সেতু ভেঙে নদীতে, ৩০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ
Published: 25th, February 2025 GMT
বরগুনার আমতলী উপজেলায় চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলে চাওড়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন দুই ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজার বাসিন্দা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা দুইজন যাত্রী নিয়ে সেতু পার হচ্ছিল। সেসময় সেতুর দুই তৃতীয়াংশ ভেঙে অটোরিকশা ও যাত্রীসহ নদীতে পড়ে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
আহত অটোযাত্রী মিরাজ মিয়া বলেন, “গাড়িটি সেতুর মাঝ বরাবর পৌঁছালে সেতু ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। আমরা কোনমতে প্রাণে বেঁচে ফিরেছি।”
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চাওড়া নদীর উপর চন্দ্রা আউয়াল নগর এলাকায় আয়রণ সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে। ওই সেতুর নির্মাণ কাজ পান হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মৃধা।
অভিযোগ রয়েছে, সেতুটি দায়সারাভাবে নির্মাণ করার পাঁচ বছরের মাথায় সেতুর মাঝের অবকাঠামো নড়বড়ে হয়ে যায়। গত ১৩ বছর ধরে ওই নড়বড়ে সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন ও চাওড়াসহ উপজেলার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ চলাচল করে আসছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নাসির হাওলাদার বলেন, “রাতে চিৎকার ও শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি সেতু ভেঙে অটোগাড়ি নদীতে পড়ে গেছে। পরে অটোগাড়ি ও যাত্রীদের কিনারে তুলে আনি। সেতুটি নির্মাণের সময় ঠিকাদার অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নির্মাণ করেছে। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই সেতু নড়বড়ে হয়ে পড়ে।”
আউয়াল নগর এলাকার বাসিন্দা মো.
সেতুর দুই তৃতীয়াংশ ভেঙে অটোরিকশা ও যাত্রীসহ নদীতে পড়ে যায়।
বরগুনায় তরমুজ চাষে বিখ্যাত চাওড়া ইউনিয়নের কৃষক মোজাম্মেল, জসিম উদ্দিন, আবুল কালাম, লাভলু মিয়াসহ একাধিক কৃষকরা বলেন, “রমজানে বাজার ধরার জন্য অগ্রিম তরমুজের চাষ করেছে এই এলাকার সব কৃষকরা। কিন্তু সেতুটি ভেঙে পড়ায় দুই ইউনিয়নের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বিকল্প পথে আমতলী মহাসড়কে যেতে চারগুণ পথ ঘুরতে হয়। এতে ভাড়া বেশি পড়ে, তরমুজের দামও বেড়ে যায়।”
কৃষকরা আরও বলেন, “২০২৪ সালের ২২ জুন হলদিয়াহাট সেতুর উপরে ১৬ জন বরযাত্রী নিয়ে মাইক্রোবাস সেতু ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। ওই সময় ১০ জন যাত্রী নিহত হন। এই দুটি সেতু ছিল দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম। জরুরি ভিত্তিতে সেতু নির্মাণ না করলে চরম লোকসানে পড়তে হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেতু না থাকায় দুই ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত স্থানটিতে গাডার সেতু নির্মাণের দাবি জানান তারা।
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ওই সেতুটি ঝুকিপুর্ণ ছিল। আগেই গাড়ি পারাপারে সকর্তীকরণ নোটিস এবং পিলার দেয়া ছিল।”
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, “খবর পেয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তরমুজ চাষিদের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা পরিকল্পনা করছি।”
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান খান বলেন, “সেতু নির্মাণের সময় অনিয়ম থাকতে পারে বলে মনে হয়েছে। এত অল্প দিনের মধ্যেই সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সমাধানের। কৃষকদের পাশাপাশি দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা ভোগান্তিতে পড়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”
ঢাকা/ইমরান/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ ই ইউন য ন র ৩০ হ জ র তরম জ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের দাবি অযৌক্তিক আখ্যা বাকৃবি শিক্ষার্থীদের
স্নাতক ডিগ্রিধারী কৃষিবিদদের অধিকার রক্ষা ও চলমান বৈষম্য নিরসনে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় কৃষি ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের আট দফার মধ্যে অযৌক্তিক দাবির প্রতিবাদ জানান তারা।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় কৃষিবিদ ঐক্য পরিষদের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। পরে মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবন ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা প্রাঙ্গণে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আমাদের এমন আন্দোলন কেনো করতে হবে? ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা অযৌক্তিক দাবি তুলেছেন। ২০২৪ পরবর্তী সময়ে আবারো কেনো সংরক্ষিত আসনের কথা উঠবে। তারা খামার বাড়ি দখল করার মতো সাহস পায় কোথা থেকে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন দেশে বিশৃংখলা না করতে পারে।
কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিএম মুজিবর রহমান বলেন, “কৃষি গ্রাজুয়েটদের যে সম্মান মর্যাদা, ডিপ্লোমাধারীদের দাবি একসঙ্গে মিলালে তা ক্ষুণ্ন হয়। যার যেমন সম্মান তাকে তেমনটা দেওয়া উচিত বলে মনে করি। এমনটি না হলে সর্বোপরি দেশের কৃষি খাতের ক্ষতি হবে।”
সবাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা বাকৃবি উপাচার্য বরাবর কৃষিবিদদের অধিকার রক্ষায় ছয় দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি জমা দেন।
বিএসসি কৃষিবিদদের ছয় দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. একে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “কৃষিবিদদের যৌক্তিক দাবির প্রতি সবসময় সমর্থন জানিয়ে এসেছি। ছয় দফা দাবি যথেষ্ঠ যৌক্তিক। আমি এর পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। যেকোনো সহযোগিতায় আমাকে তারা পাশে পাবে।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী