পুলিশের ওপর হামলা করে হাতকড়াসহ পালাল ধর্ষণে অভিযুক্ত রাজু
Published: 25th, February 2025 GMT
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে থানা পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) ওপর হামলা করে হাতকড়াসহ পালিয়েছে আসামি। সোমবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ধনারচর চরেরগ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই এসআইকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
হাতকড়াসহ পালানো আসামি শাহনেওয়াজ আবির রাজু (৩০) উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামের আলী আজগরের ছেলে। তার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী স্কুলশিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও মাদক কারবারের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ভুক্তভোগী স্কুলশিক্ষার্থীর পরিবারসহ স্থানীয়দের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ভীতি প্রদর্শন করারও অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, আসামি শাহনেওয়াজ আবির রাজুর বিরুদ্ধে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় এক প্রতিবন্ধী স্কুলশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পর গ্রামবাসীর তোপের মুখে অভিযুক্ত রাজু পরিবারসহ নিজ এলাকা ছেড়ে ধনারচর চরেরগ্রাম এলাকায় তার খালা ও সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য শিরিনা আক্তারের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ভুক্তভোগী স্কুলশিক্ষার্থীর পরিবার পুলিশে অভিযোগ দেয়। ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা ও অস্ত্র প্রদর্শন করে স্থানীয়দের ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে রাজুকে গ্রেপ্তার করতে সোমবার রাতে এসআই আউয়াল হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য শিরিনা আক্তারের বাড়িতে অভিযানে যায়। তল্লাশি চালিয়ে কয়েক পিস ইয়াবাসহ রাজুকে আটক করে হাতকড়া পরায় পুলিশ। এ সময় রাজু ও তার মা এবং খালাতো বোনকে নিয়ে (শিরিনার মেয়ে) পুলিশের ওপর হামলা করে। তারা এসআই আউয়ালের হাতে কামড় দেয় ও তার অণ্ডকোষে আঘাত করে। এসময় সুযোগ পেয়ে হাতকড়াসহ পালিয়ে যায় রাজু।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এসআই আউয়ালকে উদ্ধার করে। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে রাজুর মা আবেদা আক্তার রাজিয়া (৪৮) ও খালাতো বোন রুনা আক্তারকে (২৩) আটক করে থানায় নেওয়া হয়। এ সময় ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি দেশি রাম দা উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল বাতেন বলেন, সোমবার রাতে পুলিশের অভিযান চলে। এ সময় পুলিশকে আঘাত করে আসামি রাজু হাতকড়াসহ পালিয়েছে।
রৌমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা.
রৌমারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মমিনুল ইসলাম বলেন, আমি সাক্ষী দেওয়ার জন্য কর্মস্থলের বাইরে আছি। বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে জেনেছি যে, পুলিশ সদস্যকে কামড় দিয়ে আহত করেছে। সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
কথা হয় রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এসআই আওয়ালের হাতে কামড় দিয়ে পালিয়েছে ধর্ষণ মামলার আসামি রাজু। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাদক ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পরপর চারটি ইনজেকশন প্রয়োগ, মুহূর্তেই ছটফট করে নারীর মৃত্যু
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ঘরেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন স্ট্রোকের রোগী নাজমা বেগম (৫০)। সেখানে অসুস্থ নাজমাকে চিকিৎসার নামে দেওয়া হয় পরপর চারটি ইনজেকশন। মুহূর্তেই ছটফট করে মারা যান ওই নারী। এ ঘটনার নিহত নাজমা বেগমের সাবেক স্বামী আক্তার হোসেন (৬৫) ও ইদ্রিস চৌধুরী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট এলাকায় পুরোনো দাইয়া বাড়িতে বোনের বাসায় ছিলেন নাজমা বেগম। ইনজেকশন প্রয়োগের ফলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। এরপর গতকাল রাতে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে নিহত নাজমার বর্তমান স্বামী সাহাব উদ্দিন বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় আজ সকালে পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার আক্তার হোসেনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার দশদনা গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদের হাজীপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। গ্রেপ্তার অপর ব্যক্তি ইদ্রিস চৌধুরীর বাড়ি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম। তিনিও আগ্রাবাদ এলাকায় থাকতেন। ইদ্রিস নিজেকে পল্লিচিকিৎসক বলে দাবি করেন। নাজমাকে ইনজেকশনও দিয়েছিলেন তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নাজমা বেগম ২ ফেব্রুয়ারি স্ট্রোক করেন। তাঁর শরীরের ডান পাশ অবশ হয়ে পড়েছিল। পরে তাঁর স্বামী সাহাব উদ্দিন তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর চিকিৎসক নাজমা বেগমকে বাসায় নিয়ে পরবর্তী চিকিৎসা করাতে বলেন। এরপর ছাড়পত্র নিয়ে নাজমা সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট এলাকায় তাঁর বোনের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল।
গতকাল শনিবার দুপুরে নাজমার সাবেক স্বামী আক্তার হোসেন ইদ্রিস চৌধুরী নামের একজন পল্লিচিকিৎসককে নিয়ে ফৌজদারহাটের বাড়িতে যান। এরপর পল্লিচিকিৎসক নামধারী ইদ্রিস চৌধুরী তাঁকে পরপর চারটি ইনজেকশন দেন। এতে নাজমার মৃত্যু হলে স্থানীয় বাসিন্দারা আক্তার ও ইদ্রিসকে আটক করে পুলিশে খবর দেন।
এসআই আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত নারীর লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এসআই আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইদ্রিস চৌধুরী নিজেকে পল্লিচিকিৎসক দাবি করলেও কোনো ধরনের সনদ দেখাতে পারেননি। ফার্মেসিতে কাজ করে তিনি চিকিৎসা করা শিখেছেন বলে দাবি করেন। সেই আলোকে তিনি নাজমা বেগমের শরীরে ইনজেকশন প্রয়োগ করেছিলেন।