বিএনপি ১৭ বছর ধরে একটি নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছে উল্লেখ করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘এ (নির্বাচনের) দাবি নতুন কিছু না। ইতিবাচক কথা ডিসেম্বরের মধ্যে নাকি নির্বাচন। এটা সত্য মিথ্যা জানি না। তবে এই নির্বাচন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নাকি জাতীয় সরকার নির্বাচন হবে—এটা একটা বিরাট প্রশ্ন। আমরা কি ১৭ বছর ধরে আন্দোলন করছি স্থানীয় নির্বাচনের জন্য? না, আমরা আন্দোলন করছি জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটা পার্লামেন্ট সরকারের জন্য।’

আজ মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুর জেলা শহরের রাজবাড়ি মাঠে আয়োজিত এক সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ কথা বলেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো, দ্রুত নির্বাচনী রূপরেখা ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সমাবেশের আয়োজন করে গাজীপুর জেলা বিএনপি।

নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করতে হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘নির্বাচন আমাদের আদায় করতে হবে, নাকি যাঁরা আছেন, তাঁরা স্বেচ্ছায় সুন্দরমতো একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন—এই বিষয়টি জনগণ এখনো অনুমান করতে পারছে না। আমরাও অনুমান করতে পারছি না।’

সংস্কারের জন্য কত সময় লাগবে—অন্তর্বর্তী সরকারকে তা জানানোর আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের কথা শুনি না। আমরা সকাল-বিকেল সংস্কারের কথা শুনি। সারা দিন সংস্কারের জারি গান কেন, এই জারি গান শোনার দরকার নেই। আপনারা একটা ভোট দেবেন, ভোট হওয়ার জন্য কতটুকু সময় দরকার আমরা জানি। সুতরাং সংস্কার করতে কত সময় লাগবে, ওই সময়টা বলে দেন। আমার মনে হয় আপনাদের অনন্তকাল লাগবে। তার মানে সারা জীবন দরকার এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, কিন্তু জনগণ বলে এই মুহূর্তে দরকার নির্বাচিত সরকার। সরকারের কাছে অনুরোধ করে বলব, আপনারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাইরে পথ চললে হোঁচট খেতে পারেন। ধাক্কা দিলেও খেতে পারেন, না দিলেও খেতে পারেন।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট ছাত্রদের আন্দোলনে প্রথম থেকেই আমরা তাদের নৈতিক সাপোর্ট দিয়েছি। তারপর দিয়েছি সর্বোত্তম সমর্থন। এরপর ছদ্মবেশে ঢুকে গেছি সেই আন্দোলনে। আমরা খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, বিএনপির নাম নিয়ে আন্দোলন করিনি, আমরা ছদ্মবেশে ছাত্রদের হয়ে কাজ করেছি।’

নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণের কাছে কেউ দায়বদ্ধ থাকে না উল্লেখ করে গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধতায় না। ড.

ইউনুস সাহেব বলেছেন ছাত্ররা তাঁকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, তাই উনি এখন ব্যস্ত ছাত্রদের নিয়ে। জনগণ জাহান্নামে যাক, চালের দাম কত বাড়ল, বিদ্যুতের দাম বাড়ল কি দ্বিগুণ হলো, এগুলো তাঁর দেখার বিষয় না, দায়বদ্ধতা নেই। তাঁর দায়বদ্ধতা ছাত্রদের নিয়ে এ জন্য ডানে-বাঁয়ে তিনজন ছাত্রদের প্রতিনিধি বসিয়ে নিছে। তারা সারা রাত বইসা দল বানায়।’

শুক্রবার নতুন দলের ঘোষণার কথা শুনেছেন উল্লেখ করে গয়েশ্বর রায় আরও বলেন, ‘আপনার সরকারে মন্ত্রিসভায় যাঁরা আছে, তাঁদের নামিয়ে দেন। গাছের আগারটাও খাবেন, তলেরটাও খাবেন, তা হবে না। একটা খাইতে হবে। হয় রাজনৈতিক দল করে মাঠে নামেন, না হলে সরকারে বসে খাচ্ছেন খান চুপ করে।’

গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব চৌধুরী ইশরাক আহাম্মেদ সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কালিয়াকৈর পৌরসভার সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক হুমায়ুন কবীর খান, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নান প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র য় বল ন দ য়বদ ধ ব এনপ র জনগণ র সরক র দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠিতে যা বলল বিএনপি

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া ‘দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দ্রুত করণীয় কিছু বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ’ শীর্ষক চিঠিতে বিএনপি শুরুতেই উল্লেখ করেছে, ‘বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন, সামরিক স্বৈরশাসনের অবসানে ৯০’র ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরে প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের অবিরাম লড়াইয়ের শেষ পর্যায়ে ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভূতপূর্ব ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে। শাসকদের প্রধানসহ তার অসংখ্য সহযোগী পালিয়ে জীবন রক্ষা করেছে; আর অবশিষ্টরা হয় বন্দি হয়েছে, কিংবা আত্মগোপন করেছে।’

বুধবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা এই চিঠি অধ্যাপক ইউনূসকে দেওয়া হয়। এদিন দুপুর ১২টার পর যমুনায় বৈঠক শুরু হয়।

চিঠিতে বলা হয়, ‘উল্লিখিত লড়াইয়ে প্রতিটি পর্যায়ে অসংখ্য আন্দোলনকামী মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছে। শুধু বিগত ১৬ বছরের লড়াইয়ে ১৭শ’র বেশি বিরোধী নেতাকর্মী গুম হয়েছেন, সহস্রাধিক খুন হয়েছেন এবং ৬০ লাখেরও বেশি নেতাকর্মী আহত, পঙ্গু এবং গায়েবি মামলায় কারারুদ্ধ ও সীমাহীন হয়রানির শিকার হয়েছেন।’

‘একমাত্র ২০২৪-এর জুলাই আগস্টের যুগান্তকারী গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বের সামনে থাকা দুই সহস্রাধিক তরুণ ও ছাত্র-ছাত্রী, শ্রমিক এবং নারী ও শিশুসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও রাজনৈতিক কর্মী জীবন উৎসর্গ করেছেন, আহত ও পঙ্গু হয়েছেন আরও কয়েক হাজার নারী পুরুষ-শিশু। ফ্যাসিবাদের পতন এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এমন ধারাবাহিক লড়াই যেকোনও জাতির জন্য অসীম আত্মত্যাগ ও সাহসী লড়াইয়ের এক গৌরবজনক ইতিহাস।’

মঙ্গলবার  বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই চিঠি সদস্যরা পর্যালোচনা করেন।

বিএনপি উল্লেখ করেছে, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্র ও মানবিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিটি লড়াইয়ের নেতৃত্বদানকারী কিংবা গর্বিত সক্রিয় অংশীদার হিসেবে বিএনপি তার অবস্থান থেকে প্রতিটি লড়াইয়ের সুফল জনগণের জন্য কার্যকর করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে এবং করছে।’

‘সেই লক্ষ্যেই এবারও জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের সুফল জনগণের কল্যাণে এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে নিবেদিত করার টেকসই ক্ষেত্র প্রস্তুতের লক্ষ্যে দেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপরিচালনার ভার নিজ যোগ্যতায় দেশ-বিদেশে বরেণ্য, নিষ্ঠাবান, দলনিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে আপনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠায় আমরা সমর্থন জানিয়েছি এবং দায়িত্ব পালনে আপনাকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।’

‘আপনার ও আপনার নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রায় দেড়যুগ ধরে গণতান্ত্রিক অধিকারহীন জনগণের স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল—যত দ্রুত সম্ভব ফ্যাসিবাদী দল, তাদের দলীয় সরকার ও তার দোসরদের আইনের আওতায় এনে তাদের গণবিরোধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, দুর্নীতি-অনাচারের মাধ্যমে দেশের সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের বিচার ও পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের, ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতে নিহত ও আহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পতিত সরকারের সব অপচক্র ও সিন্ডিকেট ধ্বংস করার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া, যাতে তারা সম্মিলিতভাবে দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি, উন্নত অর্থনীতি এবং জনগণের মানবিক অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারে।’

‘আমরা জানি যে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের সংবিধান, আইন, বিধি, প্রতিষ্ঠান এমনকি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের এমনভাবে কলুষিত করেছে যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অনেক বিষয়েই পরিবর্তন ও সংস্কার সাধন অনিবার্য। এ ব্যাপারে আপনাদের সরকারের উদ্যোগের প্রতি আমরা সমর্থন জানিয়েছি-সহযোগিতা করছি।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বিএনপি মনে করে যে জনগণের স্বার্থরক্ষা ও স্থায়ী কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য গণতান্ত্রিক শাসনের বিকল্প নেই। আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংস্কার একটি সদা চলমান অনিবার্য প্রক্রিয়া।’

‘বিগত ফ্যাসিবাদী পতিত সরকারের মতো “আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র” যেমন জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের অপকৌশল ছিল, এখনও কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর “আগে সংস্কার পরে গণতন্ত্র” তেমনই ভ্রান্ত কূটতর্ক। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার মাধ্যমেই সবার জন্য উন্নয়ন সম্ভব এবং এ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইন, নীতি, বিধানের সংস্কার অপরিহার্য। এর সবগুলো পরস্পরের পরিপূরক, কোনোটাই কোনোটার বিকল্প নয়; পরস্পর সাংঘর্ষিকও নয়।’

চিঠিতে বলা হয়, ‘এ দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির ইতিহাসে প্রায় সবগুলো যুগান্তকারী সংস্কার কিংবা ইতিবাচক পরিবর্তন বিএনপির হাত ধরেই এসেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন, উপবৃত্তি চালুসহ নারী ও  কারিগরি শিক্ষা, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান, মুক্তবাজার অর্থনীতি, কৃষি উন্নয়ন, চিকিৎসাসেবা, পল্লি বিদ্যুতায়ন, অপ্রচলিত পণ্য রফতানি, সমুদ্র মৎস্য শিকার থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল-নদী খনন, গ্রাম সরকার, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, সমবায়, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিকাশ এমন হাজারো দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যায়।’

‘যখন এ দেশের কোনো রাজনৈতিক দল সংস্কারের বিষয়ে কোনও কথা বলেনি, তখনও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচি, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে ২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর এবং ১০ মে ২০১৭ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা এবং আন্দোলনরত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে ১৩ জুলাই ২০২৩ তারিখে ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা উল্লেখযোগ্য।’

‘আজ যারা সংস্কারের কথা বেশি বেশি বলে এবং বিএনপিকে সংস্কারের বিপক্ষের শক্তি বলে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা করছে—তাদের ভিশন-২০৩০ এবং রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচিতে যেসব সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে ও যেসব পরিবর্তনের আকাঙ্খা ব্যক্ত করা হয়েছে, তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

‘৩১ দফায় বিএনপি বলেছে—এসব প্রস্তাবের চেয়ে ভালো কোনও প্রস্তাব কেউ দিলে জনস্বার্থে তা সাদরে গ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ সংস্কারের চলমান প্রক্রিয়া বিএনপির ঘোষণারই অংশ। বিএনপি মনে করে যে সব পরিবর্তনই সংস্কার নয়। সংস্কারের উদ্দেশ্য ইতিবাচক ও গঠনমূলক পরিবর্তন। এ ব্যাপারে বিএনপি সব প্রস্তাব নিয়েই যুক্তিগ্রাহ্য আলোচনাকে স্বাগত জানায়।’

‘কিন্তু দল কিংবা গোষ্ঠীস্বার্থে এবং রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে হেয় ও অপ্রাসঙ্গিক করার অপচেষ্টায় অযথা সময়ক্ষেপণ করে জনগণকে তাদের ভোটাধিকার তথা রাষ্ট্রের মালিকানা প্রতিষ্ঠার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার কৌশলকে বিএনপি সমর্থন করে না। দেশ ও জনগণের স্বার্থে জনগণের সম্মতি নিয়ে ৩১ দফায় বর্ণিত এবং ঐকমত্যে গৃহীত সব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনপি সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করে।’

‘ইতোপূর্বে গত ২১ নভেম্বর ২০২৪ এবং ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ আমরা আপনাকে লিখিতভাবে আমাদের কিছু উদ্বেগের কথা এবং কিছু পরামর্শ জানিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যক্রমে সেসব বিষয়ে আপনাদের অবস্থান আমরা জানতে পারিনি, কিংবা এসব বিষয়ে কোনও আলোচনাও হয়নি।’

‘উল্লেখ্য যে ফ্যাসিস্ট সরকারের দ্বারা বৈষম্যের শিকার ও পদোন্নতি বঞ্চিত প্রশাসন ক্যাডারের ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে সচিবসহ বিভিন্ন পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হলেও তাদের একজনকেও এখনও পর্যন্ত পদায়ন না করে পতিত সরকারের অপশাসনের দোসর ও সুবিধাভোগীদের দিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনা করার ফলে সরকারের কার্যক্রম ও উন্নয়ন প্রয়াস ব্যাহত হচ্ছে। অন্যান্য ক্যাডারে বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি ও পদায়ন নিশ্চিত করা যৌক্তিক বিধায় তা দ্রুত সম্পন্ন করা জরুরি বলে আমরা মনে করি।’

চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি যে যেকোনও রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী ও তার সরকারের বক্তব্য ও মতামতে সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি এর কিছু ব্যতিক্রম আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। আমরা আপনাকে সমর্থন জানিয়েছি এবং আপনার ওপরই আস্থা রাখতে চাই। কিন্তু আপনার সরকারের কিছু ব্যক্তি এবং আপনাকে সমর্থনকারী বলে দাবিদার কিছু ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রকাশ্য বক্তব্য ও অবস্থান জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। আশা করি আপনি এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’

বিএনপি বলে, ‘আমরা আগেও বলেছি এবং এখনও বলতে চাই যে দেশের জনগণকে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার যে মহান দায়িত্ব আপনার ওপর অর্পিত হয়েছে—যত দ্রুত সম্ভব আপনি তা পালন করবেন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যেসব আইন, বিধি, বিধান সংস্কারে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব পরিবর্তন জরুরি, তা সম্পন্ন করার মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব বলে আমরা মনে করি।’

‘এ ব্যাপারে ইতোপূর্বে আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রদত্ত আপনারই আশ্বাস অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা এনআইডি প্রকল্প নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার এবং নির্বাচনি এলাকা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে আইনি জটিলতা দ্রুত নিরসনেরও প্রস্তাব করছি।’

‘একইসঙ্গে পতিত ফ্যাসিবাদী দল ও সেই দলীয় সরকারের সঙ্গে যারাই যুক্ত ছিল—তাদের বিচার দ্রুত করে রাজনীতির ময়দানকে জঞ্জালমুক্ত করার; জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিৎসা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার এবং দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার অধিকতর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে ১/১১-এর অবৈধ সরকার এবং পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে দায়ের করা সব মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি।’

‘আমরা আপনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সব ইতিবাচক কর্মপ্রয়াসে সমর্থন প্রদান অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ যথাশিগগির ঘোষণার মাধ্যমে জনমনে সৃষ্ট সব বিভ্রান্তি অবসানের আহ্বান জানাচ্ছি।’

চিঠিতে ‘আপনার আস্থাভাজন’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সই করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সয়াবিন তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি গণসংহতি আন্দোলনের
  • প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি বিএনপির, কী আছে বর্ণনায়
  • প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠিতে যা বলল বিএনপি
  • বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে দেশটির জনগণ: যুক্তরাষ্ট্র
  • গ্যাস-তেলের মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনের সংকট বাড়াবে: সিপিবি
  • জনগণ সব সময় ফিলিস্তিনের পাশে আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা আমি বলিনি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • মডেল মেঘনার সঙ্গে এই আইন প্রথম ব্যবহৃত হচ্ছে না: খোদা বখস চৌধুরী
  • মডেল মেঘনার সঙ্গে এ আইন প্রথম ব্যবহৃত হচ্ছে না: খোদা বখস চৌধুরী
  • মেঘনা আলমের সঙ্গে প্রথম এই আইন ব্যবহার হচ্ছে না: প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী