গাইবান্ধায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি
Published: 25th, February 2025 GMT
গাইবান্ধায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শহরে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের পৌরপার্কের শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে গাইবান্ধা সরকারি কলেজে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে কর্মসূচি ঘোষণা করে গাইবান্ধা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা।
দুপুরে কলেজ মাঠে আন্দোলনকারীরা জানান, আজ বেলা ১টা থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব আসামি গ্রেপ্তার করতে হবে, না হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাইবান্ধা জেলা কমিটির আহ্বায়ক মাসুদ মিয়া, সদস্যসচিব বায়েজিদ বোস্তামী, মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা, মুখপাত্র জাহিদ হাসান, যুগ্ম আহবায়ক আতিক শাহরিয়ার, যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান, সংগঠক অতনু সাহা, ফুয়াদ খান, মেহেজাবিন জীম, সৌরভ হাসান, নাগরিক কমিটি গাইবান্ধা সদর ও সাদুল্লাপুর উপজেলার সংগঠক রাশেদুল ইসলাম এবং এ আর আতিক প্রমুখ।
এই কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে কলেজটির শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা।
গাইবান্ধা শহরের স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ মাঠে মাসব্যাপী আয়োজিত বাণিজ্য মেলার শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। এদিন রাত ১০টার কিছু আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির নেতা শরিফুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান এবং শেফাউর রহমান মেলায় বেড়াতে যান। এ সময় একটি দোকানে এক নারীকে হেনস্তা করা হচ্ছিল। এতে শরিফুল ইসলামসহ ছাত্রনেতারা বাধা দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে একদল দুর্বৃত্ত পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান এবং যুগ্ম সদস্যসচিব শেফাউর রহমান আহত হন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে আহত শরিফুল ও শেফাউর এখনো চিকিৎসাধীন আছেন। মেহেদি হাসানকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল রাত ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত গাইবান্ধা সদর থানা কার্যালয় ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শতাধিক নেতা–কর্মী। তাঁরা থানার সামনে বসে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ ঘটনায় গাইবান্ধা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম সদস্যসচিব মো.
আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে গাইবান্ধা সদর থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম তালুকদার বলেন, গতকাল রাতেই মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলার পরপরই অভিযান চালিয়ে হামলার ঘটনায় জড়িত সুমন, কিরণ ও নাজমুল নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়কে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে: আলী রীয়াজ
গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত বিজয়কে বিভিন্নভাবে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, এ দেশের ইতিহাসে গণতন্ত্রের আকাঙ্খা বারবার পর্যদুস্ত হয়ে একটি ব্যক্তিতান্ত্রিক শাসনে পরিণত হয়। গণতন্ত্রের সংগ্রামের মাধ্যমে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে বিভিন্নভাবে সে বিজয়কে ভূলন্ঠিত করা হয়েছে।
শনিবার ঢাকায় সংসদ ভবনের এল ডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা পবন চৌধুরীর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। বৈঠকে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদ শাসনকে পরাভূত করে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করতে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে দাবি করে দলটির উদ্দেশে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দীর্ঘদিনের যে ফ্যাসিবাদী শাসন জগদ্দল পাথরের মতো আমাদের বুকের উপর বসে ছিল, তার বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে লড়াই, অকুতোভয় সংগ্রাম এবং আপনাদের সাথীদের প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সে শাসনকে পরাস্ত করতে পেরেছেন। একটি ফ্যাসিবাদী শাসনকে পলায়ন করতে বাধ্য করেছেন যা বাংলাদেশকে রাষ্ট্র সংস্কারের দিকে অগ্রসর করেছে। তিনি বলেন, এখন সকলে মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সময় এসেছে। ফ্যাসিবাদ যেন আর কখনও এ দেশে ফিরে না আসে, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন স্থায়ী রূপ নেয়, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং সব রকমের নিপীড়ন যেন আমরা প্রতিহত করতে পারি।
আলোচনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলে দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ছাড়াও ছিলেন সামান্তা শারমিন, হাসনাত আব্দুল্লাহ, নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সারোয়ার তুষার, জাভেদ রাসিন ও নাহিদা সারোয়ার নিভা।
উল্লেখ্য, প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলো স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৫টি দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে। ২৩ মার্চ জাতীয় নাগরিক পার্টি কমিশন বরাবর তাদের মতামত জমা দেয়। সে প্রেক্ষিতে দলটির সঙ্গে আজ আলোচনায় বসে কমিশন। দিনব্যাপী এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।