যে কোনো শান্তি চুক্তিতে ইউক্রেনের নিরাপত্তা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো। তিনি বলেন, এই শান্তি চুক্তি মানে ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ করা নয়, কোনো ধরনের নিশ্চয়তা ছাড়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়া উচিত নয়।

স্থানীয় সময় সোমবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। খবর বিবিসির।

ট্রাম্প নিজেও কোনো ধরনের নিরাপত্তা গ্যারান্টির কথা উল্লেখ করেননি। তবে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে শান্তি রক্ষার ব্যয় শুধু যুক্তরাষ্ট্র একা বহন করবে না; ইউরোপীয় দেশগুলোকেও বহন করতে হবে।

জবাবে ম্যাক্রো বলেন, ইউরোপ ‘নিরাপত্তার বোঝা আরও ন্যায্যভাবে ভাগ করার’ প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছে। রাশিয়ার আক্রমণের তৃতীয় বার্ষিকীতে আলোচনা আরও এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছে বলেও জানান তিনি।

ট্রাম্প বলেন, তিনি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই যুদ্ধ শেষ করতে চান এবং যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতি কার্যকর হোক। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে তিনি রাশিয়া সফর করে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন বলেও ইঙ্গিত দেন। 

তবে ম্যাক্রো দ্রুত যুদ্ধবিরতির পক্ষে নন। বরং তিনি আরও সময় নিয়ে যুদ্ধবিরতির দিকে আগাতে চান। কারণ সীমান্তে শান্তি চুক্তির বিষয়ে স্পষ্ট গ্যারান্টির বিষয়ে উল্লেখ থাকতে হবে। যাতে ইউক্রেনে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি বজায় থাকে। ম্যাক্রো বলেন, আমরা দ্রুতই শান্তি চাই, কিন্তু এমন চুক্তি চাই না যা আমাদের জন্য দুর্বল। 

তবে উভয় নেতা একমত হয়েছেন যে যেকোনো শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করা উচিত। তবে রাশিয়া এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি দীর্ঘমেয়াদি শোষণ, বৈষম্য এবং দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম। এ যুদ্ধে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি বাঙালি সেনাসদস্য, পুলিশ, আনসার ও ইপিআর (পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস) প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিরোধ গড়ে তোলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।

২৫ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তানি সেনারা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ঢাকায় বর্বর হামলা চালালে বাঙালি সেনারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। বিদ্রোহী বাঙালি সেনাসদস্যদের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়, যা ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল সামরিক বাহিনী। পূর্ব পাকিস্তানে থাকা বিভিন্ন সেনা, পুলিশ, ইপিআর ও আনসার সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। বাঙালি সেনারা স্থানীয় জনগণকে সংগঠিত করে বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। 

মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রম আরও কার্যকর করার জন্য বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়, যেখানে প্রতিটি সেক্টরে একজন সেক্টর কমান্ডার দায়িত্ব পালন করেন। উল্লেখযোগ্য সেক্টর কমান্ডাররা হলেন– মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর সফিউল্লাহ, মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত, মেজর মীর শওকত আলী, উইং কমান্ডার বাশার, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর আবু ওসমান চৌধুরী, মেজর জলিল, কর্নেল তাহের প্রমুখ। পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধকে আরও গতিশীল ও আক্রমণাত্মক করার লক্ষ্যে মুক্তিবাহিনীর তিনটি ব্রিগেড (জেড ফোর্স, কে ফোর্স, এস ফোর্স) গঠন করা হয়, যারা সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়। এই সেক্টরভিত্তিক সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ এবং যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করে। সেক্টর কমান্ডাররা বিভিন্ন আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক কর্মকৌশল নির্ধারণের মাধ্যমে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে সফলতা অর্জন করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের সমন্বয়ে গেরিলা কৌশল অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। রেললাইন ও ব্রিজ ধ্বংস এবং শত্রুর রসদ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করে ক্রমান্বয়ে পাকিস্তান বাহিনীকে দুর্বল করাই ছিল গেরিলা যুদ্ধের মূল লক্ষ্য।

বিভিন্ন সেক্টরে পুরো দেশকে ভাগ করার উদ্দেশ্যই ছিল শত্রুকে আলাদাভাবে দুর্বল করে প্রতিহত করা। সেক্টর কমান্ডারদের দক্ষ নেতৃত্ব, যুদ্ধের কৌশল ও সামরিক পারদর্শিতা সেনাসহ সবার মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছিল, যা অতি দ্রুত যুদ্ধে সফলতা এনেছিল। মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ফেনী নদী থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি এবং ফেনী পর্যন্ত ছিল ১ নম্বর সেক্টর। ঢাকা, কুমিল্লা, আখাউড়া-ভৈরব, নোয়াখালী ও ফরিদপুরের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ২ নম্বর সেক্টর, যেখানে নেতৃত্বে ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ। মেজর কেএম সফিউল্লাহ হবিগঞ্জ, আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন থেকে পূর্বদিকে কুমিল্লা জেলার অংশবিশেষ ও কিশোরগঞ্জ এবং ঢাকার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ৩ নম্বর সেক্টরে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। সিলেট জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ৪ নম্বর সেক্টর মেজর সিআর দত্তের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল। ৫ নম্বর সেক্টর ছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং সিলেট জেলার অংশবিশেষ নিয়ে, দায়িত্বে ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী। ৬ নম্বর সেক্টর ছিল দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহকুমা ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী অঞ্চল ব্যতীত সমগ্র রংপুর নিয়ে; নেতৃত্বে ছিলেন উইং কমান্ডার এম কে বাশার। রাজশাহী, পাবনা, ব্রহ্মপুত্র নদ-তীরবর্তী এলাকা ব্যতীত সমগ্র বগুড়া, দিনাজপুরের দক্ষিণাঞ্চল এবং রংপুরের কিছু অংশ ছিল সেক্টর ৭-এর অন্তর্ভুক্ত। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর নাজমুল হক, সুবেদার মেজর এ রব ও মেজর (পরে লে. কর্নেল) কাজী নুরুজ্জামান। ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর (পরে লে. কর্নেল) আবু ওসমান চৌধুরী কুষ্টিয়া, যশোর, দৌলতপুর, সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত খুলনা জেলা ও ফরিদপুরের কিছু অংশে যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন। সেক্টর নম্বর ৯: পটুয়াখালী, বরিশাল ও খুলনার কিছু অংশের দায়িত্বে ছিলেন মেজর এম এ জলিল। সেক্টর নম্বর ১০: সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল, নৌ কমান্ডো ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ছিল এই সেক্টরের অধীনে। এ সেক্টরে নৌ কমান্ডোরা যখন যে সেক্টরে মিশনে নিয়োজিত থাকতেন, সেই সেক্টরের কমান্ডারের নির্দেশে কাজ করতেন। ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা (কিশোরগঞ্জ ব্যতীত) নিয়ে গঠিত হয়েছিল সেক্টর নম্বর ১১। ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। পরে নভেম্বর পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু তাহের ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট (পরে উইং কমান্ডার) এম হামিদুল্লাহ খান। 

সেনাবাহিনীর সদস্যরা শুধু সামরিক যুদ্ধই পরিচালনা করেননি; তারা সাধারণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উৎসাহিত ও প্রশিক্ষিত করেছিলেন। মুক্তিবাহিনীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনারা গ্রামের তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধের উপযোগী করে তোলেন। সেনারা জনগণের সঙ্গে মিলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধ গড়ে স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। 
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অসীম বীরত্ব ও আত্মত্যাগের পরিচয় দিয়েছেন। সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য সম্মুখ যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন। বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত সাতজনের মধ্যে তিনজন ছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্য; যেমন– ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, সিপাহি মোস্তফা কামাল ও সিপাহি হামিদুর রহমান।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৯৩ হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করে, যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সামরিক আত্মসমর্পণ। সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা, কৌশল এবং দৃঢ় মনোবল এই বিজয়ের অন্যতম মূল নিয়ামক।

লে. কর্নেল কামরুজ্জামান পাভেল, পিএসসি: সেনা কর্মকর্তা 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হারের দায় নিয়ে দরিভাল বললেন, ‘হাল ছাড়ব না’ 
  • রাফিনিয়াকে ক্ষমা স্কালোনির, ব্রাজিল কোচের আত্মসমর্পণ
  • আর্জেন্টিনার কাছে ব্রাজিলের ‘অসহায় আত্মসমর্পণ’
  • স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী