রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে (রুইলুই ভ্যালি) আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে আগুনের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে পাঁচজন সদস্য থাকবেন। তাঁরা কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেবেন। এ ছাড়া সাজেক এলাকায় এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়েও সুপারিশ করবে তদন্ত কমিটি।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো.

মোবারক হোসেনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে তদন্ত কমিটিতে। বাকি চার সদস্য হলেন বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার, বাঘাইছড়ি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম এবং রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের একজন সহকারী পরিচালক।

গতকাল সোমবার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রের রিসোর্ট-কটেজ ও বসতঘরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। বেলা ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ৯৪টির অধিক রিসোর্ট-কটেজ ও বসতঘর। সাজেকে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকায় খাগড়াছড়ি থেকে অন্তত ১১টি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন লাগার প্রায় তিন ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ঘটন সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

লক্ষ্মীপুর বেড়িবাঁধে আশ্রিতরা উচ্ছেদ আতঙ্কে, পুনর্বাসনের দাবি

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাটের দক্ষিণে বুড়ির ঘাট পর্যন্ত যে বেড়িবাঁধটি রয়েছে, তার দুইপাশে অন্তত ৫ শতাধিক বসতঘর রয়েছে। বসবাসকৃত বাসিন্দাদের সংখ্যা কয়েক হাজার। নদীর ভাঙার কবলে পড়ে ভোলার জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমিহীন লোকজন এখানে এসে বসতি গড়েছেন। বাসিন্দাদের বেশিরভাগই নিম্নআয়ের। নদীতে মাছ শিকার এবং অন্যের জমিতে কৃষিকাজ কিংবা দিনমজুরি দিয়ে চলে তাদের সংসার। ফলে নিজস্ব জমি কেনার মতো সাধ্য নেই এসব পরিবারের।
 
বাঁধের সংস্কার কাজ চলায় এসব আশ্রিত পরিবার এখন উচ্ছেদ আতঙ্কে ভূগছে। পুনর্বাসনের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসরত এই ভূমিহীন বাসিন্দারা। 

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে তারা। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেয়। 

বেড়িবাঁধের মজুচৌধুরীর হাটের উত্তর অংশে কাজ চলমান রয়েছে, কিন্তু দক্ষিণ অংশের বাসিন্দারা উচ্ছেদ আতঙ্কে বাঁধের সংস্কার কাজে আপত্তি জানিয়েছেন। সংস্কারের আগে তারা পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে আসছেন।

মানববন্ধনকারীরা জানান, তাদের নিজস্ব কোন জায়গা নেই। কবরের জায়গা পর্যন্ত নেই। বেড়িবাঁধের পাশে ঘর করে তারা বসবাস করছেন। নদীতে মাছ শিকার আর অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।

তাদের দাবি, বাঁধ সংস্কারের কারণে তাদের উচ্ছেদ করে দিলে তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাই পুনর্বাসনের আগে তারা বাঁধের কাজ শুরু করতে দেবে না। 

মানববন্ধনে আসা ভূমিহীন বৃদ্ধ এবং বিধবা আফিয়া খাতুন জানান, মজুচৌধুরীর হাটের দক্ষিণে নিমতলা নামক এলাকায় দুটি বসতঘর রয়েছে। ৮ সদস্য নিয়ে তারা ওই দুইঘরে বসবাস করেন। বাঁধ সংস্কারের কারণে তাদের দুটি বসতঘরও উচ্ছেদের মধ্যে পড়বে। কিন্তু কোথায় যাবেন তিনি, সে দুঃচিন্তা ভর করছে তার উপর। 

আফিয়া খাতুন আরও জানান, তাদের আদি নিবাস ভোলা জেলাতে। অর্ধশত বছর আগে মেঘনা নদীর ভাঙনের পর পরিবারের সাথে চলে আসেন লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট এলাকায়। প্রায় ৩০ বছর আগে মজুচৌধুরীর হাটের দক্ষিণে বেড়িবাঁধে ঢালে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। পূর্বে তার বাবা-মার সাথে ছিলেন, এখানেই তার বিয়ে হয়েছে। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। স্বামী মারা গেছে, এখন সন্তান এবং নাতি-নাতনীদের নিয়ে বসবাস করছেন। নিম্ন আয়ের পরিবার হওয়ায় এতো বছরেরও নিজস্ব জমি কেনার সাধ্য হয়নি। 

মানববন্ধনে আসা রহিমা বেগম বলেন, “আমার বসবাস ওই বেড়িবাঁধের পাশেই। ভোলাতে আমাদের বসতি ছিল, সাতবার ভাঙার কবলে পড়ে। জন্মের পর থেকে এখানেই আছি। আমাদের পরিবারের মোট পাঁচটি ঘর। বাঁধ সংস্কার হলে তাদের ঘরগুলো সরিয়ে নিতে হবে।” 

৬০ বছরের বৃদ্ধ তৈয়বা বেগম জানান, তার পরিবারের ৫ সদস্য। ঘরে বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে রয়েছে। তাকে নিয়ে রয়েছেন বেকাদায়। এরই মধ্যে ঘর ভেঙে চলে যেতে হবে। তিনিও এখন চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন। 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে ভূমিহীনদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

ঢাকা/লিটন/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লক্ষ্মীপুর বেড়িবাঁধে আশ্রিতরা উচ্ছেদ আতঙ্কে, পুনর্বাসনের দাবি