চ্যাটজিপিটি বনাম গ্রোক, কোন চ্যাটবট বেশি কার্যকর
Published: 25th, February 2025 GMT
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) জগতে প্রতিযোগিতা দিন দিন তীব্র হচ্ছে। তাই কিছুদিন পরপরই নিজেদের চ্যাটবটে নতুন প্রযুক্তি ও সুবিধা যুক্ত করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। চ্যাটবট নিয়ে চলা এই প্রতিযোগিতায় সম্প্রতি বেশ আলোড়ন তুলেছে ইলন মাস্কের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান এক্সএআইয়ের তৈরি গ্রোক চ্যাটবট।
দীর্ঘদিন ওপেনএআইয়ের তৈরি চ্যাটজিপিটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে সম্প্রতি রিয়েল টাইম তথ্য অনুসন্ধান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্লেষণের ক্ষমতা যুক্ত করায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে গ্রোক চ্যাটবট। চ্যাটজিপিটি ও গ্রোক চ্যাটবটের কাজের সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা দেখে নেওয়া যাক।
ব্যতিক্রমী উত্তরচ্যাটজিপিটিসহ বেশির ভাগ এআই চ্যাটবট নিরপেক্ষ ও সংযত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে গ্রোক চ্যাটবটের কাজের ধরন একটু আলাদা। নির্মাতারা চ্যাটবটটিকে এমনভাবে তৈরি করেছেন, যাতে এটি অনেক সময় প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে ব্যতিক্রমী উত্তর দেয়। কখনো রসিকতা করে, কখনো প্রচলিত চিন্তাধারাকে চ্যালেঞ্জ করে ব্যবহারকারীদের চমকে দেয়।
রসবোধচ্যাটজিপিটি চ্যাটবটের উত্তর সাধারণত তথ্যনির্ভর হয়ে থাকে; কিন্তু গ্রোক এ ক্ষেত্রে বেশ ব্যতিক্রম। এটি প্রশ্নের ভিত্তিতে তীক্ষ্ণ ও বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুক করতে পারে। এমনকি গ্রোকের একটি ‘ফান মোড’ রয়েছে, যা চালু করলে ব্যবহারকারীদের হাস্যরসাত্মক ও রসিকতাপূর্ণ উত্তর দিয়ে থাকে গ্রোক চ্যাটবট।
রিয়েল টাইম তথ্য অনুসন্ধানচ্যাটজিপিটির বেশির ভাগ সংস্করণ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করা তথ্যের ভিত্তিতে উত্তর দেয়; কিন্তু গ্রোক সরাসরি রিয়েল টাইম ওয়েব সার্চ করতে পারে। শুধু তা–ই নয়, এটি এক্সের (সাবেক টুইটার) নির্দিষ্ট প্রোফাইল, পোস্ট ও লিংকের তথ্য বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। ফলে ব্যবহারকারীরা যেকোনো সময় নির্দিষ্ট বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সর্বশেষ তথ্য জানতে পারেন, যা চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে জানা সম্ভব নয়।
জ্ঞানের পরিধিচ্যাটজিপিটির জ্ঞানের পরিধি নির্দিষ্ট। যার কারণে এটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ব্যবহারকারীদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে। তবে গ্রোক প্রতিনিয়ত নতুন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। তাই এটি বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, খেলাধুলা ও অন্যান্য সমসাময়িক বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানাতে পারে।
জটিল সমস্যার দ্রুত সমাধানসাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি তুলনামূলক দ্রুত হলেও, জটিল বিশ্লেষণমূলক সমস্যা বা গবেষণাধর্মী প্রশ্নের ক্ষেত্রে গ্রোক বেশি কার্যকর। গ্রোকের জটিল গাণিতিক বিশ্লেষণ ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে।
যে ক্ষেত্রে পিছিয়ে গ্রোকবেশ কিছু ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটির চেয়ে এগিয়ে থাকলেও গ্রোক চ্যাটবটের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো চ্যাটবটটি বেশি দিন আগের তথ্য নির্ভুলভাবে জানাতে পারে না। তাই ২০২৩ সালের আগের তথ্যের ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি তুলনামূলক নির্ভরযোগ্য। ফলে ইতিহাস, গবেষণা বা অতীতের তথ্য জানার ক্ষেত্রে গ্রোক চ্যাটবটের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে চ্যাটজিপিটি।
সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র ক চ য টবট র
এছাড়াও পড়ুন:
বোয়ালমারীর বালুমহালের ইজারা বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৩
ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ঘোষপুর ইউনিয়নের গড়াই নদীর লংকারচর বালুমহালের ইজারা বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছে। বুধবার রাতে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১০টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঁধারকোঠা গ্রামের একদল যুবক আক্রমণ চালায়। এ সময় মা ফার্মেসিতে আশ্রয় নেওয়া রাসেল আহমেদের ছোট ভাই ছাত্রদলের সাবেক নেতা রবিন মোল্যার মাথা লক্ষ্য করে আঘাত করে আক্রমণকারীরা। তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে আহত হন রিয়াজ মৃধা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। রিয়াজ মৃধাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও রবিন মোল্যা বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিএনপি নেতা মিরাজ মৃধা বলেন, রাসেলের সঙ্গে জুয়েল বিশ্বাসের দেনাপাওনা নিয়ে ফোনে কথা-কাটাকাটি হয়, পরে সমঝোতার জন্য আমার ফার্মেসিতে আসেন জুয়েল। কথা বলার সময় তার কোমরে একটি ধারাল অস্ত্র দেখে লোকজন তা কেড়ে নেয়। এ সময় তিনি পালিয়ে গিয়ে কিছু সময় পর ২৫ থেকে ৩০ জনকে নিয়ে আমার ফার্মেসিতে এসে হামলা চালায়।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯টি সিডিউল বিক্রি হলেও সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুলের সহায়তায় মাত্র একটি সিডিউল জমার মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বালুমহাল ইজারা পান বোয়ালমারী যুবলীগের সদস্য মেসার্স রবিউল ট্রেডার্সের মালিক রবিউল ইসলাম। এই বালুমহাল ইজারার ১৯ জন সিডিউল ক্রেতার সঙ্গে কৃষকদল সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুলের নেতৃত্বে ইজারা দরপত্র (নিকো) বোর্ড করে একটি সিডিউল জমার মাধ্যমে রবিউলকে কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়। বাকি ১৮ জন ঠিকাদারকে ৪৫ হাজার টাকা করে নিকোর টাকা নির্ধারণ করা হয়। দৈনিক সমকাল পত্রিকায় এ বিষয়ে ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বালুমহালের ইজারা পেলেন যুবলীগ নেতা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
৬ ফেব্রুয়ারি তিনটি বালুমহালের দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক। এগুলো বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গায়। লংকারচর মহালের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৪১৮ টাকা। ঘোষপুর ইউনিয়নে গড়াই নদীর এ মহালের আয়তন ৭৪ হাজার ১৪৭ একর। ৩৬ লাখ টাকা বেশি দিয়ে ইজারা নেন রবিউল।
স্থানীয় এক সিডিউল ক্রেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ও ডিসির কাছে দেওয়া অভিযোগকারী) জানান, ১৯টি দরপত্র বিক্রি হলেও ১৫ দরপত্র দাতাদের মাঝে এবং কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুলের সমঝোতার ভিত্তিতে গোপন নিলাম ডাকের মাধ্যমে কেনাবেচা হয়। সমঝোতার ভিত্তিতে দরপত্র দাতাদের মাঝে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ভাগাভাগির টাকা বণ্টনের দায়িত্ব দেন পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদের ওপর। তবে জুয়েল বিশ্বাস নামে একজন দরপত্র ক্রেতা অভিযোগ করেন তার পাওনা টাকা না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে বুধবার রাতে বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের সামনে মা ফার্মেসি মার্কেট চত্বরে সালিশ বৈঠকে বসেন পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ, বিএনপি নেতা মহসিন আলম চান, মিরাজ মৃধাসহ স্থানীয়রা।
বৈঠক শুনানির সময় দরপত্র দাতা আঁধারকোঠা গ্রামের মঈনুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে জামায়াতে কর্মী জুয়েল বিশ্বাসের কোমরে থাকা একটি দেশীয় অস্ত্র দেখে ফেলে লোকজন। এ সময় অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে জুয়েল বিশ্বাসের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় স্থানীয়দের। পরে জুয়েলের নেতৃত্বে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল অস্ত্র নিয়ে মা ফার্মেসিতে আক্রমণ চালায়। এতে রবিন মোল্যা ও রিয়াজ মৃধা আহত হন।
জুয়েল বিশ্বাস জানান, বালুমহালের নিকোর ৪৫ হাজার টাকা জমা ছিল রাসেল আহমেদ ও মিরাজ মৃধার কাছে। সেই টাকা চাওয়ায় আমাকে মা ফার্মেসিতে ডেকে নেয় রাসেল আহমেদ। সেখানে গেলে তারা টাকা না দিয়ে টালবাহানা করে এবং আমার উপর আক্রমণ চালায়। খবর পেয়ে আমার গ্রামের লোকজন আমাকে উদ্ধার করতে ছুটে আসে। সেখানে রাসেল আহমেদের ভাই রবিন আঘাত পান।
এ বিষয়ে পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কর্মী জুয়েল বিশ্বাস আমার কাছে চাঁদা দাবি করে। এ বিষয়ে জানতে মহসিন আলম চান ও মিরাজ মৃধা তাকে ডাকলে তিনি পরিকল্পনা করে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কোমরে অস্ত্র নিয়ে আসেন। লোকজন তা দেখে কেড়ে নিলে আগে থেকে ওঁতপেতে থাকা তার পক্ষের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়।