মালদ্বীপে বসবাসরত ‘কাগজপত্রহীন’ প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ এবং বাংলাদেশ থেকে আরও জনশক্তি নিয়োগের জন্য সে দেশের সরকারকে বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিউনিন রশিদ সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ অনুরোধ করেন। খবর বাসসের

মালদ্বীপে মূলত পর্যটন ও মৎস্য শিল্পে কাজ করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি চিকিৎসকও কাজ করছেন।

হাইকমিশনার প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মালদ্বীপের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে চিকিৎসা শিক্ষায় পড়াশোনা করছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মালদ্বীপ থেকে আরও শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।

বাংলাদেশে প্রথম কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী হাইকমিশনারকে অভিনন্দন জানান প্রধান উপদেষ্টা। প্রফেসর ইউনূস আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশে তার (হাইকমিশনার) অবস্থানকালে দুদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

হাইকমিশনার শিউনিন রশিদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, ওষুধসহ বাংলাদেশ থেকে আমাদের আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মালদ্বীপের উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গি দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার আরও সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, কিছু বাংলাদেশি কোম্পানি মালদ্বীপে ব্যবসা শুরু করেছে এবং গত বছর মালদ্বীপে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

হাইকমিশনার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনে প্রচারণায় ভূমিকা রাখার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আপনার অঙ্গীকারে আমরা সত্যিই উৎসাহিত এবং মালদ্বীপ জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে চায়।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়াক্ফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিতেও রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে

ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত ওয়াক্ফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার আইনটির বিরুদ্ধে করা ৭৩টি পিটিশনের শুনানি শুরু হয়। পরে বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ সংশোধিত ওয়াক্ফ আইন স্থগিতের ঘোষণা দেন। বৃহস্পতিবার ছিল ওয়াক্ফ মামলায় সুপ্রিম শুনানি। আইন স্থগিতের পর সরকারের পক্ষ থেকে আদালতকে নিশ্চিত করা হয়, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত ওয়াক্ফ বোর্ডে নতুন নিয়োগ বা সম্পত্তির অবস্থা পরিবর্তন করা হবে না। পুরোনো ওয়াক্ফ এবং ‘ওয়াক্ফ বাই ইউজার’ সম্পত্তিও আগের মতো থাকবে। তবে আদালতের এই সিদ্ধান্তের পরও দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সরকার জানায়, নতুন আইনের ৯ ও ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো নিয়োগ করা হবে না। এই ধারাগুলো কাউন্সিল ও বোর্ডে সদস্য নিয়োগের বিষয়ে। সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতা মামলার জবাব দেওয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় চান, যা আদালত মঞ্জুর করেছেন। আদালত বলেছেন, আবেদনকারীরা সরকারের জবাবের পর পাঁচ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন।

সুপ্রিম কোর্ট ৭৩টি পিটিশনের মধ্যে পাঁচটি নিয়ে আলোচনা করবেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, ১০০ বা ২০০টি পিটিশন নিয়ে আলোচনা সম্ভব নয়। বাকিগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে বলে ধরা হবে।

‘ওয়াক্ফ বাই ইউজার’ এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধর্মীয় বা দানের কাজে ব্যবহৃত সম্পত্তিকে ওয়াক্ফ হিসেবে দাবি করতে পারে, এমনকি কাগজপত্র না থাকলেও। নতুন আইনে বলা হয়েছে, বিরোধপূর্ণ বা সরকারি জমিতে এটি প্রযোজ্য হবে না। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। 

তিনি বলেন, আমরা শুনেছি, দিল্লি হাইকোর্ট ওয়াক্ফ জমির ওপর। সব ওয়াক্ফ বাই ইউজার ভুল নয়। তিনি জানান, ১৩০০, ১৪০০ বা ১৫০০ শতাব্দীর মসজিদের জন্য কাগজপত্র পাওয়া অসম্ভব। তিনি সরকারকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কি বলছেন, আদালতের রায়ে প্রতিষ্ঠিত ওয়াক্ফ এখন বাতিল হবে? আইন দিয়ে আদালতের রায় বাতিল করা যায় না।’

আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, ‘হাজার বছর আগে ওয়াক্ফ তৈরি হলে এখন কাগজপত্র চাওয়া সমস্যা।’ আইনজীবী অভিষেক সিংভি জানান, ভারতের ৮ লাখ ওয়াক্ফ সম্পত্তির মধ্যে ৪ লাখই ওয়াক্ফ বাই ইউজার।

নতুন আইনে কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ কাউন্সিল ও রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার বিধান আছে। এতে মুসলিম সদস্যের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। কাউন্সিলে ২২ জনের মধ্যে আটজন এবং রাজ্য বোর্ডে ১১ জনের মধ্যে চারজন মুসলিম থাকবে। এই বিধান মুসলিম সম্প্রদায় ও বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার ২৭৪ জন: মুর্শিদাবাদে ওয়াক্ফ আইন নিয়ে সাম্প্রতিক অশান্তি ও হিংসার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত এনজামুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতার ভবানী ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে এ তথ্য জানান এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। তিনি জানান, এই ঘটনার তদন্তে বর্তমানে সিট-এ সদস্য সংখ্যা ১১। এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন মুর্শিদাবাদ রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ ওয়াকার রেজা। বিগত কয়েকদিন ধরে জঙ্গিপুর মহকুমার শামসেরগঞ্জ থানা থেকে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন তিনি।

সাংবাদিকদের সামনে এডিজি জানান, অশান্তির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬০টি এফআইআর দায়ের হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোট ২৭৪ জনকে। এই প্রসঙ্গে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা হলো- জাফরাবাদে বাবা ও ছেলেকে নৃশংসভাবে খুনের মামলায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত এনজামুল হককে গ্রেপ্তার করেছে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। সুতি এলাকা থেকে বুধবার রাতে তাকে ধরা হয়। পেশায় রাজমিস্ত্রি, এনজামুল সুলিপাড়ার বাসিন্দা।

এডিজি জানান, নিহত হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়। ওই মামলায় এরই মধ্যে কালু ও দিলাবর নাদাব নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এনজামুল বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙার চেষ্টা করে প্রমাণ লোপাট করতে চেয়েছিল। তদন্তে উঠে এসেছে, এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড সে-ই।

অশান্ত মুর্শিদাবাদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এডিজি আশ্বস্ত করে বলেন, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। প্রায় ৭০ শতাংশ দোকান ও বাজার ইতোমধ্যেই খুলে গেছে। আমরা আশাবাদী শনিবারের মধ্যে বাকি দোকানগুলোও খুলে যাবে।

এদিন বিকেল পর্যন্ত ৮৫ জন ঘরছাড়া মানুষকে পুলিশি নিরাপত্তায় বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি। ধুলিয়ান, সুতিসহ বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় মোতায়েন রয়েছে রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চমূল্যের পার্সেল পাঠানো স্থগিত করল ডিএইচএল
  • শমিতকে নিয়ে নতুন সুখবর
  • সারাদিন কাটল মর্গের সামনে
  • ওয়াক্ফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিতেও রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে ভারতে
  • ওয়াক্ফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিতেও রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে