নারায়ণগঞ্জে ৩ মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলক ১২ দিনের রিমান্ডে
Published: 25th, February 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা তিন মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে ৪ দিন করে মোট ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেলায়েত হোসেনের আদালতে জুনাইদ আহমেদের ২০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে বিচারক ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে তাঁকে নারায়ণগঞ্জে আদালতে আনা হয়।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ কাইউম প্রথম আলোকে বলেন, সদর মডেল থানা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার হত্যা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা পৃথক ৩ মামলায় ৪ দিন করে মোট ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শুনানি শেষে জুনাইদ আহমেদকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়ে গেছেন।
রিমান্ড শুনানি শেষে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, জুনাইদ আহমেদকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সদর মডেল থানায় আবুল হাসান হত্যা মামলায় পাঁচ দিন এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় শরীফ হোসেন ও সোলাইমান—এই দুই হত্যা মামলায় সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জুনাইদ আহমেদের নির্দেশে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, হত্যার ঘটনায় জুনাইদ আহমেদকে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনটি মামলার এজাহারে তিনি ৪ ও ৫ নম্বর আসামি। তিনি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন; ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেশবাসীকে এই বিষয়গুলো জানা থেকে সর্বোচ্চ বিরত রাখার চেষ্টা করেছিলেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পরদিন ৬ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জুনাইদ আহমেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১২ দ ন র র ম ন ড ন র য়ণগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
লাশ পুতে রেখে জায়গাটি ঘুরে ঘুরে পাহারা দেয় ইয়াসিন
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার মিজমিজিতে স্ত্রী-সন্তানসহ তিন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেপ্তার ইয়াছিন। বুধবার পুলিশ চার দিনের রিমান্ডের পর তাকে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মাদ শামসুর রহমানের আদালতে হাজির করে। এ সময় ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ইয়াছিন জবানবন্দী দিয়েছেন বলে আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান জানিয়েছেন।
স্ত্রী লামিয়া আক্তার, চার বছরের সন্তান আব্দুল্লাহ লাবীব ও লামিয়ার বড় বোন স্বপ্না আক্তারকে ইয়াছিন একাই হত্যা করেছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ শাহীনুর আলম এ তথ্য জানিয়ে বলেন, হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে বাড়ির পাশের রাস্তায় ইট-সুরকির নিচে চাপা দেন তিনি।
ইয়াসিনকে গ্রেপ্তারের পর আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলেও চার দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল বুধবার তাকে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠায় পুলিশ। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে সোমবার বাড়ির কাছের একটি পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা বটি উদ্ধার করে পুলিশ। একই পুকুর থেকে রক্তমাখা জামা-কাপড় ভরা একটি ব্যাগও উদ্ধার করা হয়েছে।
ওসি মোহাম্মাদ শাহীনুর আলম বলেন, ইয়াসিনের স্ত্রী লামিয়া, তাদের সন্তান আব্দুল্লাহ ও স্বপ্নার লাশ গত ১১ এপ্রিল উদ্ধার করা হয়। একই দিন গ্রেপ্তার করা হয় ইয়াছিনকে। তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলেও আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াছিন পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি একাই স্ত্রী সন্তানসহ তিনজনকে হত্যা করেছেন। মাদকের টাকার জন্য উচ্ছৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে সৎ মায়ের মামলায় ইয়াছিনকে গত ২৭ রমজানের দিন গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঈদুল ফিতরের দুদিন আগে ইয়াছিন জামিনে ছাড়া পান। পুলিশ জানিয়েছে, তার স্ত্রী লামিয়া, সন্তান আব্দুল্লাহ এবং স্বপ্না মিজমিজি পুকুরপাড় এলাকার আক্তার হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ইয়াছিন জামিনে আসার পর গত ৮ এপ্রিল বাসায় যান। এ সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এ সময় লামিয়ার বোন মানসিক রোগী স্বপ্না বটি নিয়ে তেড়ে আসেন।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, স্বপ্নার কাছ থেকে ইয়াছিন বটিটি কেড়ে নিয়ে স্ত্রী লামিয়ার গলায় কোপ দিলে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সময় স্বপ্না চিৎকার দিলে তাকেও কুপিয়ে গলা, হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করেন। শিশু আব্দুল্লাহর গলায় থাকা তাবিজের সুতা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তাকে। এরপর লামিয়া ও স্বপ্নার মাথা ও হাত-পা একটি বস্তায় এবং দেহ দুটি আরেকটি বস্তায় ভরে কাথা কম্বলে পেঁচিয়ে নেয়। পরে আব্দুল্লাহরসহ তিন লাশ রাস্তার পাশে ইট-সুরকির নিচে চাপা দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, লামিয়া ও স্বপ্নার রক্তমাখা জামা-কাপড় একটি ব্যাগে ভরে সেটিসহ বটি বাড়ির পাশে পুকুরে ফেলে দেন। এরপর অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় লামিয়ার বাসায় ছিলেন। ঘুরে ঘুরে লাশ চাপা দেওয়া স্থান পর্যবেক্ষণে রাখেন। গত ৮ এপ্রিল রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
ওসি বলেন, আদালত ইয়াছিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড দিলেও হত্যার দায় স্বীকার করায় চতুর্থ দিনেই তাকে আদালতে জবানবন্দি দিতে পাঠানো হয়েছে। তিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় লামিয়া ও স্বপ্নার বোন মুনমুন আক্তার বাদী হয়ে গত ১১ এপ্রিল হত্যা মামলা করেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় করা মামলায় লামিয়ার স্বামী ইয়াছিনকে প্রধান আসামি করা হয়। তার বাবা মো. দুলাল ও বোন শিমুকেও আসামি করা হয়েছে।