ঢাকা-রাজশাহী রুটের একটি বাসে ডাকাতি ও নারীদের শ্লীলতাহানির পর থেকে নাইট কোচে উঠতে নারীদের ভয় করছে। বিশেষ করে রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর নারী যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রয়োজনের তাগিদে তারা যাতায়াত করছেন ঠিকই, কিন্তু বাসে ওঠার আগে নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবছেন অনেকে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলসের একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে চলন্ত বাসে ডাকাতি শুরু হয়। প্রায় তিনঘণ্টা ধরে ডাকাতি শেষে একই জায়গায় বাসটি ঘুরিয়ে নিয়ে ভোর ৪টার দিকে ডাকাতরা নেমে যায়। তার আগে বাসের সব যাত্রীর সর্বস্ব লুটে নেওয়া হয়। বাসটিতে ৬৩ জন যাত্রীর মধ্যে ৮-১০ জন নারী ছিলেন। ডাকাতদলের তল্লাশির সময় তারা শ্লীলতাহানির শিকার হন।
আরো পড়ুন: চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি, গ্রেপ্তার ৩
আরো পড়ুন:
পুনরায় চালু হচ্ছে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’
গাজীপুরে বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
এই ঘটনার পর ঢাকা-রাজশাহী রুটের ইউনিক রোড রয়েলসের বাসে যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। লোকাল এই বাসের রাজশাহী কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মো.
তিনি দাবি করেন, “যাত্রীর নিরাপত্তা তাদের কাছে আগে। রাত-বিরাতে পাশের সিটে যদি নারী না থাকেন, তাহলে একজন নারীকে বাসের টিকিট দেওয়া হয় না। ঢাকাগামী অন্য কোচের তুলনায় তাদের ভাড়া অর্ধেক।”
আরো পড়ুন: চলন্ত বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি, ২ থানা ঘুরে মামলা
ঢাকা-রাজশাহী রুটে যে কয়েকটি কম্পানির উন্নতমানের বাস চলে তার মধ্যে গ্রামীণ ট্রাভেলস অন্যতম। এই বাসের রাজশাহী কাউন্টারের মাস্টার আশিকুল ইসলাম বলেন, “বাসে ডাকাতির ঘটনার পর নারীরা একটু উদ্বিগ্ন বলে মনে হয়েছে। কেউ কেউ বাসে ওঠার আগে আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আমাদের নিরাপত্তা বলতে তো নারীর পাশে নারীর সিট দেওয়া, এইটুকুই আমরা করে যাচ্ছি। এটা আগে থেকেই করি।”
গাজীপুরের একটি পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ করেন রাজশাহীর সেলিনা খাতুন। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে তিনি গাজীপুর যাওয়ার জন্য রাজশাহীর শিরোইলে একটি লোকাল বাসে বসেছিলেন। সম্প্রতি বাসে ডাকাতি ও নারীদের শ্লীলতাহানির খবর তিনিও পেয়েছেন।
আরো পড়ুন: বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি: বড়াইগ্রামের ওসি প্রত্যাহার
কথা হলে সেলিনা খাতুন বলেন, “খবরটা দেখার পর থেকেই ভয় লাগছে। রাতে যাবই না ভেবেছিলাম। কিন্তু সুপারভাইজার কল দিচ্ছে। কালই কাজে যোগ দিতে হবে। বাধ্য হয়ে তাই রাতেই যাওয়া লাগছে।”
বাস স্ট্যান্ডে কথা হয় আরেক যাত্রী তানিশা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, “যে অবস্থা এখন দেখলাম, জরুরি না হলে রাতে বাসে যেতামই না। ট্রেনের টিকিটের চেষ্টা করেছিলাম, হলো না। ফলে বাধ্য হয়ে বাসেই যেতে হবে। রাস্তাঘাটে কপালে কী অপেক্ষা করছে কে জানে?”
ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর কাউন্টারে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, ডাকাতির ওই ঘটনার পর যাত্রীর সংখ্যা কমেনি। প্রয়োজনের তাগিদে তাদের যেতেই হচ্ছে। তবে, নারীরা দিনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বেশি। যদিও বিভিন্ন স্থানে ভর্তি পরীক্ষার কারণে পার্থক্যটা তেমন বোঝা যাচ্ছে না।
ঢাকা-রাজশাহী রুটের লোকাল বাস শিশির-এর সুপারভাইজার মো. লিটন। শিরোইল এলাকায় বাসের জন্য যাত্রী ডাকতে দেখা যায় তাকে। ডাকাতির ঘটনার পর কী প্রভাব পড়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পার্থক্য তেমন নেই। মানুষকে প্রয়োজনের তাগিদে যেতেই হচ্ছে। করোনার সময় তো গোটা বাংলাদেশ বন্ধ ছিল, তাও মানুষ গন্তব্যে গেছে। এই যে এত এত দুর্ঘটনা রাস্তায় হচ্ছে, তাও কি মানুষ যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে? করেনি। কিন্তু ভয় তো একটা থাকছেই।”
তিনি আরো বলেন, “আগেও এমন ডাকাতির ঘটনা অহরহ ঘটেছে। তারপর কমে গিয়েছিল। এখন প্রশাসনে একটু ঘাটতি রয়েছে, তাই এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটে গেছে। ফেসবুকের যুগে এই একটা ঘটনা ভাইরালও হয়ে গেছে। ফলে যাত্রীদের মধ্যে একটু বেশি আতঙ্ক আছে। তারা (যাত্রী) লোকাল বাসে না গিয়ে, অন্তত ভালো বাসে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কয়েকদিন ধরে এটাই মনে হচ্ছে।”
রাজকীয় পরিবহনের কাউন্টারে বসেছিলেন যাত্রী কুরবান আলী। তিনি বলেন, “আমরা তো ভালো বাসে ১০০০-১২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে পারি না। ২৫-৩০০ টাকায় লোকাল বাসে যাতায়াত করি। এই বাসেই ডাকাতি হয়েছে। এ রকম ঘটনা যাতে আর না হয়, সেজন্য রাস্তায় পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা উচিত।”
জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, “লোকাল বাসে এইগুলো (চুরি-ডাকাতি) বেশি হচ্ছে। টাঙ্গাইলের ঘটনার পর যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আগে বাস ছাড়ার আগে যাত্রীদের ভিডিও করে নেওয়া হতো। সেটা মাঝে বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেটা আবার চালু করা হচ্ছে। আমরা নিজেরাই বাস ছাড়ার আগে এবং পথের বিভিন্ন স্থানে এটা শুরু করেছি।”
তিনি আরো বলেন, “পাশাপাশি বাসে সিসি ক্যামেরা চালু রাখা যায় কি না, যেটা কাউন্টার থেকেই সরাসরি দেখা যাবে- এই বিষয়টি নিয়েও আমরা কাজ করছি। এক্ষেত্রে বাস মালিকদেরও সহযোগিতা দরকার।”
ডিআইজি বলেন, “মহাসড়কে আমাদের পেট্রোলিং বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের সঙ্গেও সমন্বয় করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি. দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নতি করে ফেলতে পারব।”
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন ড ক ত র ঘটন ঘটন র পর আম দ র ন র পর র একট
এছাড়াও পড়ুন:
আশা করি অন্তবর্তী সরকার জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করবে: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকের এ দিনে আমরা আশা করব, যেই দায়িত্ব নিয়েছেন সেই দায়িত্বে সবাই সফল হবেন এবং বিশেষ করে অন্তবর্তী সরকার জনগণের কাছে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করবে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকেও অবশ্যই সেই প্রতিশ্রুতি পালন করব বলে শপথ নিয়েছি।
ঈদের দিন আজ সোমবার সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
ফ্যাসিবাদ সরকারের শাসনামলের থেকে ‘এবার ঈদ আনন্দময় পরিবেশে হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের এই পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে প্রত্যেকটি বাংলাদেশি মানুষ যেন আনন্দের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারেন, সেজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি। দোয়া চেয়েছি আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দ্রুত আমাদের কাছে ফিরে আসেন এবং আমাদের নেতা তারেক রহমান তিনি যেন অতি শিগগিরই আমাদের মাঝে ফিরে আসেন, সেই দোয়া চেয়েছি।
গত ১৫ বছরের ঈদের সঙ্গে এবারকার ঈদের কি পার্থক্যটা কি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক পার্থক্য। এবার আমরা মুক্ত পরিবেশে একটা আনন্দময় পরিবেশে আমরা ঈদ পালন করছি।
আজ সকাল সাড়ে ১১টায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান শেরে বাংলা নগরে জিয়া উদ্যানে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে এসে তার কবরে ফুল দেন এবং দোয়া করেন। এ সময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন- আহমেদ আজম খান, আমান উল্লাহ আমান, মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মীর সরফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, সাইফুল আলম নিরব, মীর নেওয়াজ আলী, রফিক শিকদার, এসএম জাহাঙ্গীর, আমিনুল হকসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়া ও তারেকের ঈদ শুভেচ্ছা
জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পরে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদেন বলেন, আমরা দলের পক্ষ থেকে, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পক্ষ থেকে আমরা আপনাদের (গণমাধ্যম) সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি… ঈদ মোবারক… আপনাদের মাধ্যমে আমরা পুরো দেশবাসীর কাছে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি… ঈদ মোবারক।
তিনি বলেন, আজকে আমরা জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে এসেছিলাম। আমরা পরম করুণাময় আল্লাহতালার কাছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছি। আমরা একইসঙ্গে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ট পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, একইসঙ্গে বিগত গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোতে যারা প্রাণ দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন তাদেরও আত্মর মাগফেরাত কামনা করেছি। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা এদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছি এবং গণতন্ত্রের জন্য বিগগ ১৫ বছর ও জুলাই-আগস্টে যারা শহীদ হয়েছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছি।”
ফখরুল বলেন, আজকের এই পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে প্রত্যেকটি বাংলাদেশি মানুষ যেন আনন্দের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারেন, সেজন্য আল্লাহর কাছে আমরা দোয়া করেছি। দোয়া চেয়েছি আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দ্রুত আমাদের কাছে ফিরে আসেন এবং আমাদের নেতা তারেক রহমান তিনি যেন অতি শিগগিরই আমাদের মাঝে ফিরে আসেন সেই দোয়া চেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা যে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম করেছি, মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য যে সংগ্রাম করেছি, মানুষের ভাতের অধিকারের জন্য যে সংগ্রাম করেছি, মানবাধিকারের জন্য যে সংগ্রাম করেছে, সেই সংগ্রাম যেন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সেজন্য পরম আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি।