ঝিনাইদহের শৈলকুপায় পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা হানিফ আলীসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করেছে র‍্যাব। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের সার্কিট হাউস এলাকা এবং গাজীপুরের সোনাতলা এলাকা থেকে তাঁদের আটক করা হয়।

আটক ব্যক্তিরা হলেন হরিণাকুণ্ডু উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের আবু সাঈদ (৩৯) ও জোড়াপুকুরিয়া গ্রামের আনারুল ইসলাম (৩৬)। ঘটনায় তাঁদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

আরও পড়ুনঝিনাইদহে তিনজনকে গুলি করে হত্যা, দায় স্বীকার করে চরমপন্থী সংগঠনের বার্তা ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

র‍্যাব-৬ ঝিনাইদহ ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর নাঈম আহমেদ জানান, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কমান্ডার ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের হানেফ আলী, শ্রীরামপুর গ্রামের লিটন ও কুষ্টিয়ার পিয়ারপুরের রাইসুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় শৈলকুপা থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ওই মামলার আসামিদের ধরতে অভিযান শুরু করে র‍্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা শহরের সার্কিট হাউসসংলগ্ন এলাকা থেকে আবু সাঈদকে আটক করা হয়। ঠিক একই সময় র‍্যাবের পৃথক দল গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার সোনাতলা এলাকা থেকে আনারুল ইসলামকে আটক করে। তাঁদের শৈলকুপা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনস্থানীয়রা রাতে কয়েকটি গুলির শব্দ পান, তবে ভয়ে বের হননি কেউ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর ত্রিবেণি শ্মশান খাল এলাকায় দুই সহযোগীসহ গুলিতে নিহত হন হানেফ আলী (৫৬) ও তাঁর দুই সহযোগী। বাকি দুজন হলেন হানেফের শ্যালক উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের লিটন হোসেন (৩৫) ও কুষ্টিয়া পিয়ারপুর গ্রামের রাইসুল ইসলাম (২৫)। ওই রাতেই হত্যার দায় স্বীকার করে চরমপন্থী সংগঠন জাসদ গণবাহিনীর নেতা কালু পরিচয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়। যদিও এ বার্তা নিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুনফুটবলার থেকে চরমপন্থী নেতা, মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচলেও প্রাণ হারালেন গুলিতে৩ ঘণ্টা আগে

এ ঘটনায় গতকাল সোমবার সকালে শৈলকুপা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ থেকে ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন হানেফ আলীর ভাই ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আটক আনারুল অস্ত্র, হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় অনেক বছর জেল খেটে কয়েক মাস আগে বের হন। তিনি ঝিনাইদহ শহরের খাজুরা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। ধারণা করছি, আমার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আনারুল।’

আরও পড়ুন‘আমার সবকিছু শেষ, এখন আমার কী হবে’২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ ন ফ আল উপজ ল র ঝ ন ইদহ ল ইসল ম ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

বিকেলে ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হন রাইসুল, রাতে পাওয়া যায় লাশ

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় গতকাল শুক্রবার রাতে যে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের একজন রাইসুল ইসলাম (২৮)। বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আবদালপুর ইউনিয়নের পিয়ারপুর গ্রামে। বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলের দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার।

রাইসুলের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, রাইসুল কোনো সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। কেন, কী কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, তা বলতে পারছেন না। তবে সম্প্রতি এলাকার কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে টাকা লেনদেন নিয়ে বিরোধ চলছিল তাঁর।

গতকাল রাত ১১টার দিকে শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর মাঠের মধ্যে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের হানিফ আলী, তাঁর শ্যালক লিটন হোসেন ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামের রাইসুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার বিষয়ে চরমপন্থী সংগঠন জাসদ গণবাহিনীর নেতা কালুর নাম দিয়ে দায় স্বীকার করে গণমাধ্যমকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হয়।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাতে এই এলাকায় তাঁরা একাধিক গুলির শব্দ শুনতে পান। পরে তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ইবি থানার পিয়ারপুর ও শৈলকুপায় রামচন্দ্রপুর গ্রামের মাঠের মধ্যে শ্মশানঘাট এলাকায় তিনজনকে গুলি করে হত্যার পর ফেলে রাখা হয়েছে। তাঁরা এগিয়ে গিয়ে দেখতে পান তিনজনের মৃতদেহ পড়ে আছে। পাশে তাঁদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল পড়ে আছে।

আরও পড়ুনস্থানীয়রা রাতে কয়েকটি গুলির শব্দ পান, তবে ভয়ে বের হননি কেউ৫ ঘণ্টা আগে

রাইসুলের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী বাবার নাম আরজেদ আলী ও মায়ের নাম রেহেনা পারভিন। ঠিকানা সদর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রাম। তবে তাঁর বাবার বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মানিকদিয়াড় গ্রামে। মাত্র আড়াই বছর বয়স থেকে পিয়ারপুর গ্রামে নানা ইব্রাহীম সরদারের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে চলে আসেন। সেখানে তাঁর বাবাও থাকতেন। দুই মাস আগে তিনি মারা গেছেন।

আজ দুপুর ১২টার দিকে পিয়ারপুর গ্রামে রাইসুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা-নানিসহ স্বজনেরা আহাজারি করছেন। প্রতিবেশীরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। নানা ইব্রাহীম হোসেন নির্বাক হয়ে বসে আছেন। পাশে বসে কেঁদেই যাচ্ছেন নানি কদ ভানু।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাইসুলের মা রেহেনা পারভিন জানান, গতকাল বিকেল পর্যন্ত রাইসুল বাড়িতেই ছিলেন। বিকেল পাঁচটার কিছু সময় পর তাঁর মুঠোফোনে কল আসে। রাইসুল ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তির উদ্দেশে বলেন, ‘বড় ভাই আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।’ এই বলে মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে যান তিনি। এরপর রাত নয়টার দিকে কল দিলে নম্বর বন্ধ পান।

গুলিতে নিহত রাইসুল ইসলামের নানি কেঁদেই যাচ্ছিলেন। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামের বাড়িতে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফুটবলার থেকে চরমপন্থী নেতা, মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচলেও প্রাণ হারালেন গুলিতে
  • ‘আমার সবকিছু শেষ, এখন আমার কী হবে’
  • ঝিনাইদহে জাসদ গণবাহিনীর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জাবিতে বিক্ষোভ
  • ২ দিনেও মামলা হয়নি, আটক নেই কেউ
  • ৬ শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি আটকে দিলো ইসরায়েল
  • জিম্মিদের ফেরত পেয়েও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিলেন না নেতানিয়াহু
  • ছয় জিম্মিকে ফেরত পেয়েও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিলেন না নেতানিয়াহু
  • শৈলকুপায় গুলিতে নিহত ৩: চরমপন্থি সংগঠনের বিরোধ নাকি বাঁওড় দখল, মিলছে না সূত্র
  • বিকেলে ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হন রাইসুল, রাতে পাওয়া যায় লাশ