বছর পাঁচেক আগে সহ-সভাপতি হয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে পা রেখেছিলেন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান। প্রথম মেয়াদে দারুণ কাজ করার পর দ্বিতীয় মেয়াদে আরো বড় পদে তথা সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এমন একটি সময়ে ইমরুল দেশের ফুটবলের সেকেন্ড ম্যান হলেন, তখন সব ক্ষেত্রেই অপেক্ষা করছে চ্যালেঞ্জ। 

সম্প্রতি রাইজিংবিডি ডটকমের মুখোমুখি হয়ে ইমরুল হাসান জানিয়েছেন দেশের ফুটবলের হাল হকিকত। পাঠকদের জন্য তার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: চ্যালেঞ্জিং এই সময়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে আপনি আরো বড় পদে এসেছেন। কেমন যাচ্ছে সময়? কতটা উপভোগ করছেন? 

ইমরুল হাসান: যে কাজে চ্যালেঞ্জ থাকে, সেই কাজ করতে কিন্তু আগ্রহটা বেশি জন্মায়। চ্যালেঞ্জহীন কাজে খুব একটা আনন্দ পাওয়া যায় না। মাস তিনেক হলো আমরা নতুন কমিটি দায়িত্ব নিয়েছি। এর মধ্যে আমরা বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেগুলো আগের বছরগুলোতে নেওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করছি, নতুন সভাপতির অধীনে আমরা যারা আছি, আগামী চার বছরে ফুটবলকে একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারব। 

প্রশ্ন: আপনি বলেছেন, এই সময়ে অনেকগুলো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপনারা, যেগুলো আগে নিতে পারেননি। অর্থাৎ, এখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন আপনারা, এটাই তো? 

ইমরুল হাসান: অবশ্যই, এখন কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক স্বাধীনতা আছে। প্রেসিডেন্ট অনেক কর্মঠ। উনি সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করে থাকেন, সবকিছুতে উনি মতামত দিয়ে থাকেন। এর ফলে আমাদের জন্য কাজ করাটা সহজতর হয়ে যায়। এটা আমরা উপভোগ করি এবং যে যার দায়িত্বে আছি, সেটা পালনে আমাদের সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রেসিডেন্ট সার্বক্ষণিকভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের অনুপ্রেরণা যোগান। 

প্রশ্ন: চার বছরে ফুটবলকে অনন্য অবস্থায় নিয়ে যেতে চান আপনারা। এই লক্ষ্য পূরণে আপনারা কীভাবে কাজ করছেন? কী কাজ করছেন? 

ইমরুল হাসান: ফুটবল টিমের র‍্যাংকিং যদি আমরা না আগাতে পারি, তাহলে উন্নতি দৃশ্যমান হবে না। সেদিকে আমাদের দৃষ্টি আছে। আমরা আশা করছি যে, আমাদের এই সময়টাতে যে পরিকল্পনা আছে, তার আংশিকও যদি বাস্তবায়ন করতে পারি, র‍্যাংকিং কিছুটা হলেও আগাবে অন্তত। দক্ষিণ এশিয়াতেও আমাদের অবস্থান তলানিতে। আশা করছি, এ থেকে উত্তরণ ঘটবে। দেশে জেলা লিগ নিয়মিতভাবে হচ্ছে না। জেলা লিগ হচ্ছে ফুটবলের প্রাণ। সেখান থেকে ফুটবলার তৈরি হয়ে আসে। বিগত বছরগুলোতে জেলা লিগ অনুপস্থিত ছিল। আমাদের প্রথম প্রচেষ্টা আছে জেলা লিগগুলো নিয়মিত করার জন্য। এতে যদি আমরা সফলকাম হই, তাহলে জাতীয় দলের পাইপলাইন সমৃদ্ধ হবে। পাইপলাইন সমৃদ্ধ হলে জাতীয় দলের ভালো ফল অবশ্যই আসবে। 

প্রশ্ন: অন্তর্বর্তী সরকার সব ক্রীড়া সংস্থা ভেঙে দিয়েছে। আপনারা জেলা লিগ চালুর ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন কি না? 

ইমরুল হাসান: একটা অভ্যুথানের পর, বিপ্লবের পর নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। নতুন সরকার তাদের চিন্তা-চেতনা অনুযায়ী কাজ করবে। পূর্ববর্তী সরকারের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা বেশি ছিল, তাদের দূরে রেখেই হয়ত করবে। কিছুটা সময় তো লাগবেই সংস্কারগুলো করতে। আমরা বাফুফে থেকেও সেগুলো করছি। বিগত বছরগুলোতে যারা জেলা লিগ করতে পারেনি এবং নিষ্ক্রিয় ছিল, তাদের আমরা কাউন্সিলরশিপ থেকে বাদ দিয়ে দিচ্ছি। একটা ফুটবল সংস্থার মূল কাজ ফুটবল মাঠে রাখা। যারা এটা করতে অক্ষম, তাদের রাখার যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। শুরুতে আমাদের কিছুটা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হলেও, কালক্ষেপণ হলেও দীর্ঘমেয়াদের ক্ষেত্রে ভালো কিছু আনতে পারবে। 

প্রশ্ন: হামজা চৌধুরীর মতো ফুটবলারের অন্তর্ভুক্তি কীভাবে দেখছেন? 

ইমরুল হাসান: হামজা চৌধুরীর মতো হাইপ্রোফাইল প্লেয়ার যদি বাংলাদেশ দলে অন্তর্ভুক্ত হয়—ফুটবল কিন্তু দলীয় খেলা, এক জনের অন্তর্ভুক্তিতে দলের শক্তি অনেক বেড়ে যাবে, সেটা আমি বলছি না। কিন্তু হামজার ক্রেজ ব্যবহার করে আমরা ফুটবলের উন্মাদনা কিছুটা ফিরিয়ে আনতে পারি। আমরা সেদিকে চেষ্টা করছি। এর পাশাপাশি আমরা যদি আরো কিছু মানসম্পন্ন প্রবাসী প্লেয়ারকে দলভুক্ত করতে পারি। অনেকে বিশ্বের বিভিন্ন লিগে খেলে থাকে, তাদের মান যথেষ্ট ভালো। তারা যদি খেলতে ইচ্ছুক হয়, অন্তত পাঁচ থেকে ছয় জন প্লেয়ারকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। তাহলে আমার মনে হয়, বাংলাদেশ অন্তত দক্ষিণ এশিয়াকে ডমিনেট করতে পারবে। এশিয়ায়ও একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে ফুটবলে। 

প্রশ্ন: নারী ফুটবলের সংকট উত্তরণের জন্য গড়া তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন আপনি। সবকিছু মিলিয়ে সমস্যা কোথায় বলে মনে হয়েছে আপনার? 

ইমরুল হাসান: যেসব মেয়ে প্রশিক্ষণে আসেনি, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে একে একে কথা বলেছি। কোচের সাথে কথা বলেছি। আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে, এটা বড় কোনো ইস্যু ছিল না, ক্ষুদ্র একটা ব্যাপার ছিল। এটাকে এত দূর পর্যন্ত বাড়তে দেওয়াটা উচিত হয়নি। এটাকে শুরুতেই মিটিয়ে ফেলা যেত। এটা কারো অবহেলায়, কারো দূরদর্শিতার অভাবে এত দূর চলে আসছে। মেয়েরা আমাদের সাফল্য এনে দিয়েছে। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান শুধু আমাদের নয়, পুরো দেশবাসীর আছে। কিন্তু, একটা কথা বলতে চাই, শৃঙ্খলার ওপর কিছু নেই। কেউ যদি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে থাকে, সে যত বড় খেলোয়াড় হোক না কেন, যত সাফল্য এনে দিক না কেন, শৃঙ্খলাটা সবার আগে। 

প্রশ্ন: মেয়েরা বলেছে, তারা ছুটি কাটিয়ে ফিরবে অনুশীলনে। আবার রিপোর্ট হয়েছে, ৮ জনকে নিয়ে কোচের আপত্তি আছে। 

ইমরুল হাসান: যে ১৮ জন অনুশীলনে অংশ নেয়নি, তারা বলেছে, ছুটির পর ক্যাম্পে যোগ দেবে। ক্যাম্পে যোগ দিলেই যে চুক্তি নবায়ন করা হবে, কেউ সেটা বলতে পারছি না। কারণ, প্রতিবছরই পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে চুক্তি নবায়ন করা হয়। তাতে কেউ বাদ পড়বে, কেউ নিচের ক্যাটাগরিতে চলে আসবে, কেউ ওপরে যাবে। সবকিছু চুক্তি হলেই বলা যাবে। আমরা আশাবাদী, যারা পারফরম্যান্স দেখাতে পারবে, কোচের দৃষ্টিতে যাদের জাতীয় দলে রাখার যোগ্য, অবশ্যই তাদের চুক্তি নবায়ন করা হবে। যাদের পারফরম্যান্স ভালো না, তারা বিদ্রোহ করেছে কি না, সেটা মুখ্য বিষয় হিসেবে থাকবে বলে আমার মনে হয় না। পারফরম্যান্স না হলে অনুমিতভাবেই সে বাদ পড়ে যাবে। 

প্রশ্ন: উইমেন্স উইংয়ের প্রধান বলেছেন, বাটলারকে রাখা নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছিল। এটার সত্যতা কতটুকু? 

ইমরুল হাসান: আমি উনার বক্তব্য দেখেছি। কোচ নিয়োগের ইমার্জেন্সি কমিটির মিটিংয়ে শুধু অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। উনি বলেছেন, ইমার্জেন্সি কমিটিকে জানিয়েছেন। কাকে জানিয়েছেন, আমি জানি না। আমি অন্তত এ ব্যাপারে কিছু জানি না, উনার কোচ নিয়োগের বিষয়ে কোনো আপত্তি ছিল কি না। আসলে ইমার্জেন্সি কমিটির মিটিংয়ে শুধু কোচ নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে; কাকে নিয়োগ করা হবে, সেটি পূর্বেই সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে সেই মিটিংয়ে শুধু অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। 

প্রশ্ন: বসুন্ধরা কিংস নারী দল গড়ছে না। শোনা যাচ্ছে, টাকা- পয়সার ইস্যুতে মেয়েদের দাবি-দাওয়া ছিল। 

ইমরুল হাসান: এ ক্ষেত্রে কিছুটা বিভ্রান্তি আছে ফুটবল অঙ্গনে। মেয়েরা আমাদের কাছে একটা পারিশ্রমিক চেয়েছে। ক্লাবগুলো বা আমরা যারা সংগঠক আছি, তারা মেয়েদের অভিবাবক। অভিভাবকদের কাছে মেয়েরা পারিশ্রমিক বেশি চাইতেই পারে। আমাদের দল গঠন না করার পেছেন এটা প্রধান কারণ তো নয়, অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে একটা মাত্র কারণ। মূল যে কারণটা ছিল, সেটা আপনারা সাংবাদিক মহল বা ক্রীড়াঙ্গন এড়িয়ে যাচ্ছেন। আমাদের না খেলার পেছনে কিছু অবজারভেশন ছিল। সেগুলো আমরা নারী বিভাগকে জানিয়েছিলাম। সেই দিকগুলোতে তারা কোনোরূপ কর্ণপাত না করাতে আমরা দল গঠন করিনি। দুই-একটা অসঙ্গতি ছিল। আপনারা জানেন, যেসব টিম খেলত, তাদের মধ্যে একটি টিমের প্লেয়াররা বাফুফে ভবনে থেকে বাফুফের কোচদের থেকে ট্রেনিং নিয়ে তারা বাফুফে ভবন থেকে গিয়ে মাঠে ওই দলের হয়ে অংশগ্রহণ করত। যেটা আসলে নৈতিকভাবে ঠিক ছিল বলে আমাদের কাছে মনে হয়নি। আমরা এটা থেকে সরে আসার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু সেটা হয়নি বলে আমরা দল গঠন করিনি। পারিশ্রমিক বৃদ্ধির যে কারণ, সেটা ছোট্ট একটা কারণ। 

প্রশ্ন: এই সমস্যার সমাধান কি এবার হতে পারে? 

ইমরুল হাসান:  আমরা দল গঠন করার জন্য সব সময়ই চাই। আমরা তিন বছরের চ্যাম্পিয়ন। যদি পরবর্তীতে নারী লিগ হয়, আমরা অবশ্যই অংশগ্রহণ করব। তবে, আমাদের কিছু অবজারভেশন আছে, যেমন: আমরা চাই না, পুল প্রথা থাকুক। কারণ, পুল প্রথা চালু হলে আমার মনে হয়, মেয়েরা প্রাপ্য প্রারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হবে। ক্লাবগুলো অবশ্যই এই সুযোগে অল্প প্রারিশ্রমিকে খেলিয়ে নেবে। সেটা আমরা চাই না। পুল প্রথা হলে আমরা হয়ত অংশগ্রহণ করব না।

ঢাকা/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রফরম য ন স ইমর ল হ স ন আম দ র ক ছ ফ টবল র দল গঠন ক জ কর র জন য ন আপন সরক র আপন র সবক ছ

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম ট্যাক্স-ভ্যাট আদায় হয় বাংলাদেশে: এনবিআর চেয়ারম্যান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম ট্যাক্স-ভ্যাট আদায় হয় বাংলাদেশে। আমরা প্রতিবছর ঋণ করে বাজেট বাড়াচ্ছি। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

মঙ্গলবার রাজশাহীতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দেন না। ভ্যাট দেয় গ্রাহকরা। বলা হয়, ব্যবসায়ীরা সরকারের হয়ে ভ্যাট আদায় করে সরকারকে দেবেন। কিন্তু এই প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে চলে না। ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ফাঁকি দেন। ফলে আমাদের ঋণ করে বাজেট বড় করতে হয়। এক্ষেত্রে ট্যাক্সের আওতা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, এনবিআর শুধু অর্থ আদায় করবে। আর এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবে আরেকটি প্রতিষ্ঠান। ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়সহ অনেক সেবাকে অটোমেশনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া জোরদার করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌবন্দরে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া দ্রুত চালু ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে মেশিনারি পার্টস আমদানি করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও বগুড়া জেলার ব্যবসায়ী ও চেম্বার নেতারা অংশ নেন।

আলোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যানের বক্তব্যের আগে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বর্ধিতহারে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসায় টিকে থাকতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারা আসন্ন বাজেটে করের আওতা সম্প্রসারণ এবং বিদ্যমান ব্যবসায় কর, ভ্যাট ও শুল্ক না বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ