কৃষক দল নেতা জুয়েল- মিলনের নেতৃত্বে কষক দলের শোডাউন
Published: 25th, February 2025 GMT
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির উধ্বগতি রোধ, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতির দাবী সহ চার দফা কর্মসূচী বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে নারায়নগঞ্জ জেলা বিএনপির সমাবেশস্থলে জেলা কৃষক দল নেতা জুয়েল আরমান- মিলনের নেতৃত্বে যোগদান করেছে কৃষক দলের নেতা-কর্মীরা। শহরের খানপুর এলাকায় জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশ বিকেল তিনটার দিকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর২ টা থেকে থানার প্রতিটি ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা রং বে-রংয়ের ব্যানার-ফ্যস্টুন নিয়ে জেলা পরিষদের সামনে মূল মিছিলে অংশগ্রহন করে। পরে সেখান থেকে থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শত শত নেতা-কর্মী জুয়েল আরমান-মিলেনের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যোগদান করে।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
সমস্যাগ্রস্ত কিছু ব্যাংকের বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ
দেশের সমস্যাগ্রস্ত কিছু ব্যাংকের বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। গভর্নর বলেন, তিনি চেষ্টা করছেন সুশাসনের মাধ্যমে সব ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখতে, কিন্তু সব ব্যাংক যে বেঁচে যাবে, তা নয়। কারণ, কোনো কোনো ব্যাংকের আমানতের ৮৭ শতাংশ একটি পরিবারকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘রিকমেন্ডেশনস বাই দ্য টাস্কফোর্স অন রিস্ট্র্যাটেজাইজিং দ্য ইকোনমি’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের শেষ দিনের এক কর্ম অধিবেশনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে গভর্নর এ কথা বলেন। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে আজ মঙ্গলবার এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অধিবেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, সমস্যায় থাকা ব্যাংকগুলোর অর্ধেকের বেশি ঠিক করা যাবে। বাকিগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাদের সম্পদের মান পর্যালোচনার কাজ চলছে। সুখবর হচ্ছে, ইসলামী ব্যাংক ও ইউসিবি নতুন করে আর্থিক সহায়তা চাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন ঠিক করার পাশাপাশি আদালতে রিট আবেদন কীভাবে কমানো যায়, সেই চিন্তা করা হচ্ছে বলেও জানান গভর্নর। তিনি বলেন, ‘যে গর্তে আমরা পড়েছি, সম্পূর্ণভাবে সমস্যার বাইরে নই। আর মূল্যস্ফীতি কমার বিষয়ে শুরু থেকে যে বলে আসছিলাম ১২ থেকে ১৮ মাস লাগবে, এখনো সে কথাতেই আছি।’
দেশে নতুন করে আর কোনো ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে না জানিয়ে গভর্নর বলেন, বরং মোবাইলে আর্থিক লেনদেনকে (এমএফএস) আন্তলেনদেনযোগ্য করার বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, এ বিভাগ যদি টিকেও থাকে, ব্যাংকে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না—এমন নীতিমালা করা হচ্ছে। বিভাগটি বিমা খাতের দেখভাল (টেককেয়ার) করতে পারে, ব্যাংক খাতের নয়।
অধিবেশনে নির্ধারিত আলোচকদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘অর্থনীতিবিদেরা তত্ত্ব দিলেও আমরা সেসব তত্ত্বের দৈনন্দিন চর্চাকারী। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে দেখা গেল, অর্থনীতি থেকে রাজনীতিকে বের করে দেওয়া হয়েছে। অথচ রাজনীতিকে আলাদা করলে টাস্কফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যাবে না।’
আবদুল আউয়াল মিন্টু গভর্নরের বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘সবাই বলেন যে বাংলাদেশ ব্যাংক একটু বেশি কথা কয়। গভর্নর বিজ্ঞজন। তাঁকে শ্রদ্ধা করি। তবে তাঁকে অনুরোধ করব, এটা দুর্বল ব্যাংক, ওটা নিচে নেমে গেছে—এগুলো বলা বন্ধ না করলে ব্যাংক খাত ঠিক হবে না।’
টাকা ছাপানোর প্রসঙ্গে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ শতাংশ টাকা ছাপানো উচিত। ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত কত টাকা ছাপানো হয়েছে, তা জানার ইচ্ছা তাঁর। তিনি প্রশ্ন করেন, যে দেশে প্রায় সবকিছুই আমদানি করতে হয়, সে দেশে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নিয়ে মূল্যস্ফীতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে?
অনুষ্ঠানে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক খাতে ঋণ দেওয়া, সুদ মওকুফ করা, এমনকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও রাজনীতিকীকরণ হয়েছিল। রাজনীতিকীকরণের অন্যতম উৎস আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তাই একে বন্ধ করা উচিত। আর ব্যাংক কোম্পানি আইন বারবার সংশোধন করা হয়েছে পরিবারতন্ত্রের সুবিধার জন্য। ব্যাংকের ঋণ নীতিমালা ভাঙা হয়েছে। লঙ্ঘন করা হয়েছে একক গ্রাহকের ঋণসীমা। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের বাজেট বরাদ্দের চেয়েও ২ দশমিক ৭ গুণ বেশি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মাইন উদ্দিন।
আলোচনা পর্ব
অনুরোধ জানানোর পরও টাস্কফোর্সে ব্যাংক খাতের কাউকে রাখা হয়নি বলে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার। তিনি বলেন, পলাতক ব্যক্তিরা প্রতিনিধিদের মাধ্যমে আদালতে রিট করছেন, যা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘২০১৭ সালে মধ্য রাতে যখন ইসলামী ব্যাংক দখল করা হলো, তখন থেকেই ব্যাংক খাতে সমস্যা আরও বড় হলো। ২০২০ সালের এপ্রিলে বলা হলো, ৯ শতাংশের বেশি সুদ আরোপ করা যাবে না। আমরা ভুলে গেলাম ব্যাংক খাত ঝুঁকিভিত্তিক সুদহার নির্ধারণের খাত। এরপর এল বিনিময় হারে একের পর এক চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত। যার কাজ যা নয়, তাই তখন করা হচ্ছিল। সাতটা ব্যাংক যে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে চলে গেল, তা আমরা সবাই জানতাম।’
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এরপর আরও খারাপ জিনিস এল। স্বতন্ত্র পরিচালকেরা কোথায় আমানতকারীদের স্বার্থ দেখবেন, তার পরিবর্তে তাঁরা স্বার্থ দেখা শুরু করলেন উদ্যোক্তাদের। এক ব্যাংকের কাছে বন্ধক দেওয়া সম্পদ আবার আরেক ব্যাংকে বন্ধক দেওয়ার উদাহরণও দেখা গেল।
ব্যাংকারদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে সৈয়দ মাহবুবুর আরও বলেন, ‘ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে কেউ হয়তো বিদেশে চলে গেলেন। আমাদের সুরক্ষা কোথায়? আমরা তো শাহবাগে দাঁড়াতে পারছি না। মাঠেও নামতে পারছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মাইন উদ্দিন মালিকানা নেই, এমন ব্যক্তিদের ব্যাংকের চেয়ারম্যান করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ব্যাংকের পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালকদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। নাম উল্লেখ না করে মাইন উদ্দিন বলেন, একটি ব্যাংক নিজে বলেছিল, তার খেলাপির হার ৫ শতাংশ। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক দেখেছে এর হার ৯৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক (টাস্কফোর্সের সদস্য) মনজুর হোসেন ২০২০ সালে ঋণ ও আমানতের সুদের হার ৯ ও ৬ শতাংশ করার প্রভাব নিয়ে বলেন, এতে কি বিনিয়োগ বাড়ল? খেলাপি ঋণ তো আরও বেড়ে গেল। এ ছাড়া শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।