স্বপ্ন আকাশছোঁয়া অথচ পারফরম্যান্স গড়পড়তা
Published: 25th, February 2025 GMT
‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আপনাদের লক্ষ্য কি?
নাজমুল হোসেন শান্ত: আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলবো।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের এমন আত্মবিশ্বাসী উত্তর শোনার জন্য সামনে বসা ক্রীড়া সাংবাদিকদের কেউই প্রস্তুত ছিল না। কেননা নিজেদের সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের ফরম্যাটেই অচেনা বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সবশেষ সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ। সেখানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখা আকাশছোঁয়ার মতো।
পায়ের নিচে মাটি শক্ত না হলে আকাশ যে ছোঁয়া যায় না তা হাড়ে হাড়েই টের পেল নাজমুল হোসেন শান্ত অ্যান্ড কোং। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম দুই ম্যাচ বাজেভাবে হেরে, অসহায় আত্মসমর্পণ করে এক ম্যাচ আগেই বিদায় নিশ্চিত করেছে। তাতে একটা বিষয় সামনে এসেছে স্পষ্টভাবে, গড়পড়তা পারফরম্যান্সে বর্তমান সময়ের ক্রিকেটে টিকে থাকা সম্ভব না কোনোভাবেই।
আরো পড়ুন:
অস্ট্রেলিয়া-দ.
আমাদের দুটি বড় জুটির প্রয়োজন ছিল: শান্ত
দুই ম্যাচেই বোলাররা যা করার করেছেন। ব্যাটসম্যানরা ছিলেন স্রেফ অসহায়। প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে ব্যাটিংয়ে যে করুণ দশা শুরু হয়েছিল তা গতকাল নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও ধরা পড়েছে প্রবলভাবে। আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে। ডট বলের স্রোতে ভেসে গেছে ইনিংসের চেহারা। অহেতুক শট খেলতে গিয়ে বিলিয়ে এসেছেন উইকেট।
স্বপ্ন দেখতে হলে জোর থাকতে হয়। সেই লক্ষ্য পূরণে জেদ থাকতে হয়। মুখের কথায় যতটা বিশ্বাস ছড়ানো যায় কিন্তু ২২ গজে সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন থাকতে হয়। বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স, মাঠে শরীরি ভাষা, লক্ষ্যে পৌঁছানোর লড়াই কোনোকিছুতেই বাংলাদেশ রেসে ছিল না। বরং নিজেদের পারফরম্যান্সকে হাস্যরসে পরিণত করেছেন।
নিজেরা ক্রিকেট খেলেন বলে বাইরের সমালোচনা গায়ে মাখাতে পছন্দ করেন না। সমর্থকদের আয়নায় মুখ দেখতে বলতেও দ্বিধা করেন না। পেইন কিলার নিয়ে লুকিয়ে মাঠে নামার মতো ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলেন নির্ধিদ্বায়। সাফল্য বলে কয়ে আসে না। এর জন্য যে নিবেদন থাকতে হয়, কষ্ট করতে হয়, ভাবনার গভীরতা থাকতে হয় তার ধারে-কাছেও নেই ক্রিকেটাররা। তাইতো এখন সমালোচনা বেড়ে গেছে বহুগুণ। হাসি আর ট্রলের ঝড় বইছে।
তবে দলের প্রত্যেক ক্রিকেটারের ভাবনা, স্বপ্ন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো ছিলই বলে মনে করছেন শান্ত, ‘‘আমার কাছে এরকম মনে হয় না (চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা বলায় দল চাপে পড়েছে)। কারণ, দলে যতগুলি ক্রিকেটার ছিল, সবাই এই স্বপ্ন নিয়েই এসেছিল। আমার মনে হয় যে, যদি বড় স্বপ্ন না-ই দেখি, তাহলে আসলে কীভাবে খেলব! এখানে তো শুধু লড়াই করতে আসিনি, জিততে এসেছি।”
৫০ ওভারের ম্যাচে যদি ৩০ ওভার থেকে রানই না আসে, তাহলে আর বাকি থাকে কী! নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ইনিংসে ১৮১ বলে কোনো রান আসেনি। ভারতের বিপক্ষে সংখ্যাটা ছিল ১৫৯। দুবাইয়ের সেদিনের উইকেট কিছুটা কঠিন থাকলেও রাওয়ালপিন্ডিতে রানের পসরা সাজানো উইকেটে খেলেছে বাংলাদেশ। তারপরও ব্যাটিংয়ের এই দশা!
ডট বলের ব্যাখ্যায় শান্ত সামনে আনলেন ধারাবাহিক উইকেট হারানোর প্রসঙ্গটি, “এই অভ্যাসটা তৈরি করা জরুরি যে, নিয়মিত আমরা কীভাবে তিনশ করতে পারি। আমরা হয়তো একদিন-দুদিন তিনশ করি। এখান থেকে বের হওয়ার জন্য অনুশীলনে বলেন, নিয়মিত কীভাবে ভালো উইকেটে খেলা যায়, নিয়মিত বড় দলের বিপক্ষে এই ধরনের স্কোর গড়া যায়, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আজকের ম্যাচে ডট বল হওয়ার কারণ, আমরা মাঝের ওভারগুলোয় কিছুক্ষণ পরপরই উইকেট দিয়ে দিয়েছি।”
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রফরম উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
এবার জিমন্যাস্টিকসে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী!
ইংল্যান্ডপ্রবাসী হামজা দেওয়ান চৌধুরীর আবির্ভাবের পর বাংলাদেশের ফুটবলের চেহারা বদলে গেছে। প্রিমিয়ার লিগ খেলা এ তারকার লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানোর পর কানাডাপ্রবাসী সামিত সোমও আগ্রহ দেখিয়েছেন। ইতোমধ্যে তাঁর পাসপোর্ট করার কাজ শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ফুটবলের বাইরে অন্য ফেডারেশনগুলোতে প্রবাসী খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করার জন্য চিঠি দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। তাদের চিঠি দেওয়ার আগে জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন খুঁজে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জ্যাক আশিকুল ইসলামকে। বাংলাদেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখা এ অ্যাথলেটের পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন। ইতোমধ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে চিঠিও দিয়েছে তারা।
ছেলেদের ছয়টি ইভেন্টের মধ্যে জ্যাক আশিকুল তিনটিতে বেশ ভালো। পোমেল হর্স, ফ্লোর এবং ভল্টিং ইভেন্টে তিনি অসাধারণ শৈলী দেখিয়ে মুগ্ধ করেছেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন কর্তাদের। ভিডিওতে তাঁর পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হলেও পাসপোর্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এ অ্যাথলেটকে ঢাকায় এনে ট্রায়াল দিতে চায় ফেডারেশন। ‘আগে তার পাসপোর্ট হোক। তার পরই দেশে এনে তাকে আমরা দেখব। ভিডিওতে যা দেখেছি, আশা করি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের তারকা সে হতে পারবে’–আত্মবিশ্বাসের সুরে গতকাল সমকালকে জানান বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জামিল।
তবে কবে নাগাদ জ্যাক আশিকুলকে পাওয়া যাবে, সেটি এখনই বলতে পারছেন না জামিল। সামনে কমনওয়েলথ, এশিয়ান গেমসে তাকে পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের, ‘এটি বলা যাচ্ছে না। কারণ, সবকিছু নির্ভর করছে তার পুরো প্রক্রিয়ার ওপরে। প্রক্রিয়াগুলো একটু জটিল। অনেক ধাপ আছে। এশিয়ান গেমসের মতো আসরগুলোতে তাকে পাওয়া গেলে আমাদের দলটা শক্তিশালী হবে।’ প্রতিনিয়ত আশিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন জামিল। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এ জিমন্যাস্টও বাবার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে মুখিয়ে আছেন বলে জানিয়েছেন জামিল, ‘বাংলাদেশে খেলার জন্য সে খুবই আগ্রহী। তার মধ্যে অন্যরকম রোমাঞ্চ কাজ করছে। আমার সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রেখে চলেছে সে।’
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ যাতে ভালো করে সেই জন্য সরকারও চাচ্ছে ভালো মানের প্রবাসীরা যেন এই দেশে আসেন। স্বপ্ন জাগিয়েও নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী জিমন্যাস্ট আলী কাদের বেশি দিন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেননি। ২০২২ কমনওয়েলথ এবং একই বছর তুরস্কে অনুষ্ঠিত ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে অংশ নেওয়া আলী কাদের পরবর্তীতে হারিয়ে যান। এরপর থেকেই বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন নতুন প্রবাসীর সন্ধানে নামে। তারই ধারাবাহিকতায় খুঁজে পায় জ্যাক আশিকুল ইসলামকে। ১৮ বছর বয়সী এ তরুণ যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তাঁর বাবা আশিকুল ইসলামের বাড়ি রংপুরে। মা আমেরিকান। মূলত চাচার মাধ্যমে জ্যাক আশিকুলের সন্ধান পায় বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন। আশিকুলের খেলার ভিডিওগুলো দেখে ভালো লেগেছে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জামিলের।
গতকাল সমকালের সঙ্গে নতুন এ প্রবাসী সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গত বছরের মে মাসের দিকে যোগাযোগ হয়েছে। তার পরে দেশের পট পরিবর্তনের কারণে অনেক দিন যোগাযোগ বন্ধ ছিল। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। এখন কাজটা দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়ার সব চেষ্টাই করা হচ্ছে। এখন তার পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আমি যতটুকু তার পারফরম্যান্স দেখেছি তাতে সন্তুষ্ট বলা যায়। আমি বলব না, একেবারে অলিম্পিক লেভেলের। সাইক সিজার যখন খেলছিল সে অন্য লেভেলের ছিল। জ্যাক ইসলামের মাত্র ১৮ বছর বয়স। এখনও ইয়ং। তার মধ্যে ভালো সম্ভাবনা আছে। পারফরম্যান্স যতটুকু দেখলাম, আমাদের জাতীয় দল যেটা করছে, তাদের মতোই কিংবা তাদের চেয়ে একটু ভালো বলা যায়।’
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আলোচিত অ্যাথলেট ছিলেন জিমন্যাস্ট সাইক সিজার। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এ অ্যাথলেট ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তিনি ভোল্ট, ফ্লোর এবং অলরাউন্ড ইভেন্টে পারদর্শী ছিলেন। ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে যুক্তরাষ্ট্রের জিমন্যাস্ট দলের সহকারী কোচ ছিলেন সিজার। তাঁর মতো প্রতিভাবান না হলেও জ্যাক আশিকুল ইসলামকে নিয়ে আশাবাদী জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন।