ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনাটি সঠিক নয়: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
Published: 25th, February 2025 GMT
চলতি মাসের ১৭ তারিখ দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ‘ইউনিক রোড রয়েলস’ নামের চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনাটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আজ মঙ্গলবার মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার থেকে প্রাপ্ত এ–সংক্রান্ত এক ভিডিও ক্লিপে বাসটির এক নারী যাত্রীর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
বলা হয়, ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, বাসটির এক নারী যাত্রী বলছেন, ‘বাসটিতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, তবে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ এতে দেখা যায়, নারী যাত্রী খোলামেলাভাবে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা ইউনিক রোড রয়েলসের ‘আমরি ট্রাভেলসের’ একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। যাত্রীদের ভাষ্যমতে, সেদিন রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাস ছাড়ে। রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে বাসে ডাকাতি শুরু হয়। তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতি শেষে ঘুরিয়ে একই জায়গায় বাসটি নিয়ে গিয়ে রাত ৩টা ৫২ মিনিটে ডাকাতেরা নেমে যায়। এরপর বাসের চালক, তাঁর সহকারী ও সুপারভাইজার নানান টালবাহানা করতে থাকে। তাঁরা বলেন, তাঁদের গাড়িতে তেল নেই। অবশেষে যাত্রীদের চাপের মুখে পড়ে তাঁরা রাজশাহীর উদ্দেশে বাস ছাড়েন। যাত্রীরা প্রথমে বাসটি নিয়ে মামলা করার জন্য টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় যান। সেখানে তখন ওসি ছিলেন না বলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার পরে বাসটি বড়াইগ্রামে থানায় ঢোকানো হয়। পরে বাসের কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেন, বাসে দুই নারীর শ্লীলতাহানি হয়েছে।
আরও পড়ুনঢাকা-রাজশাহী রুটে চলন্ত বাসে ডাকাতির যে বর্ণনা দিলেন যাত্রীরা২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ঘটনার তিন দিন পর ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরে বাসের যাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা করেন। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছে।
আরও পড়ুনচলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামি রিমান্ডে১৮ মিনিট আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েটের হল বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল, না ছাড়ার ঘোষণা
আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দুর্বার বাংলা’ ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
মিছিল থেকে শিক্ষার্থীরা-‘হল ভ্যাকেন্টের নোটিশ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’; ‘দিয়েছি তো রক্ত আরও দেবো রক্ত’; ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’; ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়; ‘হল ভ্যাকেন্ট মানি না, মানি না মানব না’; ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’; ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত, মানি না মানব না’ এ ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
আরও পড়ুনকুয়েট এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, বুধবার সকালেই হল ত্যাগের নির্দেশ৩ ঘণ্টা আগেবিক্ষোভ মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, জুলাই বিপ্লবের পর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কুয়েটে হল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁরা তাঁদের ছয় দফা দাবিতে অনড় আছেন। হঠাৎ করে তাঁদের আন্দোলন দমানোর এবং এই আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এবং দীর্ঘায়িত করার জন্য তাঁদের ওপর বিভিন্ন ধরনের চাপ চলছে। তাঁদের মধ্যে যে ১৫০ জন আহত হয়েছেন, তাঁদের খোঁজখবর একবারও কুয়েট প্রশাসন নেয়নি। শিক্ষার্থীদের পাশেও দাঁড়ায়নি। তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির প্রতিটি মানতে হবে। বুধবার তাঁরা হল ছাড়বেন না। হল ছাড়তে হলে পুলিশ–আর্মি দিয়ে তাঁদের রক্তের ওপর দিয়ে হল ছাড়াতে হবে।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট আমলেও বাংলাদেশের সব ভার্সিটিতে হল ভ্যাকেন্ট দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকার টিকতে পারে নাই, পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এই বর্জিত ভিসিরও সেই পরিণতি ভোগ করতে হবে। ওই সময়ে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের কাছে এই হল ভ্যাকেন্ট একটা ‘ফেইল করে যাওয়া ফ্যাসিস্টের ট্যুল’ ছাড়া আর কিছুই না। আমরা ঘৃণভাবে হল ভ্যাকেন্টকে প্রত্যাখ্যান করছি। ১১৭ একরের কুয়েটের ৫ হাজার শিক্ষার্থী কোনো দিনও নিজের ভাইয়ের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বেইমানি করবে না।’
এর আগে কুয়েটে সব একাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আনিছুর রহমান ভূঞা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনার এক সপ্তাহের মাথায় কুয়েট পুরোপুরি বন্ধের ঘোষণা এল। এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের অপর এক সভায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
এদিকে আজ দুপুরে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তাঁর বাসভবনে আবারও তালা লাগাতে গিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার পর তাঁরা তালা না লাগিয়ে সেখান থেকে ফিরে যান।
১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হন। পরের দিন বুধবার প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ওই ঘটনার তদন্তে কমিটিও করা হয়। বুধবার রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। গত রোববার শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।