রংপুরে হিযবুত তাওহীদের অনুষ্ঠান নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা
Published: 25th, February 2025 GMT
রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টায় পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের পবিত্রঝাড় দোকানিপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মিজানুর রহমান বাদী হয়ে পীরগাছা থানায় এ মামলা করেন।
মামলায় হিযবুত তাওহীদের ৩৯ নেতা–কর্মী ও অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বাদী মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হিযবুত তাওহীদের লোকজন তাঁদের এলাকায় ইসলামবিরোধী কার্যক্রম করছিল। তাঁরা তাদের এগুলো না করতে বলেছিলেন। তারা বন্ধ করতে চেয়েও করেনি। এ ঘটনায় নামাজের পর প্রায় ৫৫০ মুসল্লি সেখানে যান। কিন্তু হিযবুত তাওহীদের সদস্যরা তাঁদের ওপর চড়াও হন ও হুমকি দেন। তাঁরা নিরস্ত্র মুসল্লিদের ওপর আক্রমণ করেন। পরে মুসল্লিরা ক্ষিপ্ত হয়ে সেখানে গেলে তাঁরা গুলি করে এবং অস্ত্র দিয়ে মুসল্লিদের কুপিয়ে জখম করে।
মামলার তথ্য নিশ্চিত করে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন। এ ঘটনায় হিযবুত তাওহীদের ৭ জন আটক আছে। ওসি জানান, ঘটনাস্থলে অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকার পরিবেশ শান্ত আছে।
হিযবুত তাওহীদের এক নেতাসহ অন্তত ছয়জনের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। সোমবার সকালে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছিদাম এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
সবাই ঈদের নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরছিল, আমি ফিরছিলাম কাফনে জড়ানো মাকে নিয়ে
বছর ঘুরে আবারও ঈদ এসেছে। চারদিকে সাজ সাজ রব। নতুন পোশাক, বাহারি খাবারের আয়োজন, হাসি-আনন্দে ভরে উঠেছে শহরগঞ্জ। এই আনন্দের ভিড়ে আমি যেন এক নিঃসঙ্গ দ্বীপের বাসিন্দা। ঈদ আসে, ঈদ যায়। আমার জীবনে ঈদের আনন্দ আর ফিরে আসে না।
স্মৃতিতে ভাসে চার বছর আগের ছবি। সময়ের হিসাবে সেটা ২০২১ সাল। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনা নামক মহামারির বিষবাষ্প। ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরে মাকে দেখে মনটা কেমন বিষণ্নতায় ভরে গেল। শরীরটা ভালো নেই, ক্লান্ত-শ্রান্ত মুখ, তবু হাসির আড়ালে সব লুকিয়ে রাখার চেষ্টা। জানতে পারলাম, ডাক্তার দেখানো হয়েছে, ওষুধ চলছে। কিন্তু ঈদের আগের দিন বিকেল থেকে হঠাৎই খারাপ হতে লাগল মায়ের শরীর। বুকের ব্যথায় ছটফট করছেন, নিশ্বাস নিতে পারছেন না ঠিকমতো। ভয় পেয়ে গেলাম। সময় নষ্ট না করে তড়িঘড়ি কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।
উৎসবের আমেজে শহর তখন অন্য রকম ব্যস্ত। কিন্তু আমার কাছে সবকিছুই বিভীষিকাময় লাগছিল। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করছি—কোথাও পর্যাপ্ত চিকিৎসা নেই, কোথাও চিকিৎসক নেই, দরকারি ওষুধ নেই! একজন ডাক্তার বললেন, ‘আগামীকাল ইসিজি করাতে হবে, এখন তো কিছুই খোলা নেই!’
মনে মনে ভয় পেলাম। ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘আগামীকাল! কিন্তু কাল আর যদি না আসে!’
আরও পড়ুনসামনের দিনগুলোতে তোমার ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ হয়ে থাকবেন মা-বাবাই০৫ মে ২০২৪রাত বাড়তে থাকল। আর আমি দেখতে পেলাম হাসপাতালের করিডরে একের পর এক মৃত্যু। এত কাছ থেকে কখনো মৃত্যু দেখিনি। আরও কটা নিশ্বাস নেবে বলে কত মানুষ লড়ছে। তখনো শক্ত করে আমার হাত ধরে ছিলেন মা। হয়তো বুঝতে পারছিলেন, আর বেশিক্ষণ নেই।
ভোর ৬টায় ডাক্তার এসে মৃদুস্বরে জানালেন—‘আপনার মা আর নেই!’
মা নেই! কী ভয়ংকর কথা! আমি বোবা হয়ে গেলাম। কাঁদতে পারছিলাম না। নিথর দেহটা কোলে নিয়ে বসেছিলাম চুপচাপ। ঈদের দিন, যখন অন্যরা ঈদের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে ফিরছিলেন, আমি তখন সাদা কাফনে মোড়ানো মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম।
ঈদের সেই সকালটা আমার কাছে একটা বিভীষিকা হয়ে আছে। বাড়ির উঠানে মাকে শুইয়ে রাখা হলো। আত্মীয়স্বজনরা বিলাপ করছে, কিন্তু আমার চোখে তখনো পানি আসেনি। কেবল মনে হচ্ছিল, মা এখনই চোখ খুলে বলবেন—‘বাবা, ঈদের নামাজ পড়েছিস?’
সেই থেকে ঈদ আমার কাছে কেবলই শূন্যতার নাম। নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে আর সালাম করার কেউ নেই। মায়ের হাতের রান্না নেই, ঈদের সকালে শখ করে লাল শাড়ি পরা মা নেই। এখন শুধু কবরের কাছে গিয়ে দাঁড়াই, চোখের পানি আটকে রাখার বৃথা চেষ্টা করি, আর বিড়বিড় করে পড়ি—‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা।’
শুনতে পাও মা?