মোরগের বিরুদ্ধে নালিশ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে
Published: 25th, February 2025 GMT
রাত ৩টা, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন চারপাশ। হঠাৎই ডাকতে শুরু করে প্রতিবেশীর মোরগ। এভাবে প্রতিদিন ঠিক রাত ৩টায় মোরগ চিৎকার করে ডাকাডাকি শুরু করে, ঘুম ভেঙে যায় রাধাকৃষ্ণ কুরুপের।
রাধাকৃষ্ণ কুরুপের বয়স হয়েছে। এই বয়সে স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ঘুম খুব জরুরি। কিন্তু মোরগের ডাকে প্রতিরাতে ঘুম ভেঙে যায় এই বৃদ্ধের। একসময় অতিষ্ঠ হয়ে তিনি প্রতিবেশীর মোরগের নামে উপবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নালিশ করে বসেন।
রাধাকৃষ্ণের বাড়ি ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কেরালায়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, মোরগের ডাকাডাকিতে তিনি ঘুমাতে পারছেন না। এর প্রভাব তাঁর স্বাস্থ্যের ওপর পড়ছে।
রাধাকৃষ্ণের দাবি, মোরগ ঠিক রাত ৩টা থেকে ক্রমাগত ডাকতে শুরু করে। যে কারণে তাঁর পক্ষে বিশ্রাম নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তিনি এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাইছিলেন।
এ কারণে প্রতিবেশী অনিল কুমারের মোরগের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে নালিশ জানাতে তিনি স্থানীয় রেভিনিউ ডিভিশনাল অফিসে (আরডিও) হাজির হন। তাঁর অভিযোগ, অনিলের মোরগ প্রতিরাতে তাঁর ঘুম নষ্ট করছে।
রাধাকৃষ্ণের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে নেয় আরডিও কর্তৃপক্ষ। প্রথমে তারা রাধাকৃষ্ণ ও অনিলকে তাদের কার্যালয়ে ডেকে পাঠায়। পরে তদন্তে নেমে আরডিও কর্তৃপক্ষ দেখতে পায়, মোরগের ক্রমাগত ডেকে যাওয়ার শব্দ সত্যি বিরক্তিকর।
তদন্তে নেমে কর্তৃপক্ষ আরও একটি বিষয় লক্ষ করে। তারা দেখতে পায়, রাধাকৃষ্ণের প্রতিবেশী অনিলের বাড়ির ওপরের তলায় মোরগের খাঁচা রাখা। ওপরের তলায় থাকায় মোরগ যখন ডাকে, আশপাশ থেকে শব্দ আরও বেশি জোরে শোনা যায়।
এ সমস্যার সমাধান করতে আরডিও কর্তৃপক্ষ মোরগের মালিককে ১৪ দিনের মধ্যে সেটির খাঁচা সরিয়ে ফেলতে বলেছে। বলেছে, বাড়ির দক্ষিণ প্রান্তের কোথাও খাঁচা রাখতে।
রাধাকৃষ্ণের এই অভিযোগ দায়ের পোষা প্রাণী ও বাড়িতে পশুপাখি পালন নিয়ে প্রতিবেশীদের মধ্যে সৌহার্দ্য নষ্ট হওয়ার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা উসকে দিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের
‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।
এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।