ফের ১২ দিনের রিমান্ডে জুনায়েদ আহমেদ পলক
Published: 25th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার একটি ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দুইটি হত্যা মামলায় সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের চার দিন করে ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেলায়েত হোসেনের আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন দুটি থানার হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় পলককে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল কাইয়ুম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৫ দিন এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার আহসান কবির শরিফ ও হাফেজ সোলাইমান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে ওঠানো হয় তাকে। পরে প্রত্যেক মামলায় আদালত ৪ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় পলক নিজেই শুনানিতে অংশ নেন। এ সময় তিনি আদালতকে বলেন, ইন্টারনেট বন্ধের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। এটা আইনের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বন্ধ করেছিল। বরং ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমার সমর্থন ছিল। সেইসময় কেবিনেট সভায় এটা সংস্কার করা হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে এগুলো মিথ্যা।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।
তিনি বলেন, আদালতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না। তিনি নিজেই শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন। তিনি আদালতে বলেছেন ইন্টারনেট বন্ধের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। আমরা আদালতকে বলেছি এটা তার জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণ করার জন্য। যেহেতু আজ রিমান্ড শুনানি ছিল, আদালত তার এই বক্তব্য জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন।
বিএইচ
.উৎস: SunBD 24
কীওয়ার্ড: জ র কর
এছাড়াও পড়ুন:
গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচার আইসিসিতে করার দাবি
গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) করার দাবি উঠেছে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
‘জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদন জুলাই হত্যাকাণ্ডের ব্যবচ্ছেদ, দায় ও বিচার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান। আজ রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সভার আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
সভায় বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে, জাতিসংঘ যেসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, দেশের আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকায় সেসব (তথ্য-উপাত্ত) তারা বাংলাদেশকে দেবে না। আর বিচারের অগ্রগতি ছাড়া দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
আলোচনায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে যে অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটেছে। তবে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে, এটা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়নি।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের অনুসন্ধানের তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে দিতে রাজি আছে, যদি সেই (বিচার) প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ হয় বলে উল্লেখ করেন সারা হোসেন। তিনি বলেন, স্বচ্ছ কীভাবে হবে—আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য হতে হবে। মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা থাকলে তারা (জাতিসংঘ) সহযোগিতা করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার বিচার এখনো ঠিকমতো হয়নি। এর বড় একটি কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার আইন অনুসরণ করেনি।
সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মনে করেন, মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিচার হতে হবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি আওয়ামী লীগ প্রশ্নে কোনো ধীরগতি বা নীরবতা অবলম্বন করে, তাহলে হয়তো জনগণ আবার রাজপথে নিজেদের হাতে আইন তুলে নিতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, ‘সেই পরিস্থিতির দিকে যদি বাংলাদেশ যায়, তাহলে আমরা মনে করি, এখানে একটা গৃহযুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ‘চামড়া গন্ডারের মতো’ বলে মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘জনতা আপনাদের যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করতে আপনারা বাধ্য। যদি মনে করেন অবাধ্য হবেন, কোনো কানাগলি পার পাওয়ার চেষ্টা করবেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতা করে পরের সরকারে আসার পথ পরিষ্কার করবেন—এই সুযোগ আপনাদের বাংলাদেশ আর দেবে না।’
আওয়ামী লীগের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে উল্লেখ করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, কারণ আওয়ামী লীগের বিষয়ে, হাসিনার বিষয়ে যদি কোনো সুরাহা বাংলাদেশে না হয়, তাহলে কোনো নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করলে তা সুষ্ঠুভাবে হবে না।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর দেশে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হওয়ার কথা ছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যতটা নির্বাচনমুখী আলাপে অভ্যস্ত, বিচার এবং সংস্কারের প্রশ্নে তাদের অবস্থান ততটা শক্ত নয়।
ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে, এ আলাপের মধ্যেই এখন পর্যন্ত সরকার যেতে পারেনি মন্তব্য করে আখতার হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) গিয়ে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসরদের বিচার দাবি করতে হবে। সরকার অপারগতা প্রকাশ করলে জনতার মধ্য থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার রাস্তা খুঁজে নিতে হবে।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় যারা বীভৎসতা ঘটিয়েছে, তাদের শাস্তি জেল-জরিমানার মধ্য দিয়ে হতে পারে না উল্লেখ করে আখতার বলেন, তাদের ফাঁসি হতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশনা ইমাম বলেন, ‘বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় জাতিসংঘ সহায়তা করতে পারবে না বা এভিডেন্স (তথ্যপ্রমাণ) শেয়ার করতে পারবে না, যত দিন পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড আমাদের আইনে আছে।’ তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের সময় মৃত্যুদণ্ডাদেশ অন্তত স্থগিত রাখার সুযোগ ছিল। তাতে দেশের লাভ হতো। বিচারিক প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে সহায়তা পাওয়া যেত।
রাশনা ইমাম বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ বিচারপ্রক্রিয়ায় অনেক ধরনের ঘাটতি আছে। তার জন্য গণ-অভ্যুত্থানের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
জাতিসংঘের প্রকাশিত প্রতিবেদন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জন্য ‘কংক্রিট এভিডেন্স’ হতে পারে না বলেও মনে করেন রাশনা ইমাম। তিনি বলেন, নিয়মিত আদালতে গণহারে মামলা হচ্ছে, গায়েবি মামলা হচ্ছে। এগুলোও বিচারপ্রক্রিয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, সরকার বিচার করতে আগ্রহী, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সক্ষমতা নিয়ে ভীষণ সন্দেহ আছে যে আদৌ তারা এই বিচার করতে পারবে কি না। গত চার-পাঁচ মাসে এমন কোনো কিছু তারা দৃশ্যমান করতে পারেনি যে তারা এই বিচার করতে পারবে বলে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ থাকবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া। তিনি বলেন, জাতিসংঘের নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বিভিন্ন সময়। এমন প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। কারণ, জাতিসংঘ একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করে না। এখানে কোনো পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই। জাতিসংঘের সুস্পষ্ট নীতিমালা আছে, যেখানে প্রতিবেদন কীভাবে করা হবে, কারা করবে ইত্যাদি বিষয়ে। এই প্রতিবেদনও সেভাবেই করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আইনজীবী জহিরুল ইসলাম বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলাদা উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল, তবে তা নেওয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনালের তদন্তও আরও গতিশীল হওয়া উচিত ছিল। যাঁরা অপরাধের আলামত ধ্বংস করছেন, তাঁদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আইনজীবী হুমায়রা নূর, শহীদ মিরাজের বাবা আবদুর নূর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার সেলের সম্পাদক মোশফিকুর রহমান।