৯ মন্ত্রণালয়-বিভাগে নতুন সচিব, দু’জনের দপ্তর বদল
Published: 25th, February 2025 GMT
সরকারের ৯ মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে নতুন সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন সচিব নতুন দপ্তর পেয়েছেন। বাকি ৭ জন অতিরিক্ত সচিব থেকে পদোন্নতি পেয়ে সচিব হয়েছেন। মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আলেয়া আক্তার পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব হয়েছেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো.
দুজন সচিবের দপ্তর বদল: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খানকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে সদস্য করে। আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সচিব) মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে। এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, দু-এক দিনের মধ্যে নয়জনকে সচিব পদে শূন্য থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পদায়ন করা হবে।
ওই দিন তিনি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, চারটি সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সভায় সচিব পদের জন্য ১২ জনকে নির্বাচন করা হয়েছে। তাঁরা অধিকাংশই যোগ্য ও বঞ্চিত। তাঁদের মধ্যে কেউ চুক্তিতে নন। চাকরিতে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্য থেকেই সচিব করা হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
সুরক্ষা নিশ্চিত করুন
বিশ্বের অন্যতম এবং দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, বাংলাদেশের সর্বাধিক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ লইয়া উদ্বেগ দীর্ঘদিন যাবৎ জনমনে বিরাজমান। একদিকে এই জেলার নদী-খাল-জলাশয়, তৎসহিত পর্বত ও বন দখল-দূষণে বিপর্যস্ত। এমনকি সমুদ্রও রক্ষা পাইতেছে না; অন্যদিকে আইনের তোয়াক্কা না করিয়া বিশেষত সমুদ্রের তীর ঘেঁষিয়া যথেচ্ছভাবে হোটেল-মোটেলসহ ক্ষুদ্র-বৃহৎ স্থাপনা গড়িয়া উঠিয়াছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে মারমেইড বিচ রিসোর্ট এমনই এক স্থাপনা। ইহাকে ‘ইকো রিসোর্ট’ বা ‘পরিবেশবান্ধব’ দাবি করা হইলেও খাল ও সরকারি জমি দখল এবং বৃক্ষ কর্তন করিয়া ইহা নির্মিত হইতেছে। বাঁকখালী নদীতে পরিবেশ অধিদপ্তর সৃজিত বন ধ্বংস করিয়াও স্থাপনা নির্মাণ করা হইয়াছে। প্রশাসনের নাসিকার অগ্রভাগে এই প্রকার পরিবেশ-বিধ্বংসী তৎপরতা দুর্ভাগ্যজনক।
প্রতিবেদনের সহিত প্রকাশিত আলোকচিত্রেও স্পষ্ট দৃশ্যমান, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকায় নদী ও বালিয়াড়ি দখল করিয়া রিসোর্টটি নির্মাণ করা হইতেছে। প্যাঁচার দ্বীপ এলাকাটি লাল কাঁকড়ার বিচরণক্ষেত্র এবং কচ্ছপের ডিম পাড়িবার আবাসস্থল হইবার কারণে উচ্চ শব্দ ও আলোকায়ন তথায় নিষিদ্ধ। বাস্তবে প্রায় প্রতি রাত্রিতেই উক্ত এলাকায় অনুরূপ বিবিধ অনুষ্ঠান হইতেছে। যাহার কারণে কচ্ছপের পদক্ষেপ এখন আর তথায় দৃশ্যমান নয়। হারাইয়া গিয়াছে লাল কাঁকড়াও। যাহা বিস্ময়কর, সরকারি ভূমি দখল করিয়া নির্মিত মারমেইড বিচ রিসোর্টের স্থাপনাসমূহ এক সপ্তাহের মধ্যে অপসারণে পরিবেশ অধিদপ্তর নোটিশ দিবার পর দুই সপ্তাহের অধিক সময় অতিক্রান্ত হইলেও পরিস্থিতির কোনো ইতরবিশেষ ঘটে নাই।
আমরা জানি, কক্সবাজারব্যাপী এই প্রকার পরিবেশ-বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চলমান। তথায় অবৈধভাবে বৃক্ষ নিধন এবং পাহাড় কর্তন হইতেছে। বালি উত্তোলনও থামিয়া নাই। পর্যটন নগরীর এহেন নাজুক পরিস্থিতি হতাশাজনক। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণেই কক্সবাজারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হইতে পর্যটকরা আগমন করেন। তাহাদের আতিথেয়তার সুব্যবস্থাপনা নিঃসন্দেহে জরুরি। কিন্তু পরিবেশ উপেক্ষা করিয়া উন্নয়ন চলিতে পারে না। কক্সবাজারে কোনো প্রকল্প, শিল্পপ্রতিষ্ঠান কিংবা হোটেল-মোটেল স্থাপনের জন্য নূতন করিয়া বৃক্ষ কর্তনের অনুমতি দেওয়া যাইবে না। তথায় পর্বতের সুরক্ষাও জরুরি। কারণ ইতোমধ্যে বৃক্ষ ও পর্বত নিধন করিয়া পরিবেশের যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করা হইয়াছে। নূতন করিয়া পরিবেশ-বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চলিতে দেওয়া যাইবে না।
স্মর্তব্য, ২০২৩ সালের ১৮ মে সমকালের তরফ হইতে ‘বিপর্যস্ত কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশ: করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হইয়াছিল। তথায় বক্তারা কক্সবাজারের পরিবেশের জন্য জরুরি কিছু পরামর্শ দিয়াছিলেন। উক্ত সুপারিশমালা আমলে লইলেও পরিস্থিতির উন্নতি হইত বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। কিন্তু তৎকালীন সরকার উহাতে কর্ণপাত করে নাই। অবশ্য উহার কারণও অজ্ঞাত নহে। বিশেষত অতীতের সকল সরকারের সময় দেখা গিয়াছে, পরিবেশ ধ্বংসের হোতারা সাধারণত ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদপুষ্ট। বিগত সরকারও এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল না। তবে বর্তমানে যেহেতু শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনের ফলস্বরূপ নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাসীন, সেহেতু পরিবেশ ধ্বংসকারীদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাইবার অবকাশ নাই। তাই পরিবেশ অধিদপ্তর স্বীয় দায়িত্ব পালনে দ্রুত তৎপর হইবে– এই প্রত্যাশা করাই যায়। আমরা মনে করি, কেবল প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতের অবৈধ মারমেইড বিচ রিসোর্ট নহে, কক্সবাজারের পরিবেশ-বিধ্বংসী সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। নামকাওয়াস্তে নহে, এহেন বেআইনি স্থাপনার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাইতে হইবে। নচেৎ জাতীয় অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ শহরটিকে রক্ষা করা কঠিন হইবে। এই লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ হইতে কোনো হটলাইন চালু করা যায় কিনা, যথায় পর্বত কর্তন, নদী দখল কিংবা অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করিলে দ্রুততার সহিত তথ্য দেওয়া যাইবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগও জরুরি।