থাইল্যান্ডে আসন্ন বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যোগ দিচ্ছেন। ভারত সরকারিভাবে এ খবর থাইল্যান্ড সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে।

গতকাল সোমবার সরকারি সূত্র এ খবর জানানোর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎকারের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা।

বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে মুহাম্মদ ইউনূস যোগ দিচ্ছেন। ওই সম্মেলন থেকেই বিমসটেকের পরবর্তী সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ দায়িত্ব গ্রহণ করবে। থাইল্যান্ডে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৩ ও ৪ এপ্রিল। থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়াও এ সংগঠনের অন্য সদস্যদেশ হচ্ছে মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটান।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে ২০২৪ সালের আগস্টে। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সে সময় মোদি তাঁকে অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছিলেন। পরে দুজনের টেলিফোনে কথাও হয়েছিল। কিন্তু এখনো দুজনের সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে নরেন্দ্র মোদির দেশে ফেরার পর অধ্যাপক ইউনূস নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন। সেখানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের।

তোহিদ হোসেনের সঙ্গে জয়শঙ্করের দ্বিতীয় বৈঠক হয় চলতি মাসে ওমানের মাসকটে ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে। সেখানে আসন্ন বিমসটেকের আসরে দুই নেতার সাক্ষাতের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক এখনো স্বাভাবিক হয়নি। ভারত এখনো সে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি বড় করে তুলে ধরছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ আপত্তি জানিয়ে আসছে, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া ও তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্যে রাশ না টানা নিয়ে। হাসিনাকে দেশে বিচারের জন্য ফেরত পাঠানোর দাবিও বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। ভারত সে বিষয়ে এখনো কোনো উচ্চবাচ্য করেনি।

এ অবস্থায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বাংলাদেশ চায় কি না, তা তাকে আগে ঠিক করতে হবে। মুখে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা বলবে অথচ সরকারেরই কেউ কেউ ভারতবিরোধী মন্তব্য করবে—দুটি একসঙ্গে চলতে পারে না।

জয়শঙ্করের ওই মন্তব্যের জবাবে তৌহিদ হোসেনও গতকাল সোমবার বলেন, বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত তারা অবশ্যই নেবে। কিন্তু ভারতকেও ঠিক করতে হবে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কোন ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত স্পষ্ট, আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। সেই সম্পর্কের ভিত্তি হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্বার্থ।’

তৌহিদ হোসেন এ কথাও জানাতে ভোলেননি, ভারতীয় আতিথেয়তায় থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী যে ধরনের কথাবার্তা বলছেন, দুই দেশের সম্পর্কের জন্য তা ক্ষতিকর। তাঁর বক্তব্য আগুনে ঘৃতাহুতি দিচ্ছে। এটা স্বীকৃত।

বিমসটেকের আসরে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎকারের দিকেই আপাতত দুই দেশের দৃষ্টি নিবদ্ধ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশকেই ঠিক করতে হবে তারা কেমন সম্পর্ক চায়: জয়শঙ্কর

ভারতের সঙ্গে  কী ধরনের সম্পর্ক চায়, সেই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এ সময় তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ‘ভারতবিরোধী’ বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ আখ্যায়িত করেন।

শনিবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য উৎসবে বাংলাদেশ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এস জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছি- আমরা এমন কোনো আচরণ দেখতে চাই না, যা ভারতের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ সংকেত দেয়। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা আমাদের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক চায়। ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক যেন স্বাভাবিক থাকে, ভারত সেটাই চায়। আমরা প্রতিবেশীদের সর্বদা শুভকামনা জানাই। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেবল দীর্ঘ নয়, এটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক বিশেষ ইতিহাস।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত বছর সেখানে যা ঘটেছে, তা সবাই জানে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির দুটি দিক ভারতের জন্য ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’। প্রথমত, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা। আমি মনে করি, এটি স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে এবং এ বিষয়ে আমাদের কথা বলা প্রয়োজন। যা আমরা এরই মধ্যে করেছি। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা আমাদের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক চায়। কারণ প্রতিদিন যদি বাংলাদেশের কেউ, যারা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আছেন তারা যদি দাঁড়িয়ে সবকিছুর জন্য ভারতকে দোষারোপ করে এবং কিছু জিনিস যদি আপনি প্রতিবেদনগুলোতে দেখেন, তাহলে তা একেবারেই হাস্যকর। আমি যদি প্রতিদিন সকালে উঠেই আপনাকে দোষারোপ করতে থাকি, তখন আপনি একা একা বলতে পারবেন না যে, আমি আপনার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাই। তাহলে এই সিদ্ধান্তটা তাদেরই নিতে হবে, তারা আমাদের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়।

জয়শঙ্কর আরও বলেন, আমরা চাই পরিস্থিতি শান্ত হোক, বাণিজ্য, পারস্পরিক যোগাযোগ ও অন্যান্য সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকুক। কিন্তু আমরা এমন কোনো বার্তা বা আচরণ দেখতে চাই না, যা বারবার ভারতের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ সংকেত দেয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সব ঘটনার জন্য ভারতকে দায়ী করে যাচ্ছে বাংলাদেশ, এটা হাস্যকর
  • ‘কেমন সম্পর্ক চায়?’ ভারতের পাল্টা বাংলাদেশের
  • ভারতে বসে শেখ হাসিনার বক্তব্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ভারতে বসে শেখ হাসিনার বক্তব্য আগুনে ঘৃতাহুতি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ভারতের সঙ্গে কোন ধরনের সম্পর্ক চায়: জয়শঙ্কর
  • বাংলাদেশকেই ঠিক করতে হবে তারা কেমন সম্পর্ক চায়: জয়শঙ্কর