যায় অফিস ছুটি হওয়ার যানজট তীব্র হয়। ফলে নগরের বাকি এলাকাগুলোতেও এর প্রভাব পড়ে। তবে বিকল্প সড়ক থাকায় যানজট তীব্র হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দুই বোনের ‘বটতলা’

সিরাজগঞ্জের বেতকান্দি গ্রামের দুই বোনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আর জীবনসংগ্রাম এক জায়গায় এসে মিলিত হয়েছে। তার নাম ‘বটতলা’। এটি ঠিক পারিবারিক উদ্যোগ নয়। বলা যেতে পারে বটতলা মাহমুদা রশীদ লতা ও মারিয়াম রশীদ ছন্দা– দুই বোনের সংগ্রামের ফল। বড় বোন লতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে প্রায় ১০ বছর চাকরি করেছেন একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে। ছোট বোন ছন্দার পড়াশোনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম থেকেই তিনি নিজে কিছু করতে চেয়েছেন। করোনাকালে দুই বোনের চিন্তা এক হয়ে বটতলায় রূপ নেয়।
কাগজে-কলমে চার বছর হলেও বটতলার নিয়মিত কাজের বয়স তিন। ছন্দা তখন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী, আর লতা চাকরি করতেন। এর মাঝে কাজ চলত। দুই বছর ধরে দুই বোন সার্বক্ষণিক সময় দিচ্ছেন।
গ্রামীণ ঐতিহ্যকে শহরের যান্ত্রিকতায় হাঁপিয়ে ওঠা মানুষদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বাসনা থেকেই ‘বটতলা ফ্যাশন’-এর যাত্রা শুরু বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কর্ণধার ছন্দা। তিনি বলেন, ‘যেহেতু গ্রামীণ হাটগুলো বসত বটগাছের নিচে, ওটা ছিল আমাদের কাছে শুদ্ধতার প্রতীক। তাই আমাদের নাম বটতলা। করোনার লকডাউনে ভাইবোনদের আড্ডা থেকে এই নামটা উঠে এসেছে। নামটি আমার প্রয়াত ভাই মুত্তালিব রিপনের দেওয়া।’
লতা বলেন, ‘১০ বছর চাকরি করার পর এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চেয়েছি। তার প্রথম কারণ ছিল, আমি যেহেতু সিঙ্গেল মাদার, তাই আমার সন্তানকে যেন আমার মতো করে সময় ও সাপোর্ট দিতে পারি। তা ছাড়া মনে হয়েছে চাকরি করে আমি কখনও অন্যদের ভরসার জায়গা হতে পারব না বা আর্থিক সহযোগিতা করা সম্ভব না, একটা বিজনেস দাঁড় করালে যেটি সম্ভব। আমার মতো বহু নারী আমাদের দেশে আছে, যারা শ্বশুরবাড়ি বা স্বামীর অত্যাচার সহ্য করে শুধু আর্থিক ব্যাকআপ না থাকার জন্য। আমি যা পেরেছি তা অন্যদের জন্য করতে চাই।’
ছন্দা জানান, ‘বটতলা ফ্যাশনের শুরুটা পারিবারিক আড্ডায় শুধু দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষার মিছিলে শামিল হওয়ার জন্য হলেও পরে এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চেয়েছি। এর পেছনে দুটো কারণ ছিল– প্রথমত, পার্টটাইম কিছু চাকরির অভিজ্ঞতার পর মনে হলো, আমার স্বাধীন পেশা দরকার এবং যেহেতু আমি নারী, ভবিষ্যতে সন্তানদের পরিপূর্ণ সময় দিতে হলেও ব্যবসাকে উপযুক্ত পেশা মনে হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মানুষকে সাহায্য করা, মানুষের পাশে থাকার ইচ্ছা আমার তীব্র। ব্যবসার মাধ্যমে অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। এখনও আমাদের প্রতিষ্ঠান অনেক ছোট, কিন্তু ইতোমধ্যে বেশ কিছু লোক আমাদের ওপর নির্ভরশীল।’
বটতলার শুরুটা ২০-৩০ হাজার টাকা নিয়ে। সেখান থেকে এখন মাসে ২ লাখ টাকার মতো আয় হয়। এর সিংহভাগই পুনরায় বিনিয়োগ করা হয় বলে জানান ছন্দা। এখনও তারা কোনো বেতন নেন না। ভবিষ্যতে সেই সক্ষমতা অর্জন করতে চান তারা। ছন্দা বলেন, ‘আমরা সবসময়ই ক্রেতার ভালোবাসা পেয়ে এসেছি। আমাদের রিপিট কাস্টমার প্রচুর। সঠিকভাবে মার্কেটিং করতে পারিনি, তবুও প্রায় ৫০ হাজার পরিবার আমাদের স্মরণে রেখেছে।’
এখন বটতলায় মেয়েদের শাড়ি, ব্লাউজ, থ্রিপিস, টুপিস, কুর্তি, টপস, স্কার্ট, ওড়না; ছেলেদের শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া; শিশুদের ফ্রক, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস, ফতুয়া, পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। বটতলায় হাতের কাজকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। বেশির ভাগ শাড়ি, জামায় হাতের কাজের নকশা, প্যাচওয়ার্ক, ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট, মোমডাই, টাইডাই, ডিজিটাল প্রিন্টের কাজ রয়েছে। এ ছাড়া হাতে তৈরি গহনা পাওয়া যাবে ঈদের পর থেকে।
ছন্দা বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা শুধু পোশাক নিয়ে কাজ করলেও অদূর ভবিষ্যতে আমাদের গ্রাম সলপের ঘোল, ঘি, দুধ, গুড়, সরিষার তেল নিয়ে কাজ করব। আমাদের আবাদি জমি আছে। সেখান থেকে উৎপাদিত নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করব।’
এখন সাভারে একটি আউটলেট আছে বটতলার। ব্যবসা বড় করতে চান দুই বোন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে লতা বলেন, ‘বড় একটি অফিস, যেখানে ৫০ থেকে ১০০ জনকে বেতন দেওয়ার সক্ষমতা থাকবে। এরপর ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে আউটলেট দেব। খাবার নিয়ে কাজ করব, দেশের বাইরেও বাংলাদেশের পণ্য তুলে ধরতে চাই। স্বপ্ন অনেক বড়। সে পথে ছোট ছোট পা ফেলছি শুধু।’ v

সম্পর্কিত নিবন্ধ