চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় মাহমুদুল হক (৬৬) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের আলী সিকদারপাড়া এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।

নিহত কৃষক ওই এলাকার মৃত চাঁদ মিয়ার ছেলে। লাঠি নিয়ে হামলার পর আহত অবস্থায় তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মিশকাত হোসেন (১৬) নামের ওই কৃষকের স্কুলপড়ুয়া এক ছেলেও আহত হয়েছে।

নিহত কৃষকের স্ত্রী রহিমা বেগম জানান, মাহমুদুল হকের সঙ্গে তাঁর বড় ভাই মৃত মুহাম্মদ আলীর পরিবারের সদস্যদের বাড়ির পাশের একটি জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। আজ সকালে মুহাম্মদ আলীর দুই ছেলে মুজিবুর রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান ওই জায়গায় ঘর নির্মাণ করছিলেন। খবর পেয়ে মাহমুদুল হক স্থানীয় পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় মুজিবুর, মোস্তাফিজুর ও তাঁদের ভাগনে মো.

শাকিল লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মাহমুদুলকে আহত করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘জায়গা নিয়ে মাহমুদুল হকের সঙ্গে তাঁর ভাতিজাদের বিরোধ ছিল। সকালে কৃষক মাহমুদুল হক আমাকে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়ে যান। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছিলাম। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন লাঠি নিয়ে অতর্কিতভাবে মাহমুদুল হকের ওপর হামলা চালান। এতে মাহমুদুল হকের মৃত্যু হয়েছে।’

লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক কাওসার সোলতানা প্রথম আলোকে বলেন, বেলা ১১টার দিকে ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

জানতে চাইলে লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে পুলিশ আইনগত পদক্ষেপ নেবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গণহত্যার প্রতিবাদ করে গাজাবাসীর জন্য রাইখানদের প্রার্থনা

গণহত্যার প্রতিবাদ করে জালিম ইসরায়েলের আগ্রাসন থেকে মজলুম গাজাবাসীর মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছে পটুয়াখালীর রাখাইন সম্প্রদায়।

গাজায় গণহত্যা ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের শিকার ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর জন্য কুয়াকাটায় মাহা সাংগ্রাই জলকেলি উৎসবে এক মিনিট নীরাবতা পালন করে রাখাইন সম্প্রদায়।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটায় শুক্রবার রাখাইন জলকেলি উৎসবের শুরুতে গাজায় গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনিদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ছবি: রাইজিংবিডি 

আরো পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব
বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে

অবশেষে জিম্বাবুয়ে সিরিজ সম্প্রচারকারী চ্যানেল পেলো বিসিবি

শুক্রবার দুপুরে (১৮ এপ্রিল) কলাপাড়ার কুয়াকাটায় শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার-সংলগ্ন রাখাইন মাঠে জলকেলি উৎসবের প্রারম্ভে সবাই দাঁড়িয়ে এই নীরবতা পালন করেন।

রাখাইনদের অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গাজাবাসীর জন্য বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয় বলেও জানিয়েছেন সম্প্রদায়টির ধর্মগুরুরা।

গণহত্যা অভিযানে গাজা ও ফিলিস্তিন নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাখাইনদের এসব উদ্যোগ মানবতার জন্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন সেখানকার মানুষ।

রাখাইন জলকেলি উৎসব দেখতে আসা কলাপাড়ার আলীপুর এলাকার বাসিন্দা মো. হোসেন মিয়া বলেন, “আজ জলকেলি দেখতে রাখাইন মাঠে এসেছি। এখানে এসে একেবারেই অবাক হয়েছি। তারা অনুষ্ঠানের শুরুতেই গাজাবাসীর জন্য নীরবতা পালন করেছে।”

“নিপীড়িত গাজাবাসীর জন্য তাদের সহমর্মিতা আমাকে আপ্লুত করেছে,” বলেন হোসেন মিয়া।

মহিপুর থেকে আসা মো. আবদুস সালাম বলেন, “এমনিতেই রাখাইনদের সঙ্গে আমাদের একটি সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। আজ তারা গাজাবাসীর জন্য প্রার্থনা করেছে। তাদের প্রতি আমাদের সম্মান আরো বেড়ে গেল।”

মিশ্রীপাড়া সীমা বৌদ্ধবিহারের উপাধ্যক্ষ উত্তম মহাথের বলেন, “আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে গাজাবাসীর জন্য প্রায়ই বিশেষ প্রার্থনা করি। শুধু গাজাবাসীই নয়, পৃথিবীর সকল দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ যুদ্ধ বন্ধ হোক- এটাই আমাদের প্রার্থনা।”

“ আমরা মানুষ হিসেবে সবাইকে সবার প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের অনুরোধ জানাচ্ছি,” বলেন উত্তম মহাথের।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, “গাজাবাসীর প্রতি রাখাইন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এক মিনিট নীরবতার মাধ্যমে মানবতার সঙ্গে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্প্রীতি তারা দেখিয়েছেন, এ জন্য তাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

“রাখাইন সম্প্রদায় ভিন্ন ধর্মালম্বী হলেও মানবতার ধর্ম সবার এক। তাই রাখাইন সম্প্রদায় এই নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে তাদের সম্প্রীতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করল।”

শুক্রবার পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী রাখাইন জলকেলি উৎসব, যাতে শামিল হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ, সেই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বিদেশিরাও।

উৎসব শুরুর দিন ঐতিহ্যবাহী জলকেলিতে মেতে উঠতে দেখা যায় রাখাইনদের। তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের আনন্দ করতে দেখা যায়। উৎসবে সহায়তা করছে স্থানীয় প্রশাসন।

ঢাকা/ইমরান/রাসেল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ