ইন্টারনেট ‘শাটডাউন’ চিরতরে বন্ধে স্টারলিংককে বাংলাদেশে আনা হচ্ছে: প্রেস সচিব
Published: 25th, February 2025 GMT
ইলন মাস্কের স্টারলিংককে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো এবং তা চালু করার মূল কারণ হচ্ছে ইন্টারনেট ‘শাটডাউন’ চিরতরে বন্ধ করা।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আজ মঙ্গলবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম তাঁর পোস্টে লিখেছেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার ১৬ বছরের শাসনকালে অনেকবার ইন্টারনেট বন্ধ করেছে। বিক্ষোভ দমন করতে বা বিরোধী কোনো বড় আন্দোলন দমন করার ক্ষেত্রে স্বৈরশাসক ও একনায়কদের প্রিয় একটি হাতিয়ার হচ্ছে ইন্টারনেট শাটডাউন। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় লাখো ফ্রিল্যান্সার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। কেউ কেউ তাঁদের চুক্তি এবং চাকরি চিরতরে হারান।
শফিকুল আলম লিখেছেন, বাংলাদেশের বাজারে স্টারলিংকের আগমনের অর্থ হলো, ভবিষ্যতে কোনো সরকারই ইন্টারনেট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে পারবে না। ইন্টারনেট বন্ধ করার নতুন কোনো চেষ্টায় নিদেনপক্ষে বিপিও প্রতিষ্ঠান, কল সেন্টার ও ফ্রিল্যান্সাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
মাস্ককে আমন্ত্রণস্টারলিংক স্যাটেলাইটভিত্তিক দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা। এই সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মালিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক। এই মার্কিন ধনকুবের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টাও।
১৩ ফেব্রুয়ারি ইলন মাস্কের সঙ্গে ভিডিও কলে আলোচনা করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই আলোচনায় ভবিষ্যৎ সহযোগিতার ক্ষেত্র অন্বেষণের পাশাপাশি বাংলাদেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা চালুর বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করেন তাঁরা। জাতীয় উন্নয়নে এই উদ্যোগের তাৎপর্য তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস স্টারলিংক পরিষেবার সম্ভাব্য প্রবর্তনের জন্য ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। মাস্ক তাতে ইতিবাচক সাড়া দেন। তিনি বলেন, ‘আমি এর অপেক্ষায় আছি।’ বাসসের খবরে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রযুক্তি খাতের ব্যক্তিরা বলছেন, স্টারলিংক বাংলাদেশে এলে দুর্গম এলাকায় খুব সহজে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে। ফলে ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের পার্থক্য ঘুচে যাবে। গ্রামে বসেই উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিংসহ ইন্টারনেটভিত্তিক কাজ করতে পারবেন তরুণেরা। দুর্যোগের পর দ্রুত যোগাযোগ প্রতিস্থাপনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে স্টারলিংক।
স্টারলিংক কীবাংলাদেশে এখন যে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হয়, তা সাবমেরিন কেবলনির্ভর। অর্থাৎ সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ এনে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা (আইএসপি) মানুষকে ইন্টারনেট সেবা দেয়।
স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা দেয় স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে। স্টারলিংকের মূল প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাদের ইন্টারনেট সেবা জিওস্টেশনারি (ভূস্থির উপগ্রহ) থেকে আসে, যা ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার ওপর থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপিত হাজার হাজার স্যাটেলাইটের একটি সমষ্টি হচ্ছে স্টারলিংক, যা পুরো বিশ্বকেই উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে পারে।
চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে, স্টারলিংকের ৬ হাজার ৯৯৪টি স্যাটেলাইট স্থাপিত হয়েছে। এসব স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৪২ মাইল (৫৫০ কিলোমিটার) ওপরে কক্ষপথে ঘুরছে।
স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। বিশ্বের প্রায় ১০০টির বেশি দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভুটানে প্রথম স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুনবাংলাদেশে স্টারলিংক আনার বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস ও ইলন মাস্কের মধ্যে আলোচনা১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫স্টারলিংক কীভাবে কাজ করেস্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা পেতে গ্রাহককে টেলিভিশনের অ্যানটেনার মতো একটি ডিভাইস (যন্ত্র) বসাতে হবে, যা পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। গ্রাহক এই অ্যানটেনার সঙ্গে একটি স্টারলিংকের রাউটার স্থাপন করে ইন্টারনেট সেবা পান।
স্টারলিংকের ইন্টারনেটে ডাউনলোড গতি ২৫ থেকে ২২০ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড)। তবে বেশির ভাগ ব্যবহারকারী ১০০ এমবিপিএসের বেশি গতি পান। স্টারলিংকে আপলোড গতি সাধারণত ৫ থেকে ২০ এমবিপিএসের মধ্যে থাকে।
ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা ও বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ‘ওকলা’র গত জানুয়ারির হিসাবে, বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় ডাউনলোড গতি ৪০ এমবিপিএসের কিছু কম। আপলোডের গতি ১৩ এমবিপিএসের মতো। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ডাউনলোড গতি প্রায় ৫১ এমবিপিএস। আপলোডের ক্ষেত্রে তা প্রায় ৪৯ এমবিপিএস।
অবশ্য বাসাবাড়িতে সাধারণ গ্রাহকেরা গতি পান আরও কম। গ্রামে অনেক জায়গায় ইন্টারনেট সংযুক্ত হওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুনইলন মাস্কের স্টারলিংক বাংলাদেশে এলে সুফল কী, খরচ কত১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫খরচস্টারলিংকের ওয়েবসাইটে বলা আছে, বাসাবাড়িতে তাদের সেবা নিতে কিছু সরঞ্জাম কিনতে হবে। সেখানে থাকে একটি রিসিভার বা অ্যানটেনা, কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, তার ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা বা পাওয়ার সাপ্লাই। এটাকে স্টারলিংক কিট বলা হয়, যার মূল্য ৩৪৯ থেকে ৫৯৯ ডলার পর্যন্ত (৪৩ থেকে ৭৪ হাজার টাকা)।
আবাসিক গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংকের মাসিক সর্বনিম্ন ফি ১২০ ডলার (প্রায় ১৫ হাজার টাকা)। তবে করপোরেট গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংক কিটের দাম ও মাসিক ফি দ্বিগুণের বেশি। তবে দেশ ভেদে দামে ভিন্নতা রয়েছে।
আরও পড়ুনইলন মাস্কের স্টারলিংক নিয়ে কাজ করছে বিটিআরসি১৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক র স স য ট ল ইট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে চালককে গলা কেটে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই
গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় চালককে গলা কেটে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সিটি করপোরেশনের রাহাপাড়া এলাকা থেকে অটোরিকশাচালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহত অটোরিকশাচালকের নাম হাবিবুর রহমান (৪২)। তিনি জামালপুরের মেলান্দহ থানার উখরাদার এলাকার মৃত আবদুল বারেকের ছেলে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল আলম বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পুবাইল থানাধীন মেঘডুবি পশ্চিম পাড়া এলাকায় জিয়ার বাড়িতে ভাড়া থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন হাবিবুর রহমান। সোমবার রাতের কোনো এক সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুর্বৃত্তরা তাঁর গলা কেটে হত্যা করে। পরে মরদেহ রাহাপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। সকালে এলাকাবাসী মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
উপপরিদর্শক আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, অটোরিকশা ছিনতাইয়ের জন্য হাবিবুর রহমানকে খুন করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।