অপারেশন ডেভিল হান্টে ৬৩৯ জনসহ সারাদেশে গ্রেফতার ১ হাজার ৬৩৮
Published: 25th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচালিত অভিযান অপারেশন ডেভিল হান্টে ৬৩৯ জনসহ সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১ হাজার ৬৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ৮ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে শুরু করে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পর্যন্ত ১৮ দিনে এ বিশেষ অভিযান ডেভিল হান্টে মোট ৯ হাজার ৮৯২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানের আওতায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৩৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর অন্যান্য মামলা ও ওয়ারেন্টের আওতায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৯৯৯ জনকে। ২৪ ঘণ্টায় মোট গ্রেফতার করা হয়েছে ১ হাজার ৬৩৮ জনকে।
অপারেশন ডেভিল হান্টে ২৪ ঘণ্টায় উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো হলো- পুরাতন বিদেশি পিস্তল একটি, এলজি একটি, পিস্তলের ম্যাগাজিন একটি, শর্টগানের শীসা কার্তুজ একটি, ধারালো চাপাতি একটি, ধারালো বটি একটি এবং দুটি ছোরা উদ্ধার হয় বলে জানান এআইজি ইনামুল হক সাগর।
ডেভিল অর্থ হচ্ছে ‘শয়তান’ আর হান্ট অর্থ ‘শিকার’। ডেভিল হান্ট, যার বাংলা অর্থ গিয়ে দাঁড়ায় ‘শয়তান শিকার’ করা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত ডেভিল হান্ট বলতে দেশবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় আনতে বোঝানো হয়েছে।
অপারেশন ডেভিল হান্ট একটি বিশেষ অভিযান, যা ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী হামলা করেন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এই হামলায় নেতৃত্ব দেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। হামলার ফলে বেশ কয়েকজন হতাহত হন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’ নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয়।
বিএইচ
.উৎস: SunBD 24
এছাড়াও পড়ুন:
নির্দেশনার পাশাপাশি তৎপরতাও বাড়াতে হবে
নিরাপদ পরিবেশে ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের জন্য এবং ঈদে বাসাবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের সার্বিক নিরাপত্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) যে ১৪টি নির্দেশনা জারি করেছে, তা গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করি। তারা বাসাবাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানে পাহারা জোরদার ও সার্বক্ষণিক নজরদারির ওপর জোর দিয়েছে।
আমরাও মনে করি, জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নাগরিকদেরও উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। নাগরিকেরা কোথায় কী মালামাল রেখে যান, সেটা তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যদের জানার কথা নয়। কিন্তু ডিএমপি যখন নাগরিকদের এসব নির্দেশনা ও সদুপদেশ দিচ্ছে, তখনই ঢাকা শহরে র্যাবের নামে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। বুধবার ভোরে র্যাবের নাম করে একদল ডাকাত ধানমন্ডির ৮ নম্বর সড়কে একটি ছয়তলা ভবনে প্রায় সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে। এমনকি ঘটনার সময় পুলিশ অভিযান চালাতে গেলে ডাকাতেরা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করে। পুলিশের ভাষ্য, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এর আগে ৯ মার্চ ও ১২ ডিসেম্বরও র্যাবের পরিচয়ে যথাক্রমে পুরান ঢাকা ও মোহাম্মদপুরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
আবাসিক এলাকায় একের পর এক ডাকাতির ঘটনা কী বার্তা দেয়? র্যাব গঠিত হওয়ার পর থেকে এর কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে তীব্র সমালোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র এই বাহিনীর সাতজন সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার সেই সমালোচনাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে গিয়ে নিজেরাই ‘উড়ে’ গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশন র্যাবের প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়নের সুপারিশ করেছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন পুরোপুরি বাতিলের কথা বলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বাংলাদেশে কোনো বাহিনী বাতিল বা পরিত্যক্ত ঘোষণার উদাহরণ আছে। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জাতীয় রক্ষীয় বাহিনী ভেঙে দেওয়া হয়। তাদের সদস্যদের সেনাবাহিনীতে একীভূত করা হয়েছিল।
ঈদে বাড়ি বা সড়কে মানুষ নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে অবশ্যই সজাগ থাকবে। এর অর্থ এই নয় যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও বেশি তৎপর থাকবে না। সাম্প্রতিক কালে ছিনতাই, ডাকাতি, চুরিসহ সব ধরনের অপরাধই বেড়ে চলেছে। তদুপরি যে খবরটি আমাদের বিচলিত করে, সেটি হলো এসব অপরাধের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্তমান কিংবা সাবেক সদস্যদের যুক্ত থাকা। যখন রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় নামে, তখন আর জনগণ নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারে না।
ডিএমপি ঢাকার বাসিন্দাদের ঈদের সময় সজাগ থাকতে বলেছে। আশা করি, অন্যান্য বড় শহরেও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঈদের সময় কেবল বাসাবাড়ি বা পর্যটন এলাকা নয়, চলাচলের পথও নিরাপদ রাখতে হবে। বিশেষ করে সড়কপথে ছিনতাই–ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। হাইওয়ে পুলিশকে এখানে আরও তৎপর হতে হবে। ঈদের সময় যানবাহনের অত্যধিক চাপ থাকে এবং কোনো কোনো সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অনেক সময় পরিবহনকর্মীদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশও থাকে। জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নিজেদের সজাগ রাখুক।