টাঙ্গাইলের ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কে গত ১০ দিনে তিনটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার ভোরে ওই সড়কের লক্ষণের বাধা এলাকায় ডাকাতদের কবলে পড়ে শিক্ষা সফরের চারটি স্কুলবাস। ডাকাতরা বাস থেকে লুট করেছে মালপত্র।

ময়মনসিংহ বিভাগের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সোয়াইতপুর উচ্চ বিদ্যালয় ঘাটাইলের প্রায় সীমানা সংলগ্ন। মঙ্গলবার ভোরে চারটি বাস নিয়ে ওই স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক শিক্ষা সফরের জন্য রওনা দেন নাটোরের গ্রীনভ্যালি পার্কের উদ্দেশ্যে। ভোর সাড়ে চারটার দিকে বাস চারটি ঘাটাইল উপজেলার ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কের সাগরদীঘি ইউনিয়নের লক্ষণের বাধা এলাকায় পৌঁছলে তারা ডাকাত দলের কবলে পড়েন। 

সামনের বাসে ছিলেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান। সমকালকে তিনি বলেন, ‘রাতেরবেলা বাস চলছে দ্রুত গতিতে। হঠাৎ তিনিসহ অন্যরা খেয়াল করেন সড়কের মাঝ বরাবর গাছের গুঁড়ি। তিনি বুঝে ফেলেন এই কাজ ডাকাতদের। সতর্ক করেন সবাইকে। বন্ধ করে দেওয়া হয় গাড়ির জানালা ও গেইট। কিছু বুঝে উঠার আগেই ১০-১২ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঘাত শুরু করে গাড়িতে। ডাকাতরা পেছনের গাড়ি থেকে তাদের মালামাল লুট করা শুরু করে। এরই মধ্যে তিনি ফোন করেন ৯৯৯ নম্বরে। অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে। ততক্ষণে তিনটি গাড়ির যাত্রীদের থেকে মালামাল লুট করা শেষ।’ 

খলিলুর রহমান আরও বলেন, ‘ডাকাতরা নগদ টাকা নিয়ে গেছে দেড় লাখ। স্বর্ণ দেড় ভরি। স্মার্টফোন ১০টা। এ ঘটনায় মারধরের শিকার হয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর সাখাওয়াত হোসাইন রবিন (২৫) ও অভিাবক শহিদুল্লাহ তালুকদার (৩৯)। 

সাখাওয়াত হোসাইন রবিন বলেন, ‘আমি ছিলাম দুই নম্বর গাড়িতে। ওই গাড়িতে ছিল শুধু ছাত্রী। ডাকাতরা আমার কাছে থেকে মোবাইল নেওয়ার পর যখন ছাত্রীদের দিকে যাচ্ছিল তখন আমি বাধা দিই। এর ফলে তারা আমাকে দায়ের উল্টো পিঠ দিয়ে আঘাত করে।’ 

ডাকাতদের অস্ত্র ও ভয়ঙ্কর রূপ দেখে গাড়িতে জ্ঞান হারান কৃষি বিষয়ের শিক্ষক আবুল কালাম (৫২)। 

সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সিনথিয়া আক্তার জানায়, ভয়ে সে অনেক কেঁদেছে। এখনও তার ভয় দূর হয়নি। 

ডাকাতির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, মঙ্গলবার ভোরে ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কে গাছ ফেলে শিক্ষা সফরে যাওয়ার পথে চারটি স্কুলবাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যতটুকু জানতে পেরেছি সাতটি মোবাইল ও দুই হাজার ৭০০ টাকা নিয়েছে ডাকাতরা। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এলাকার লোকদের নিয়ে বৈঠক করেছি। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য লিয়াকত হোসেন বলেন, মাঝে মধ্যেই লক্ষণের বাধা ওইস্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গত বুধবারও একই স্থানে ডাকাতি হয়েছে। 

মালিরচালা গ্রামের লিটন ভূইয়া বলেন, ‘সড়কে গাছ ফেলে একই কায়দায় বুধবারের ডাকাতির ঘটনায় মোটরসাইকেল ও কাঁচামালের ট্রাক আটকে তাদের কাছ থেকে সবকিছু লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা।’ 

ঘাটাইলে একই সড়কে ১০ দিনে তিন ডাকাতি: এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত দেড়টার দিকে একই সড়কের সন্ধানপুর ইউনিয়নের ফকিরচালা এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদের কবলে পড়ে ১০টি ট্রাক, সিএনজি ও মোটরসাইকেল। ডাকাতরা চালকদের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ স্মার্টফোন লুট করে নিয়ে যায়। ভাঙচুর করা হয় যানবাহন। চালকদের করা হয় মারধর। এ নিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি ‘এখানে কী হচ্ছে বুঝছ না? যা আছে বের কর’ শিরোনামে সমকালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

গত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এক মাসে ঘাটাইলে পাঁচ বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা ওই পাঁচবাড়ি থেকে নগদ টাকাসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে ‘রাত নামলেই ডাকাত আতঙ্ক’ শিরোনামে ১৯ ডিসেম্বর সমকালে আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে সাগরদীঘি পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে ডাকাতি। গত ১০ দিনে সড়কের একই স্থানে তিনটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতের দল লুট করে নিয়ে যায় চালকসহ যাত্রীদের মামলপত্র। শুধু তাই নয়, মারধরের শিকার হয় চালক ও যাত্রী। ভাঙচুর করা হয় যানবাহন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড ক ত র ঘটন ল ল ট কর স গরদ ঘ সড়ক র র কবল একই স

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে ৭২ ঘণ্টা ধরে সুড়ঙ্গে আটকা ৮ শ্রমিক

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গানার নাগারকুর্নুল জেলায় ধসে পড়া একটি সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৮ শ্রমিককে উদ্ধার প্রচেষ্টা চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আটকে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলে কাদামাটির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় খনন কাজ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

সোমবার সুড়ঙ্গের ভেতরে প্রবেশ করা বিশেষজ্ঞ দল জানিয়েছে, সেখানে কাদার স্তর আরও এক মিটার বেড়েছে এবং সুড়ঙ্গের খাঁড়ির দিকে আরও কাদা প্রবাহিত হচ্ছে। প্রচুর কাদা জমে থাকায় কেন্দ্রস্থলে পৌঁছনোই কঠিন হয়ে পড়েছে।

আরো পড়ুন:

স্যুটকেসে শাশুড়ির খণ্ডিত দেহ, নদীতে ভাসানোর আগে আটক

ভূমিকম্পে কাঁপল পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা

তবে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যেতে বিকল্প কৌশল হিসেবে পাশ দিয়ে নতুন পথ বের করে প্রবেশের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারি যন্ত্র দিয়ে খননের ফলে সুড়ঙ্গের কাঠামোগত স্থায়িত্ব ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

এতে আটকে পড়া শ্রমিকদের পাশাপাশি উদ্ধারকর্মীদের জীবনও বিপদের মুখে পড়তে পারে। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে অভিযান চালানো হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ ক্রিস কুপার জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত, তাই ভারি যন্ত্র দিয়ে খনন করলে আরো বিপদ হতে পারে।

সুড়ঙ্গে প্রতি মিনিটে ৩,২০০ লিটার পানি ঢুকছে। ফলে বালি, পাথর ও ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে মিশে আরো কাদায় পরিণত হচ্ছে। তবে সুড়ঙ্গ থেকে পানি বের করার কাজ চলছে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার তেলেঙ্গানার নাগারকুর্নুল জেলায় সেচ প্রকল্পের জন্য সুড়ঙ্গ খনন করতে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হন শ্রমিকরা। সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময় তারা পৌঁছে যান ১৪ কিলোমিটার গভীরে, আর তখনই আকস্মিকভাবে ধসে পড়ে সুড়ঙ্গের ছাদ। বেশিরভাগ শ্রমিক বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলেও আটকে পড়েন ৮ জন। তাদের সঙ্গে উদ্ধারকারীরা এখনো পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। 

তেলাঙ্গানার মন্ত্রী জুপল্লি কৃষ্ণ রাও সোমবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, আটকে পড়া শ্রমিকদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। তিনি বলেন, সুড়ঙ্গের ভেতরে অনেক উঁচু পর্যন্ত কাদার স্তর জমে রয়েছে। যার ফলে হাঁটাচলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উদ্ধারকারীরা চলাচলের জন্য রাবার টিউব এবং কাঠের কাঠামো ব্যবহার করছেন। 

তিনি আরো জানান, ২০২৩ সালে উত্তরাখণ্ডের সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটকে পড়া নির্মাণ শ্রমিকদের উদ্ধারকাজে যে দল ছিল তারাও ইতিমধ্যে যোগ দিয়েছেন উদ্ধার কাজে। এই ঘটনায় মোট ৯টি জাতীয় সংস্থা উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে।

তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি প্রতি মূহুর্তে পুরো ঘটনাটি তদারকি করছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ