সরকারের খরচ কমানোর মাস্কের কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিচারক
Published: 25th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যে পন্থায় ইলন মাস্কের তথাকথিত ‘ডিপার্টমেন্ট অব ইফিসিয়েন্সি (ডিওজিই)’ গঠন ও পরিচালনা করছে, তা সংবিধান লঙ্ঘন করে থাকতে পারে বলে ওয়াশিংটনের একজন ফেডারেল বিচারক মন্তব্য করেছেন।
গতকাল সোমবার দেওয়া এক আদেশে এ সন্দেহ প্রকাশ করেন বিচারক কলিন কলার-কোটলে। কিন্তু তাঁর এমন সন্দেহ প্রকাশ করার বিষয়টি বাধ্যতামূলকভাবে মানা কোনো আদেশের অংশ নয়। তবে বিচারকের এ মন্তব্যে মাস্কের বিভাগ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাঁর এ বিভাগ ‘ইউএস ডিওজিই সার্ভিস’ নামেও পরিচিত।
আমার কাছে যে সীমিত নথিপত্র এসেছে, তার ভিত্তিতে ইউএসডিএস-এর কাঠামো ও কার্যক্রমের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।কলিন কলার-কোটলে, ওয়াশিংটনের ফেডারেল বিচারকবিচারক তাঁর আদেশে বলেন, ‘আমার কাছে যে সীমিত নথিপত্র এসেছে, তার ভিত্তিতে ইউএসডিএসের কাঠামো ও কার্যক্রমের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।’ ওয়াশিংটনের ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে এক শুনানিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিচারক সুনির্দিষ্টভাবে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে মাস্কের এই বিভাগ সংবিধানের নিয়োগসংক্রান্ত ধারা লঙ্ঘন করেছে। কেননা, ফেডারেল সংস্থার প্রধানদের প্রেসিডেন্টের মনোনয়ন ও তাঁদের নিয়োগ সিনেটের অনুমোদন পেতে হয়। মাস্ক না মনোনয়ন পেয়েছেন, না সিনেটের অনুমোদন।
যুক্তরাষ্ট্রের দুটি শ্রমিক ইউনিয়ন এবং লাখ লাখ অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর প্রতিনিধিত্বকারী একটি গ্রুপের করা এক মামলার শুনানিতে বিচারক কলার-কোটলে মাস্কের বিভাগের কার্যক্রম নিয়ে এ কথা বলেন। মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রে মাস্কের দলের প্রবেশাধিকার বন্ধে আদালতের স্থগিতাদেশ চেয়ে এ মামলা করা হয়।
বিচারক সরকারি কৌঁসুলির কাছে জানতে চান, ডিওজিই বিভাগে ইলন মাস্কের পদবি কী। জবাবে তিনি বলেন, মাস্ক এটির কোনো প্রশাসক নন কিংবা কোনো কর্মীও নন। তাঁর এ বক্তব্য মাস্কের দলের কার্যক্রম নিয়ে করা পৃথক একটি মামলায় হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তার দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।গত সপ্তাহে ম্যানহাটানের একজন ফেডারেল বিচারক একই রকম একটি আইনি বিষয়ে আদেশ দেন। তাতে ট্রেজারি বিভাগের পেমেন্ট ও ডেটা ব্যবস্থায় মাস্কের ব্যয়হ্রাস দলের পুনরায় প্রবেশের সুযোগ পৃথক একটি মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাতিল করা হয়। এ মামলায় বলা হয়, ট্রেজারি বিভাগের ওই সব নথিপত্রে ট্রাম্পের দলের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া অবৈধ।
বিচারকের এ মন্তব্যে মাস্কের বিভাগ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাঁর এ বিভাগ ‘ইউএস ডিওজিই সার্ভিস’ নামেও পরিচিত।ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের খরচ কমানো ও ফেডারেল কর্মীদের ব্যাপকভাবে ছাঁটাইয়ে মাস্ক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা বেশ কিছু আইনি পদক্ষেপের মুখে পড়েছে। উল্লেখিত মামলাগুলো এসব আইনি চ্যালেঞ্জের অংশ।
মামলাগুলোর কোনো কোনোটিতে মাস্কের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক বৈধতার প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তবে কলার-কোটলেই হলেন প্রথম কোনো ফেডারেল বিচারক, যিনি স্পর্শকাতর এই ইস্যুতে কেমন রায় দিতে পারেন, সেই ইঙ্গিত দিলেন।
আরও পড়ুনআরও প্রায় ১০ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করলেন ট্রাম্প ও মাস্ক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫মাস্কের বিভাগ যেভাবে কাজ করছে, তা নিয়ে নিজের গুরুতর উদ্বেগ থাকার ইঙ্গিতও দিয়েছেন এ বিচারক। ইউএস ডিওজিই সার্ভিসের দায়িত্বে প্রকৃতপক্ষে কে এবং এটির কার্যক্রমে মাস্কের ভূমিকাই-বা কী, সেসব নিয়ে অমীমাংসিত নানা প্রশ্নের জন্ম থেকে বিচারক এ উদ্বেগ জানালেন।
শুনানিতে সরকারি কৌঁসুলিদের একজন ব্রাডলি হাম্ফরের কাছে বিভাগটির প্রশাসক কে, তা একাধিকবার জানতে চান বিচারক। কিন্তু হাম্ফরে জবাব দিতে পারেননি।
বিচারক কলার-কোটলে কৌঁসুলির কাছে আরও জানতে চান, ওই বিভাগে ইলন মাস্কের পদবি কী। জবাবে হাম্ফরে বলেন, মাস্ক এটির কোনো প্রশাসক নন কিংবা কোনো কর্মীও নন। তাঁর এ বক্তব্য মাস্কের দলের কার্যক্রম নিয়ে করা পৃথক একটি মামলায় হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তার দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
আরও পড়ুনট্রাম্পের নির্দেশে ৫ হাজার ৪০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা পেন্টাগনের২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫মাস্কের প্রকৃত কাজ কী, সে বিষয়েও বিচারক জানতে চান। জবাবে সরকারি কৌঁসুলি বলেন, ‘মাস্ক প্রেসিডেন্টের একজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা। এর বাইরে এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’ এমন জবাবে বিচারক দৃশ্যত বিরক্ত হন এবং ডিওজিইয়ের কাঠামো ও ক্ষমতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন এবার বেসামরিক বিমান চলাচল পরিবহনের কর্মীদের ছাঁটাই শুরু করছেন ট্রাম্প১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুন৫০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা সিআইএর২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র একজন র দল র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাল্যবিয়ে: সক্ষমতার বিলুপ্তি, সম্ভাবনার অপমৃত্যু
বাংলাদেশে ২০ থেকে ২৪ বয়সকালের প্রতি দু’জন মেয়ের মধ্যে একজনকে ১৮ বছরের আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে। এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘ শিশু তহবিলের এক প্রতিবেদনে। সে প্রতিবেদনের উপাত্ত বলে, ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে মেয়েদের মধ্যে বাল্যবিয়ের আপাতন ছিল ৫১ শতাংশ; প্রতি ২ জনে ১ জন। আসলে ১৮ বছরের আগে যে কোনো বালিকাই অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুও বটে। সুতরাং এ উপাত্ত সত্যিকার অর্থে শিশুবিয়ের তথ্যবাহীও বটে।
কিন্তু উপর্যুক্ত সামগ্রিক তথ্যের পরতে পরতে আরও তথ্য আছে। যেমন মেয়েদের বাল্যবিয়েতে বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম এবং এশিয়ার মধ্যে প্রথম। বাল্যবিয়ের সঙ্গে বাল্যগর্ভধারণের নিবিড় সম্পর্ক আছে। ১৮ বছরে পৌঁছুবার আগে ২৪ শতাংশ মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। গত বছর ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সকালের মধ্যকার কিশোরীদের মধ্যে ২৮ শতাংশ মেয়ে সঙ্গীসম্পৃক্ত শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার।
প্রায় ৫৩ শতাংশ কিশোরীরই তাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপরে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশের কিশোরদের তুলনায় দ্বিগুণ সংখ্যক কিশোরী শিক্ষা বলয় থেকে ঝরে পড়ে। বাংলাদেশে ২ শতাংশেরও কম কিশোরীর তথ্যপ্রযুক্তি-সাক্ষরতা আছে।
বাল্যবিয়ের কুফল সর্বজনবিদিত। প্রথমত, বিয়ে এবং সন্তান ধারণের জন্য যে শারীরিক পরিপক্বতা প্রয়োজন, একজন কিশোরীর তা থাকে না। ফলে অল্প বয়সে বিয়ে ও গর্ভধারণের কারণে একজন কিশোরী বিরাট স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে। ভগ্নস্বাস্থ্য, হ্রস্ব আয়ু সেই স্বাস্থ্যঝুঁকির অংশ। সেই সঙ্গে কিশোরীটি মা হলে তার সন্তানও যেমন ভঙ্গুর স্বাস্থ্য নিয়ে জন্মাতে পারে, তেমনি শিশুকে যথাযথভাবে বড় করার মতো প্রাজ্ঞতা একজন কিশোরী মায়ের থাকে না।
একইভাবে বাল্যবিয়ের কারণে বহু বালিকার শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়। বহু মেধাবী এবং শিক্ষায় উৎসাহী মেয়েকে বিয়ের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়। শিক্ষা একটি সম্ভাবনাময় জীবনের পথ তৈরি করে দেয়। সেই পথ রুদ্ধ হয়ে গেলে সে সম্ভাবনাও অপসৃত হয়। মায়ের শিক্ষার ঘাটতির একটি আন্তঃপ্রাজন্মিক প্রভাবও আছে। একজন শিক্ষিত মা সন্তানের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। শিক্ষার সুযোগ নষ্ট হওয়া বাল্যবিয়ের একজন মা সে কাজটি করতে পারে না।
অল্প বয়সে বিয়ে হওয়া মেয়েরা তাদের স্বাধিকার, কণ্ঠস্বরের স্বাধীনতা, পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের মতামত প্রকাশে অনেক সময়েই দ্বিধাগ্রস্ত হয় শুধু বয়সের কারণে। অল্পবয়স্ক বলে ঘরের মধ্যে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণেও তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বহু সময়ে দেখা গেছে, তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সিদ্ধান্তের ওপরেও তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে বড় সীমিত। সবটা মিলিয়ে মেয়েদের জন্য বহু ক্ষেত্রেই বাল্যবিয়ে হচ্ছে সক্ষমতার বিলুপ্তি এবং সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
এত নেতিবাচক বিষয়ের অস্তিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে এবং এটি বন্ধের ব্যাপারে প্রতিরোধক আইন থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে কেন হয়?
এর প্রথম কারণটি হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। একটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের জীবনের বহু বাস্তবতাই নির্ণীত হয় পুরুষের চিন্তা ও কর্মকাণ্ড দিয়ে। বাল্যবিয়েও তেমন এক ঘটনা। বিভিন্ন পারিবারিক আবেষ্টনীতে পুরুষরা যদি মনে করে এবং সিদ্ধান্ত নেয়, কিশোরী সময়টাই হচ্ছে মেয়েদের বিয়ের যথার্থ সময়, তবে সেটিই মেয়েদের জন্যে একটি সামাজিক মানদণ্ড হয়ে দাঁড়ায়। পারিবারিক দারিদ্র্যও বাল্যবিয়েকে উদ্বুদ্ধ করে।
বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ধনিক গৃহস্থালির তুলনায় সমাজের নিম্নতম ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মেয়েদের ১৮ বছরের আগে বিয়ে হওয়ার আশঙ্কা তিন গুণ। দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বঞ্চনার ভঙ্গুরতার কারণে বহু পরিবার মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চায়। এটিও দেখা গেছে, বাংলাদেশের যে সব জেলায় দারিদ্র্যের আপাতন বেশি, সেখানে মেয়েদের বাল্যবিয়ের হার বেশি। বহু পরিবার যেখানে মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে না কিংবা দারিদ্র্যচক্র থেকে বেরুনোর কোনো সুযোগ তারা দেখতে পায় না, তখন মেয়েদের বিয়ে দেওয়াই একটি বাস্তব পথ বলে তারা মনে করে। ভাবনাটা এমন– মেয়েটির ভার পরিবারের কাঁধ থেকে নেমে গেল।
সমাজে শান্তিশৃঙ্খলার অনুপস্থিতি, আইনকানুনের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতার কারণেও মেয়েকে দ্রুত পরের ঘরে পাঠানোর একটা তাগিদ থাকে। উদ্দেশ্যটা যেন, যত তাড়াতাড়ি মেয়ের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া যায়।
মনে করা হয়, অরাজকতা এবং বিশৃঙ্খলার হাত থেকে মেয়েদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য আগেভাগেই তাদের বিয়ে দেওয়া নিরাপদ। আসলে রাষ্ট্র বহু ক্ষেত্রেই নারীর নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সময়ে ঘটে চলা ব্যাপক ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতাই তার
বড় প্রমাণ।
এ সবকিছুর পরিপ্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হচ্ছে, বাল্যবিয়ে রোধে কী কী করা যেতে পারে?
এসব ব্যবস্থার কিছু আইনগত মাত্রিকতা, কিছু সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ, কিছু আর্থসামাজিক নীতিমালার। কিন্তু বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে রোধে এর মূল কারণগুলো মোকাবিলায় নানান ব্যবস্থার সমন্বয়ে একটা যৌথ সমন্বিত কৌশল ব্যবহার করতে হবে।
সামাজিক মূল্যবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গি অতি অল্প সময়ে বা তাৎক্ষকণিক বদলানো যাবে না। এ জন্য তৃণমূলে কাজ করতে হবে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারের মাধ্যমে; বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে। সেই সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে ধর্মীয় নেতা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, শিল্প-সাহিত্য, খেলাধুলা এবং বিনোদন-মাধ্যমের ব্যক্তিত্বদের। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, সচল চিত্র, চিত্রপ্রদর্শনী, নাটিকা, পুতুলনাচও এ ব্যাপারে বিরাট অনুঘটকের ভূমিকা রাখতে পারে।
বাল্যবিয়ে রোধে আইনি কাঠামোকে শক্তিশালী, আইনের ফাঁক-ফোকর বন্ধ এবং বিদ্যমান আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশের ২০১৭ সালের বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ আইন সর্বজনীনভাবে নিন্দিত হয়েছে ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ বাল্যবিয়েকে অনুমোদন করায়। আইনের ত্রুটির সুযোগ নিয়ে নানান জায়গায় বাল্যবিয়ে হয়েছে। এর আইনগত কাঠামো পরিমার্জন জরুরি।
মেয়েদের শিক্ষা বাল্যবিয়ে রোধে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষিত মেয়েরাই তাদের বিয়েকে বিলম্বিত করতে পারে। তারা অল্পসংখ্যক শিশুধারণের সিদ্ধান্ত নিতে এবং ইতিবাচক স্বাস্থ্য ফলাফলের অধিকারী হতে পারে।
নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষা একটি অত্যন্ত জোরালো পন্থা। নারীর শিক্ষা, বিশেষত কারিগরি শিক্ষা তাদের কর্মনিয়োজন মেয়েদের সম্পর্কে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে সহায়ক হতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রেই বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ আন্দোলনে পুরুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। এটা গুরুতর ভুল। এ আন্দোলনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে হলে পুরুষকেও সহযাত্রী হিসেবে পেতে হবে। যেহেতু নারীর জীবনের বহু বাস্তবতা পুরুষের কর্মকাণ্ড দিয়ে নির্ণীত হয়, তাই বাংলাদেশে মেয়েদের বাল্যবিয়ে রোধের সংগ্রামে পুরুষের সম্পৃক্ততার কোনো বিকল্প নেই।
সেলিম জাহান: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র