সিদ্ধিরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা পরিচয়ে বসতবাড়িতে ঢুকে যুবককে মারধর
Published: 25th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে কাউসার আহমেদ (২৬) নামের এক যুবককে বসতবাড়িতে ঢুকে মারধর করা হয়েছে। এসময় ভুক্তভোগীর মায়ের শরীরে হাত তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪ টার সময়ে (নাসিক) ১ নং ওয়ার্ডের বাতেনপাড়া এলাকায় এমন ঘটন ঘটেছে। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার ভুক্তভোগী কাউসারের মা রওশন আরা বেগম (৫৫) বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্তরা হলো: মিজমিজি তালতলা এলাকার বাসিন্দা হজরত মুন্সির ছেলে সোয়েব (২৬) ও সোহাগ (৩৫)।
অভিযোগে তুলে ধরা হয়েছে, অভিযুক্ত সোয়েব ও তার বড় ভাই সোহাগের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাদীর বাড়িতে প্রবেশ করে। বাড়িতে প্রবেশের একপর্যায়ে তার ছেলেকে ঘর থেকে ঢেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা করা হয়। এসময় ছেলেকে বাঁচাতে চেষ্টাকালে অভিযুক্তরা বাদীকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও ধাক্কা দেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত সোহাগ সম্প্রতি এলাকায় নিজেকে বিএনপির সহযোগী সংগঠন সেচ্ছাসেবক দলের নেতা পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আ:লীগ শাসন আমলে রাজনৈতিকভাবে সুযোগ নেওয়া এই ব্যক্তির এমন পরিবর্তনে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এদিকে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতার ভাষ্যমতে, স্বৈরাচার আমলে কথিত এই সোহাগকে দেখেননি তারা। এ থানার সিনিয়র নেতাদেরকে বর্তমান সময়ের সুবিধাভোগী এই ব্যক্তির অতীত টেনে দেখার আহ্বানও জানান স্থানীয়রা।
অভিযোগের বাদী রওশন আরা বেগম জানান, হঠাৎ আমার বাসায় হজরতের দুই ছেলে তার অনেকগুলা লোক নিয়া এসে আমার ছেলেকে ঢেকে ঘর থেকে বের করে মারধর করে। আমি তাদের বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে আমাকে ধাক্কা ও অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করা হয়। সন্ত্রাসীরা আমার বাড়িতে ইটপাটকেলও মারে।
এ বিষয়ে অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব থাকা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম বলেন, অভিযুক্তদের পিতা অটোরিকশা চুরি করেছে এমন খবর রটলে প্রধান অভিযুক্ত সোয়েবকে এসএমএস করেন ভুক্তভোগী কাউসার। তারা উভয়ে বন্ধু হোন বলে জেনেছি। কাউসার অভিযুক্ত সোয়েব তার পিতা সম্পর্কে এসএমএস করলে ক্ষিপ্ত হয়ে এই ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ শাহিনূর আলম জানান, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ য বক য বক ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
জ্যোৎস্নার দুনিয়ায় হঠাৎ অন্ধকার
স্বামী, শাশুড়ি ও তিন সন্তান নিয়ে সংসার ছিল জ্যোৎস্না অধিকারীর (৩৫)। আধাপাকা বাড়ি, বড় পুকুর, সবজির ক্ষেত– সব মিলে সুখের সংসারই। স্বপ্ন ছিল তিন সন্তানকে প্রতিষ্ঠা করার। কিন্তু তাঁর সব স্বপ্নই এখন ফিকে।
স্বামী অশোক অধিকারী দ্বিতীয় বিয়ে করে পালিয়েছেন। বিয়ের আগে বসতভিটা ও ফসলি জমির কিছু অংশ বিক্রি করেছেন তিনি। কিন্তু নতুন ক্রেতাদের দখলে চলে গেছে সব সম্পদ। এ অবস্থায় ছোট তিন সন্তান নিয়ে এক প্রতিবেশীর বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন জ্যোৎস্না অধিকারী। শাশুড়ির রাত কাটে আরেক প্রতিবেশীর গোয়ালঘরে।
খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের শেখ-সরদারপাড়া গ্রামে এ পরিবারের বসবাস। গত ৬ আগস্ট বসতভিটে থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদের। এরপর কিছুদিন এখানে সেখানে ঘুরেছেন। পরে গ্রামের একটি মুসলিম পরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
জ্যোৎস্না অধিকারী বলেন, ‘স্বামীর ভুল সিদ্ধান্তে আমাগের কপাল পুড়েছে। ভিটেবাড়িতে আশ্রয় নিতি পারলি অন্তত গতর খাটিয়ে তিন সন্তানকে মানুষ করতি পারতাম। কী দুর্ভাগ্য, এখন অন্যের বারান্দায় আশ্রয় নিতি হয়েছে। খাব কী, থাকব কোথায়? ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’
জ্যোৎস্না অধিকারীর অভিযোগ, তাঁর স্বামী নিজের নামের জমি বিক্রি করলেও তাঁর শাশুড়ির অংশ রয়ে গেছে। সে হিসাবে বসতভিটেতে থাকার অধিকার ছিল তাদের। গায়ের জোরে তাদের ভিটেছাড়া করা হয়েছে।
জ্যোৎস্না যখন তাঁর শাশুড়ি মায়া অধিকারী ও তিন সন্তান প্রান্ত (১৪), অঙ্কিতা (৫) ও দিশাকে (৩) নিয়ে পথে পথে ঘুরছিলেন, তখন প্রতিবেশী মাছুরা খাতুন তাদের আশ্রয় দেন। মাছুরা খাতুনের স্বামী ওয়ায়েজ কুরনীও অন্যত্র বিয়ে করে চলে গেছেন। এ অবস্থায় নিজের অভাব-অনটনের সংসারে আরেকটি পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।
মাছুরা খাতুন বলেন, ‘স্বামী ফেলে গেলে কী অবস্থা হয়, তা আমি জানি। তাই অসহায় পরিবারটিকে আশ্রয় দিছি। কতদিন পারব বলতি পারিনে।’ তিনি বলেন, পরিবারটিকে অন্তত তাদের বসতবাড়িতে তুলে দিতে পারলেও কষ্ট কিছুটা কমত। এজন্য তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্যদের কাছে গিয়েছেন। এমনকি কয়েকবার পুলিশের কাছেও গেছেন। কেউ কোনো সমাধান দিতে পারছে না।
প্রতিবেশী সুপ্রিয়া অধিকারী বলেন, সরকার পতনের পর দলবল নিয়ে জোরজবরদস্তি করে পরিবারটিকে বের করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদ করায় তাদের নামেও মামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই ভয়ে পরিবারটিকে আশ্রয় দিতে পারেননি। বিষয়টি পুলিশকে জানালেও কাজ হয়নি।
এ বিষয়ে কয়রা থানার ওসি ইমদাদুল হক বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য দুই পক্ষকে ডেকে বলা হয়েছে। পরিবারটি যাতে বসতভিটে থেকে উচ্ছেদ না হয়, সে জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য তাদের আদালতে যেতে বলা হয়।
উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম জানান, অশোক অধিকারী কবে জমি বিক্রি করেছেন জানা ছিল না। পরে এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে কয়েক দফা সালিশ হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, অশোক অধিকারীর ৬৬ শতাংশ জমির মধ্যে তাঁর কাছ থেকে গোলাম রসুল টুকু নামে এক মালয়েশিয়া প্রবাসী ৪৯ শতাংশ কিনেছেন। বাকি জমি এখনও অবিক্রীত আছে। এ কারণে বসতবাড়িটি রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছিল। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার সহযোগিতায় সব জমি দখলে নিয়ে পরিবারটিকে ভিটেছাড়া করা হয়েছে।
জ্যোৎস্নার শাশুড়ি বলেন, ‘আমার ছাওয়াল জমি বেইচে গেলিও আমার অংশ বিক্রি হয়নি।
তারপরও আমাগের এক কাপড়ে জবরদস্তি বের করা দেওয়া হয়েছে।’
বসতভিটায় গিয়ে দেখা গেছে, আধাপাকা ঘরের বারান্দার গেটে তালা দেওয়া। ঘরের সামনে দুই শিশু পুকুরে সাঁতার কাটছে। তাদের কাছে জানতে
চাইলে হাসান নামের একটি শিশু জানায় বাড়িটি এখন তাদের। তার বাবা মালয়েশিয়া থাকেন। ঘরে তার মা আছেন। তার মাকে ডাকাডাকি করা হলেও সাড়া দেননি।
কয়রার ইউএনও রুলী বিশ্বাস বলেন, ঘটনাটি অমানবিক। যদি ওই অংশে তাদের (জ্যোৎস্না) জমি থেকে থাকে, তাহলে তা উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে পরিবারটির যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা হবে।