বাস ডাকাতিতে পড়ার অভিজ্ঞতা ও কিছু সমাধান
Published: 25th, February 2025 GMT
সাম্প্রতিক সময়ে বাস ডাকাতির বিষয়টি আবারও আলোচনা তৈরি করেছে। কিছুদিনের পত্রিকা ঘাঁটলেই বাস ডাকাতির বিষয়টি ভালোমতো টের পাওয়া যায়। এবং পুলিশ এসব ঠেকাতে তাদের ব্যর্থতা দেখিয়েই যাচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী বাসে যে ঘটনা ঘটল, তা আসলে চরম ন্যক্কারজনক। আর পুলিশ তদন্ত শেষ না করেই ধর্ষণ নাকি শ্লীলতাহানি, তা নিয়ে মত দিয়ে দেওয়ার বিষয়টি আরও লজ্জাজনক। সত্য গোপন করলে কোনো সমস্যার সমাধান আসলেই হবে না।
আমাদের দেশে সড়কে দুইভাবে ডাকাতি হয়। একটি হচ্ছে রাস্তায় গাছ ফেলে বাস থামিয়ে একসঙ্গে অনেক বাস বা গাড়িতে ডাকাতি করা হয়। আর একটা হচ্ছে যাত্রীবেশে বাসে উঠে ডাকাতি করা। আমি একবার খুলনা থেকে ঢাকা আসার পথে যাত্রীবেশে ডাকাতিতে পড়েছিলাম। এত বছর হয়ে গেছে ডাকাতেরা এই দুইটা প্যাটার্নের ডাকাতি করা থেকে বের হতে পারেনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, ছোট্ট এই দেশে এত বছরেও যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বন্ধে কার্যকরী কোনো সমাধানে যেতে পারেনি পুলিশ।
প্রথমে বাস ডাকাতিতে কী কী হয়, তা বলে নিই। সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকে, সেই সময় যাত্রীবেশে ডাকাতেরা উঠে সবার আগে চালককে সরিয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। অনেকেই বলে কেন ৫০ জনের মতো যাত্রী ডাকাতদের সঙ্গে পারে না। কারণ, বাসে নড়াচড়ার জায়গা থাকে না। নড়াচড়া করলে ওরা ছুরিকাঘাত করে। ফলে যাত্রীদের আসলে কিছু করার থাকে না। এ অবস্থায় একজন সাধারণত পিস্তল তাক করে থাকে আর বাকিরা যাত্রীদের জিনিসপত্র হাতানো শুরু করে। যাত্রীরা কোনো কিছু সিটের নিচে ফেললে তা মিস করবেই না। আর কেউ বাধা দিলে ছুরি মারবে। এদের আসলে খুন করার ইচ্ছা থাকে না।
এরা সাধারণত সেই বাস লক্ষ্য করে যেখানে অন্তত একজনের কাছে বড় অঙ্কের টাকা থাকে। এর মানে হলো তাদের নিজস্ব ইনফরমার থাকে, তাদের তথ্যের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয় কোন বাস ডাকাতি করা হবে। আর বাকি টাকা, গয়না, ফোন হচ্ছে অতিরিক্ত লাভ। লাগেজের প্রতি এদের খুব আগ্রহ থাকে না, ল্যাপটপ ছাড়া। বাসের বক্সে রাখা লাগেজ বা ব্যাগপত্রের দিকে তাদের নজর থাকে না বললেই চলে।
কিন্তু এদিকে রাস্তায় গাছ ফেলে দেওয়া ডাকাতেরা সবকিছু নেওয়ার জন্যই প্রস্তুত থাকে। নিজস্ব পিকআপ দিয়ে তারা চলতে পারে। তারা অবশ্যই জানে যে এই রাস্তায় পুলিশি টহল থাকবে না। কিছুদিন আগে নওগাঁয় এ রকম ডাকাতি হলো। সাধারণত ডাকাতি শেষ করেই ডাকাতেরা নেমে যায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টা ধরে বাসে থেকে যায়, যেখানে ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটে। এ থেকে বোঝা যায়, তাদের কাছে তথ্য থাকে রাস্তায় পুলিশি টহল নেই।
তার মানে বোঝা যাচ্ছে ডাকাতির সঙ্গে পুলিশের এক প্রকার যোগসাজশ থাকে। আসলে পত্রিকায় যে ঘটনা আসে, ডাকাতির সংখ্যা তার থেকে বেশি থাকে। এমনকি আমি যে ডাকাতিতে পড়েছিলাম, তার খবরও পত্রিকায় আসেনি। বাস্তবতা হচ্ছে, এই দেশে পুলিশের কোনো এক অসাধু অংশ জানেই কারা এই ডাকাতের দলের সঙ্গে জড়িত।
এরপর তাদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকে বাসের কর্মচারীদের। বাসের ভেতরের খবর আগে থেকেই তারা জানে। অনেক ক্ষেত্রে রাস্তা থেকে যাত্রী তোলার নাম করে তারা ডাকাতদের তুলে নেয়। ডাকাতদের কাছে যাত্রীদের তথ্য থাকে। অনেক ক্ষেত্রে মালিকেরা নিজেদের সুনামের স্বার্থে মামলা করে না। এমনকি তারা যাত্রীদেরও অনেক সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দিতে চায় না।
এখন কী করা উচিত? বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এবং আমাদের মতো ছোট দেশে বাস ডাকাতি ঠেকানো কঠিন কিছু না। চালকের আসনের পাশে একটি জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইস থাকবে এবং সেটা নিরাপত্তারক্ষীদের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। কিন্তু তা করতে গেলে বাসমালিক এবং পুলিশ দুই পক্ষেরই ইচ্ছা থাকতে হবে। কিন্তু প্রযুক্তি স্থাপনে দুই পক্ষই আসলে খুব বেশি ইচ্ছুক না। ফলাফল হচ্ছে, ডাকাতি আসলে কমছে না।
আমাদের অপরাধের বেশির ভাগই একই ধরনের, একই রকমের। যদি প্রযুক্তি স্থাপন করা না যায়, তাহলে অন্তত ম্যানুয়ালি রক্ষা করার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। রাতের বাসগুলোয় আগে চেক পয়েন্টে নিয়মিত চেক এবং ভিডিও ক্যামেরাতে যাত্রীদের চেহারা রেকর্ড করা হতো। এখন সেই চল উঠে গেছে বলেই চলে। যেসব বাসে ভিডিও রেকর্ড করা হতো, সেই মাসগুলোতে ডাকাতির কথা কখনো শুনিনি। এই জিনিস বাধ্যতামূলক করতে হবে। বাস ছাড়ার সময় মালিকদের নিজ উদ্যোগে ভিডিও রেকর্ড করা উচিত। তারপর অন্তত দুইটা চেক পয়েন্টে রেকর্ড পুলিশের চেকিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। একটা শুরুতে এবং আর একটা রাস্তায় মাঝখানে বিরতি দেওয়ার পর। রাতে দেশে এখন পুলিশের চেকপোস্ট দেখাই যাচ্ছে না। এটা অবিলম্বে সক্রিয় করতে হবে।
রাস্তা থেকে যাত্রী তোলা নিষিদ্ধ করতে হবে। কোনোভাবেই বাস ছেড়ে দেওয়ার পর আর যাত্রী তোলা যাবে না। চালকের পেছনে প্রতিবন্ধক সব বাসে বাধ্যতামূলক করতে হবে। যাতে ডাকাতেরা শুরুতেই বাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারে। বাসমালিকেরা নিরাপত্তারক্ষী দিতে পারেন, পুলিশও সাদাপোশাকে বাসে থাকতে পারে। যা অপরাধী ধরতে সাহায্য করবে।
দেশে পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে টহল বাড়াতে হবে। পুলিশ এখন গাড়ির অভাবে লেগুনায় টহল দিচ্ছে। যা আসলে কোনো কাজেই আসছে না। হাইওয়ে থানা বাড়াতে হবে। পুলিশকেই আসল কাজ করতে হবে। এটা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
কিন্তু একটা বিষয় আমরা সবাই মিস করে যাই। সেটা হচ্ছে সব অপরাধী ধরা না পড়লেও অল্প কিছু তো ধরা পড়ে। তাদের কি বিচার হচ্ছে? তারা সবাই জামিনে বের হয়ে তো আগের কাজই করছে। গুগল করে বাস ডাকাতের শাস্তির দু–তিনটা উদাহরণ ছাড়া চোখে পড়ল না। এটা কি বিচার বিভাগের দুর্বলতা নাকি আমাদের তদন্তের দুর্বলতা, তা আসলেই দেখা উচিত। পুলিশ যদি বিচার বিভাগ থেকে সাহায্য না পায়, এই দেশে অপরাধ কখনোই কমবে না।
সুবাইল বিন আলম টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট
ই–মেইল: [email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র র কর ড অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ধানের সরকারি দামে কৃষকের শঙ্কার মেঘ কাটছে না
‘এবার সেচের পানি, সার, বীজ, কীটনাশক ও ধান কাটার খরচ ৩০ শতাংশ বেড়েছে। বর্গা চাষ করলে এক কেজি ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে সাড়ে ৩৫ টাকার বেশি। সরকার বলছে, আগের বছরের চেয়ে দাম বাড়িয়ে ৩৬ টাকায় কিনবে তারা। এই দরে বেচলেও তো আমাদের লোকসান হবে।’–এই দুঃখ মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার ধূল্যা গ্রামের চাষি রহমান আলীর।
শুধু রহমান আলী নন, এবারও ধান-চালের ভালো দাম পাওয়া নিয়ে কৃষকের মনে জমা শঙ্কার মেঘ কাটছে না। কৃষি উপকরণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় ধানের দাম বাড়ার পরও কৃষক লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন। এবারের বোরো মৌসুমে খাদ্য মন্ত্রণালয় ধান সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, তা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। গত বছর ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ টন। এবার তা সাড়ে ৩ লাখ টন। তবে সরকার ধান-চালের দাম গতবারের চেয়ে কেজিতে ৪ টাকা বাড়িয়েছে।
এর সমালোচনায় বলা হচ্ছে, এই দাম বৃদ্ধি কৃষককে বঞ্চিতই রাখবে, যথারীতি সুবিধা পাবেন মিলাররা।
অবশ্য সরকার বলছে, ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কমলেও দাম বেড়েছে। এতে লাভবান হবেন কৃষক। আজ বৃহস্পতিবার থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান।
প্রান্তিক চাষিরা বলছেন, দাম বাড়ালেও নানা শর্তের কারণে সরকারি গুদামে ধান দেওয়া যায় না। আর্দ্রতা পরীক্ষা, ব্যাংক হিসাব খোলা, গুদামে ধান দিয়ে আসাসহ নানা বিড়ম্বনার কারণে কৃষক মহাজনের কাছে ধান বিক্রি করেন। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন।
ধান-চাল সংগ্রহ কম, আমদানি বেশি
দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা অটুট রেখে মজুত বাড়াতে প্রতিবছর স্থানীয় বাজার থেকে সরকার ধান-চাল সংগ্রহ করে। এই সংগ্রহ অভিযানের উদ্দেশ্য সরাসরি কৃষকের পাশে দাঁড়ানো এবং ভোক্তাকে স্বস্তি দেওয়া। এই বোরো মৌসুমে ৩৬ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান কেনা হবে। আর ৪৯ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল কেনা হবে ১৪ লাখ টন। গেল বোরো মৌসুমে ১১ লাখ টন সেদ্ধ চাল, ১ লাখ টন আতপ চাল এবং ৫ লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। ওই সময় প্রতি কেজি ধান ৩২ টাকা ও সেদ্ধ চাল ৪৫ টাকা ছিল।
এবার আমন মৌসুমে সরকার ৫.৫০ লাখ টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। সংগ্রহ হয়েছে ৪.৩৫ লাখ টন। আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৮৪ হাজার ৬১ টন। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ টন। চাল মূলত মিলাররা দেন।
ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩.৫০ লাখ টন। সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২৬ হাজার ৭১৪ টন। বাজারদরের চেয়ে সরকার নির্ধারিত সংগ্রহ মূল্য কম হওয়ায় আমন মৌসুমে খাদ্য অধিদপ্তর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করতে পারেনি। ফলে অভ্যন্তরীণ ঘাটতি পূরণে সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার ৮ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্য ঠিক করেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৫.১৮ লাখ টন চাল আমদানির দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে, যার বেশির ভাগ এরই মধ্যে দেশে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এক গবেষণায় বলা হয়, দেশে বছরে চাহিদার চেয়ে প্রায় ৪২ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকে। উদ্বৃত্ত থাকার পরও চাল আমদানির কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সরকারের ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থতা, পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করা এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল আমদানি করতে হয়।
ব্রির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে শুধু শতভাগ ধান-চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে সরকার। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ২১ শতাংশ, ২০২০ সালে ৩৩ ও ২০২১ সালে ৫৪ শতাংশ ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়।
সরকারকে ধান দিতে কৃষকের অনীহা
সেচ যন্ত্রের জ্বালানি ডিজেল ও বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি বেড়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি। এতে বোরো ধান চাষে খরচও বাড়ছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) হিসাবে, বোরো ধানের উৎপাদন খরচ ১০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে কৃষকের ধান ও চালের ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা আছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার কৃষক আবদুর রহমান বলেন, এবার বোরো ধান চাষে প্রতি বিঘা জমিতে বাড়তি প্রায় ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত বোরো মৌসুমে এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে বোরো উৎপাদনে খরচ ছিল প্রায় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এ বছর তা দাঁড়াবে ১৮ হাজারেরও বেশি।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার কৃষক মাহফুজুল হক বলেন, ‘হিসাব অত সোজা না। এই ধরেন, যদি আমি নিজের জমি চাষ করি, তা হইলে হিসাব এক রকম। আর যদি অন্যের জমি বর্গা নিই, তা হইলে খরচ আরও বেশি।’
ধান সংগ্রহে এখনকার পদ্ধতিতে কিছু অসংগতির কারণে কৃষক ভোগান্তিতে পড়ছেন। গুদামে ধান বিক্রি করতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। তবে ব্যবসায়ীর কাছে ধান বিক্রিতে তেমন বেগ পেতে হয় না। সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে অনেক সময় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাতে দুই দফা পরিবহন খরচ হয়।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরবাটা ইউনিয়নের ভূঁইয়ার হাটের কৃষক দুলাল চন্দ্র দাস বলেন, ‘সরকারের কাছে অ্যাপস ও ব্যাংকের মাধ্যমে ধান বেচতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। আর্দ্রতা পরীক্ষার নামে হয়রানি তো আছেই।’
চাল ও ধান ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালা আছে। এতে ১৫টি শর্ত দেওয়া আছে মিলার ও কৃষকদের জন্য। কুষ্টিয়ার আলামপুর এলাকার কৃষক এনামুল হক বলেন, গুদামে ধান নিয়ে গেলে আর্দ্রতা মাপা হয়। ভেজা হলে সেই ধান আবার শুকাতে হয়। এর পর ওজনে কম হলে আবার বাড়ি থেকে বাড়তি ধান এনে সেটা পূরণ করতে হয়। গাড়ি ভাড়া নিজের পকেট থেকে দিতে হয়। আবার চেক নিয়ে ব্যাংকে যেতে হয়। সরকার যদি প্রতি ইউনিয়ন থেকে ধান কেনে, তাহলে ভালো হয়।
কুষ্টিয়ার বিত্তিপাড়া এলাকার কৃষক রহিম মণ্ডল ও আবেদ আলী বলেন, মৌসুমের শুরুতেই প্রান্তিক কৃষক টাকার জন্য কম দামে ধান বিক্রি করেন। সেই ধান ফড়িয়া ও ছোট ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে মিল মালিকদের কাছে চলে যায়। কৃষকদের ঘরে যখন কোনো ধান থাকে না, তখন দাম বাড়তে থাকে। হাওরে এখন ধানের মণ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। এখন বড় বড় মিল মালিকরা কম দামের এসব ধান কিনে গুদাম বোঝাই করতে শুরু করেছেন।
কারা কী বলছেন
সাবেক খাদ্য সচিব মো. আবদুল লতিফ মণ্ডল বলেন, চাল উৎপাদনে বোরোর অবস্থান শীর্ষে। অথচ এই মৌসুমে গত বছরের চেয়ে দেড় লাখ টন কম ধান সংগ্রহ করা হবে। এতে কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রি না করে খোলাবাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে আগ্রহী হবে। চালকল মালিকরা ধান কিনতে বাজারে আসার আগেই সরকার ব্যবস্থা না নিলে আগের মতো এবারও ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।
গত ১২ এপ্রিল দেশের ৪৩ বিশিষ্ট নাগরিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, কৃষককে বঞ্চিত করে মিলারদের সুবিধা দিতে ধান সংগ্রহের পরিমাণ কমানো হয়েছে। ১৩ এপ্রিল সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, ধান-চাল কেনার এই সিদ্ধান্তে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারও যে অতীতের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতেই পরিচালিত হচ্ছে, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
তবে খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ধানের উৎপাদন খরচের ভিত্তিতে ধান-চাল সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করে সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয় সেই খরচ নিরূপণ করে। এবার চাল আমদানি হয়েছে পর্যাপ্ত। ধান কিনলে সেটা ভাঙানো ও মজুত সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরের। ধানের দাম এবার ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে বলে জানান তিনি।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাজ্জাদ রানা]