লাথি মেরে শহীদ মিনার ভাঙার শাস্তি প্রতিদিন স্কুল পরিষ্কার
Published: 25th, February 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুরে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কলাগাছে দিয়ে তৈরি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর সেটি লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলে গাজীপুর মডেল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী। পরে এ নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেখানেই নেটিজেনরা তীব্র সমালোচনার করেন। এ নিয়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীকে শাস্তিস্বরূপ শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। কার্যক্রমে চলবে, যতদিন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট না হবে ততদিন।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গাজীপুর মডেল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ দুই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবককে নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ডেকে আনে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, ‘‘কিছু না বুঝেই ওই দুই শিক্ষার্থী লাথি মেরে শহীদ মিনার ভেঙে নিজেদের ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে বলে জানিয়েছে। এ কারণে তারা অনুতপ্ত, ক্ষমাও চেয়েছে। তাই তাদের শাস্তি হিসেবে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানের সমস্ত শ্রেণিকক্ষ, বেঞ্চ পরিষ্কার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের এ পরিষ্কার কার্যক্রমে যতদিন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট না হবে, ততদিন চালিয়ে যেতে হবে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘ওই দুই শিক্ষার্থীর বয়স কম হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাই স্কুলের পক্ষ থেকে তাদের ওপর এই মানবিক শাস্তি আরোপ করা হয়।’’
প্রসঙ্গত, গাজীপুর মডেল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে স্থায়ী কোনো শহীদ মিনার নেই। তাই প্রতি বছর কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
এ বছরও কলাগাছের তৈরি শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় উপজেলার মডেল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্তৃপক্ষ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ওই প্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষার্থী অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে লাথি মেরে শহীদ মিনার ভেঙে ফেলে।
এই দৃশ্য ভিডিও করে নিজেরাই গত রবিবার ফেসবুকে পোস্ট করে। পরে ২৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও অনেকে নিজেদের ওয়ালে পোস্ট করে নিন্দা জানায়। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় নেটিজেনদের তীব্র সমালোচনা।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্কুল ড্রেস পরা দুই শিক্ষার্থী মাঠের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। এক পর্যায়ে তারা দুজন মিলে একসঙ্গে দৌড়ে এসে অস্থায়ীভাবে কলাগাছের তৈরি শহীদ মিনারে লাথি দেয়।
স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা শফিকুল ইসলাম জনী বলেন, ‘‘আমরা এই ঘটনায় ব্যথিত হয়েছি। বাঙালির আবেগ-অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। আমরা ওই দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছি। তিন কর্মদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।’’
ঢাকা/রফিক/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ষ ক র কল গ ছ
এছাড়াও পড়ুন:
আমরণ অনশনে চবির চারুকলার শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে সোমবার থেকে আন্দোলনে নেমেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। দিনভর বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের পর বিকেল চারটা থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন বিভাগটির নয় শিক্ষার্থী।
তারা হলেন, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম; ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নূর ইকবাল সানি; ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শাহরিয়ার হাসান সোহেল; ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ইসরাত জাহান ইয়ামিন, মালিহা চৌধুরী, ইসরাত জাহান, নুসরাত জাহান ইপা; ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের তরিকুল ইসলাম মাহী ও মাহমুদুল ইসলাম মিনহাজ।
এর আগে সোমবার বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে দুপুর ১২ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দিনভর এই আন্দোলন চলে। এসময় চারুকলার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও মানববন্ধনে যোগ দেন। পরে বিকেল চারটায় প্রেস ব্রিফিং এর পর আমরণ অনশনে বসেন নয় শিক্ষার্থী।
মানববন্ধনে চারুকলার শিক্ষার্থী আল মাশরুল ফাহিম বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছিল চলমান এপ্রিল মাস থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু করবো। কিন্ত আমরা এখনও মূল ক্যাম্পাসে আসতে পারিনি।’
ইনস্টিটিউটের আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের দায়ী করে তিনি বলেন, 'চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে আনতে আমাদের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা ভেটো দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ফেরত আসলে তাদের অনৈতিক অর্থ উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে বলে তারা ফেরত আসতে চাননা।'
আমরণ অনশন থেকে নুসরাত জাহান ইপা বলেন,‘যতক্ষণ পর্যন্ত জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে চারুকলা ক্যাম্পাসে প্রত্যাবর্তনের প্রজ্ঞাপন জারি হবে না ততক্ষণ আমরা অনশন চালিয়ে যাবো।’
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটকে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান ও উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের যাত্রা ১৯৭০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। এরপর ২০১০ সালে নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক করে গঠন করা হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরীর মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে এখন এর অবস্থান। আন্দোলনের মুখে ২০২৩ সালের ০২ ফেব্রুয়ারি চারুকলা ইনস্টিটিউটকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর ক্লাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। এরপর জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ডিসেম্বরে আবারও আন্দোলন নামেন তারা। গত ১২ ডিসেম্বর চলতি বছরের মার্চের মধ্যেই চারুকলা ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান। তবে এই প্রক্রিয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় আবারও আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।