বসন্তের রঙিন উৎসবে প্রাণবন্ত লেক সিটি কনকর্ড
Published: 25th, February 2025 GMT
বসন্ত এসে গেছে, প্রাণ ফিরে পেয়েছে লেক সিটি কনকর্ড প্রাঙ্গণ। বসন্তের বর্ণাঢ্য আয়োজন নিয়ে রাজধানীর খিলক্ষেতে অবস্থিত ঢাকার প্রথম স্যাটেলাইট টাউন-লেক সিটি কনকর্ডে গত ২১-২২ ফেব্রুয়ারি কনকর্ড গ্রুপ আয়োজন করেছিল দুই দিনব্যাপী ‘কনকর্ড বসন্ত উৎসব ১৪৩১’।
উৎসবে ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অংশগ্রহণে বর্ণিল আয়োজন।
বারিধারা থেকে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত এই পরিবেশবান্ধব আবাসিক এলাকা সম্পূর্ণভাবে সবুজ ইট ও ব্লক ব্যবহার করে নির্মিত। রয়েছে ৩০০ ফুট প্রশস্ত সংযোগ সড়ক এবং এখানকার বাসিন্দাদের জন্য একটি দূষণমুক্ত জীবন নিশ্চিত করতে রয়েছে প্রায় ৬০% সুপরিসর উন্মুক্ত সবুজে ঘেরা এলাকা। লেক সিটি কনকর্ডের বাসিন্দাদের জন্য আয়োজিত ঋতু পরিবর্তনের এই বসন্ত উৎসবে ছিল শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সংগীত ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং নানান পসরা সাজানো বিপণি। স্থানীয় বাসিন্দারা আনন্দচিত্তে উপভোগ করেছেন ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত ও বাউল পরিবেশনা। সুস্বাদু বাহারি খাবারের আয়োজন নিয়ে উৎসবে ছিল মুখরোচক খাবারের স্টল, যেখানে দর্শনার্থীরা সরাসরি খাবার প্রস্তুতির প্রক্রিয়া দেখেছেন, যা উৎসব প্রেমীদের জন্য অনন্য এক অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।
প্রথম দিন, ২১ ফেব্রুয়ারি, সকালেই শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হয় উৎসবের শুভ সূচনা। এরপর ছিল ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সন্ধ্যায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম দিনের আয়োজন।
বসন্ত উদযাপনের দ্বিতীয় দিন, ২২ ফেব্রুয়ারি, একইভাবে জমকালো আয়োজনে পরিপূর্ণ ছিল সারাদিন। ছিল মনোমুগ্ধকর সংগীত পরিবেশনা, র্যাফেল ড্র ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। উৎসবের এই আনন্দঘন মুহূর্তে দর্শনার্থীরা উপভোগ করেছেন নাচ, গান ও বিনোদনমূলক বিভিন্ন পরিবেশনা।
নিজস্ব স্কুল, মসজিদ, সুপারমার্কেট, জিম এবং আরো অনেক সুবিধাসহ লেক সিটি কনকর্ড দীর্ঘদিন ধরে একটি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও স্বাবলম্বী আবাসিক কমিউনিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এ ধরনের বার্ষিক উৎসবগুলো কমিউনিটিতে যোগ করে নতুন মাত্রা এবং বাসিন্দাদের জন্য দৈনন্দিন রুটিনের বাইরে এসে আনন্দ উপভোগ করার দারুণ সুযোগ তৈরি করে। বহুল প্রতীক্ষিত এই উৎসবকে ঘিরে সবার মাঝে ফিরে এসেছে প্রাণের সঞ্চার-উৎসবের আমেজ। লেক সিটি কনকর্ডের সকল বাসিন্দা ও দর্শনার্থীদের সক্রিয় ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আয়োজনটিকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা। কনকর্ড বসন্ত উৎসব ১৪৩১ শুধু একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই নয়, এটি একটি প্রাণের মিলনমেলাও বটে।
ঢাকা/সাজ্জাদ/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জন য বসন ত
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানদের ফিরিয়ে দিন হাত জোড় করছি
‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে।
আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।
এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনী। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।