ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত ৬ আগস্ট গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালানো আসামিদের একজন বুয়েটশিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুনতাসির আল জেমি (২৬)। তাঁর বন্দী নম্বর ৫১৭৭। তাঁর বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায়।

এ বিষয়ে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবাই মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। পলাতকদের মধ্যে আবরার হত্যা মামলার একজন আসামি ছাড়া আলোচিত আর কোনো মামলার আসামি নেই।

পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর কাশিমপুর কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৯৯ আসামি পালিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে স্বেচ্ছায় ফিরে আসা ও গ্রেপ্তার আসামির সংখ্যা ৫৩ জন। বাকি ১৪৬ আসামি এখনো পলাতক।

আরও পড়ুনমৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কারাগার থেকে পালানোর খবরে মধ্যরাতে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ১১ ঘণ্টা আগে

পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ আগস্ট বন্দীরা কারাগারের ভেতর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বিশৃঙ্খলা ও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে কারাবিধি অনুযায়ী প্রথমে তাদের সতর্ক করা হয়। বন্দীরা দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে ২৫-৩০ কারারক্ষীকে গুরুতর আহত করেন। একপর্যায়ে তাঁরা কারাগারের দেয়াল ভেঙে ফেলেন এবং বৈদ্যুতিক পোল উপড়ে মই বানিয়ে দেয়াল টপকে পালিয়ে যান। বিশৃঙ্খলা ও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে ছয়জন বন্দী নিহত হন।

কারাগার থেকে আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গত ১৫ আগস্ট কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের জেলার মো.

লুৎফর রহমান বাদী হয়ে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৩ জনকে কোনাবাড়ী থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আবরার ফাহাদের ছোট ভাই ও বুয়েটশিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় তাঁর ফেসবুক পোস্টে মুনতাসির আল জেমির পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আবরার ফাহাদ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেমি জেলখানা থেকে পালিয়ে গেছে ৫ আগস্টের পর। অথচ আমাদের জানানো হচ্ছে আজকে, যখন ওর আইনজীবী কোনো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে আসেনি, তখন। ফাঁসির আসামির তো কনডেমড সেলে থাকার কথা ছিল, সে পালায় কীভাবে! পালানোর পরও এ তথ্য বাইরে না আসা তো এটাই প্রমাণ করে যে তাঁকে ধরতেও কোনো চেষ্টা করা হয়নি। পূর্বে থেকেই আরও তিনজন পলাতক আছে।’

২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাতে বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী পিটিয়ে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এ মামলায় আরও পাঁচ শিক্ষার্থীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

কাশিমপুর থানায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। অন্যদের গ্রেপ্তার করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবর র ফ হ দ আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ‘স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে’ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

রাজধানীর বনশ্রীতে গতকাল রোববার রাতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ‘স্বর্ণালংকার ছিনিয়ের’ ঘটনার একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটির যথার্থতা নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিওটি ৩২ সেকেন্ডের। ভিডিওটি ঘটনাস্থলের কোনো ভবনের ওপরের দিক থেকে তোলা বলে মনে হয়।

ব্যাপক চিৎকার-চেঁচামেচি দিয়ে ভিডিওটি শুরু হয়। ভিডিওর পুরোটা সময়জুড়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শোনা যায়। ভিডিওর শুরুর দিকে যাঁর চিৎকার বেশি শোনা যাচ্ছিল, তিনি সম্ভবত ‘ভুক্তভোগী’ ব্যক্তি। তিনি ‘ও আম্মা গো’ বলে বারবার চিৎকার করছিলেন।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, রাতের বেলা একটি বাসার সামনে এক ব্যক্তির সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছেন একজন। তাঁদের একজন নিচে, অপরজন ওপরে। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো ছিলেন দুই ব্যক্তি। দুজনেরই মাথায় হেলমেট। একজনের মাথায় কালো রঙের হেলমেট, অপরজনের লাল রঙের হেলমেট। তিনটি মোটরসাইকেল কাছে এসে দাঁড়ায়। তখন তিনটি মোটরসাইকেলে মোট চারজন আরোহী ছিলেন। একটিতে চালকসহ দুজন আরোহী ছিলেন। দুটি মোটরসাইকেল কাছেই দাঁড়িয়ে থাকে। অপরটি একটু সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

ধস্তাধস্তিতে নিচে পড়া ব্যক্তির হাত থেকে ব্যাগের মতো দেখতে কিছু একটা ছিনিয়ে নেন কালো হেলমেট পড়া ব্যক্তি। একজনের সঙ্গে ধস্তাধস্তির মধ্যে ‘ভুক্তভোগী’ ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে কিছুটা দূর থেকে গুলি করেন লাল হেলমেট পরা ব্যক্তি। তখনো একজনের সঙ্গে ভুক্তভোগীর ধস্তাধস্তি চলছি। গুলির পর ভুক্তভোগী ব্যক্তি তাঁর হাতে ছাড়িয়ে পেছনের দিকে দ্রুত সরতে থাকেন।

ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া ব্যক্তি কিছু দৌড়ে গিয়ে একদম সামনে থাকা মোটরসাইকেলটির পেছনে চেপে বসেন।

লাল হেলমেট ধারীসহ অন্য দুজন আরেকটি মোটরসাইকেলের পেছনে বসেন। পরে মোটরসাইকেল তিনটি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।

মোটরসাইকেল তিনটি চলে যাওয়ার পর ভিডিওতে কাউকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়, ছিনতাইকারী...ছিনতাইকারী? তখন আরেকজন বলেন, হ্যাঁ, ছিনতাইকারী।

রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান আকন্দ বলেন, ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম মো. আনোয়ার। তিনি স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তাঁর দোকান বনশ্রী ডি ব্লকে। গতকাল রাতে দোকান থেকে বাসায় ফেরার সময় তিনি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। একই ব্লকে তাঁর বাসার সামনেই এই ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে, ছুরিকাঘাত করে। তাঁর কাছে থাকা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়েছেন ছিনতাইকারীরা।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ছিনতাইকারীরা তাঁর কাছ থেকে ২০০ ভরি স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়েছে।

আহত অবস্থায় আনোয়ারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, আনোয়ারের শরীরে গুলি ও কোপের চিহ্ন রয়েছে।

ওসি আতাউর রহমান আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে করছেন তাঁরা। এই ঘটনায় মোট সাতজন সরাসরি জড়িত। তাঁদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের ধরার চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুনবনশ্রীতে বাসার সামনে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি, ‘২০০ ভরি স্বর্ণালংকার’ ছিনতাই১১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছেন হিলির জাহের উদ্দিন
  • পা ছুঁয়ে প্রণাম শ্রাবন্তীর, ‘মেয়ে’ সম্বোধন করলেন প্রসেনজিৎ
  • সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের মৃত্যুতে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদের শোক
  • নির্মাণাধীন বিমানঘাঁটিতে হামলা-গুলি, যুবক নিহত
  • আওয়ামী লীগের ‘ঘুরে দাঁড়ানোর’ আট উপায়
  • মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইনে হাঁটার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু
  • চট্টগ্রামে হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড দিলেন আদালত
  • আমাদের একজন ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী ছিলেন!
  • বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ‘স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে’ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল