ইলন মাস্কের টেসলার দাম কত পড়বে ভারতের বাজারে
Published: 25th, February 2025 GMT
ইলন মাস্ক ভারতে টেসলার কারখানা করতে যাচ্ছেন—এই জল্পনা এখন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে–বাতাসে; যদিও শুল্কের বিষয়টি রয়েই গেছে এবং সেই সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পও তেমন একটা খুশি নন। ভারতের বাজারে টেসলার দাম কেমন পড়বে, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে জল্পনা।
ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতের বাজারে টেসলা নিয়ে এলে আমদানি শুল্কে ২০ শতাংশ ছাড় পাবেন মাস্ক। তারপরও বাজার–সংশ্লিষ্ট মানুষেরা বলছেন, তারপরও পরিবেশবান্ধব ওই মার্কিন গাড়ির দাম পড়বে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ রুপি। ফলে মধ্যবিত্তের মধ্যে কতজন মাস্কের গাড়ি কিনতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে টেসলার সবচেয়ে সস্তা তিন নম্বর মডেলটির কারখানা পর্যায়ের দাম ৩৫ হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩০ দশমিক ৪ লাখ রুপি। মাস্কের এই পরিবেশবান্ধব গাড়িটির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হ্রাস করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর সঙ্গে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত খরচ আছে, যেমন রাস্তার কর ও বিমা। ফলে সবকিছু যোগ-বিয়োগ করে টেসলার সবচেয়ে সস্তা মডেলটির দাম দাঁড়াবে আনুমানিক ৪০ হাজার ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যা ৩৫ থেকে ৪০ লাখ রুপি।
ভারতের বাজারে অন্যান্য কোম্পানির বেশ কিছু বৈদ্যুতিক গাড়ি ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা কমেছে। মাহিন্দ্রার এসইভি ৯ই, হুন্ডাইয়ের ই-ক্রেটা ও মারুজি সুজ়ুকির ই-ভিটার মতো বৈদ্যুতিক গাড়ির মডেলগুলোর তুলনায় ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি হবে টেসলার গাড়ির দাম। ফলে মাস্কের ব্যাটারিচালিত গাড়ি ভারতের বাজারে এলে এসব কোম্পানির মার খাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
টেসলাকে নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টে এর কারণ ব্যাখ্যা করেছে মূল্যায়ন সংস্থা সিএলএসএ। সেখান বলা হয়েছে, ভারতের বাজারে পরিবেশবান্ধব ব্যাটারিচালিত গাড়ির বিক্রি এখনো চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের তুলনায় অনেকটাই কম। গত বছর ভারতের বাজারে মোট যাত্রীবাহী গাড়ি বিক্রি হয়েছে ৪৩ লাখ। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে মাত্র ৯৯ হাজার ১৬৫টি।
ভারতীয়রা পেট্রল, ডিজেল বা হাইব্রিড মডেলের যাত্রীবাহী গাড়ি বেশি পছন্দ করেন। মাস্কের গাড়ি দ্রুত ক্রেতাদের মন জয় করতে পারবে—এমনটা নয়, দামের কারণেই নয়। এর চাহিদা সম্ভবত সমাজের উচ্চ শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
ইকোনমিক টাইমসের খবর, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভারতের দিল্লি ও মুম্বাইতে ব্যাটারিচালিত গাড়ি নিয়ে হাজির হবে টেসলা। ভারতের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনিয়োগ শুরু করেছেন মাস্ক। ১৮ ফেব্রুয়ারি বহুজাতিক এই কোম্পানি লিঙ্কডইনে একটি চাকরির তালিকা পোস্ট করে। সেখানে মুম্বাই মেট্রোপলিটন এলাকার কনজ্যুমার এনগেজমেন্ট ম্যানেজার পদে নিয়োগের কথা বলা হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে...
বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির জগতে শ্রদ্ধা ও সমীহের সঙ্গে উচ্চারিত একটি নাম সন্জীদা খাতুন। দেশের এই অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ ও ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে স্মরণ করে লিখেছেন কয়েকজন গুণী তারকাশিল্পী।
ফেরদৌস আরা
‘সন্জীদা খাতুন, যাঁকে আমরা চিনি সংস্কৃতি অঙ্গনের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হিসেবে প্রিয় সেই মানুষটি আজ আমাদের মাঝে নেই।’ গতকাল বিকেলে এই দুঃসংবাদ কানে আসতেই পুরোপুরি থমকে গিয়েছি। প্রকৃতি নিয়মে আমরা সবাই চলে যাব, চলে যেতে হয়, তারপরও এই বিদায়-সংবাদ ছিল অবিশ্বাস্য। এও সত্যি, মৃত্যু চিরন্তন জেনেও কারও চলে যাওয়া কেন জানি মেনে নিতে পারি না। সন্জীদা খাতুন যে কত বড় মাপের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, তা আসলে স্বল্প কথায় বোঝানো যাবে না। এটি ঠিকই উপলব্ধি করা যাবে যে, তিনি শূন্যতা তৈরি করে গেলেন। রবীন্দ্রসংগীত তো অনেকে গান, যাদের গায়কী শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। আমার জীবদ্দশায় এখানে আর কোনো রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীর দেখা পাইনি, যার সঙ্গে সন্জীদা খাতুনের তুলনা করা যায়। নিজেও যেমন অসাধারণ শিল্পী ছিলেন, তেমনি যারা ভালো গায় তাদের নানাভাবে অনুপ্রাণিত করতেন। আমিও সেই ভাগ্যবানদের একজন, যে সন্জীদা খাতুনের স্নেহের ছায়াতলে জায়গা করে নিতে পেরেছিলাম। এখনও মনে পড়ে কলেজজীবনের সেই অনুষ্ঠানটির কথা, যেদিন রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে পুরস্কৃত হয়েছিলাম। আমার হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন সন্জীদা খাতুন। হেসে বলেছিলেন, ‘তুমি যখন এত ভালো গাও, তাহলে নিয়মিত রবীন্দ্রসংগীত গাইলেই তো পারো।’ তাঁর এ কথাটাই শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে দারুণভাবে প্রেরণা জুগিয়েছিল। তারপরও কেন জানি রবীন্দ্রসংগীতটা নিয়মিত গাওয়া হয়ে ওঠেনি। পরবর্তী সময়ে বিদ্রোহী কবির সৃষ্টির প্রেমে পড়ে নজরুলসংগীতের সাধনাই করে গেছি।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
সন্জীদা খাতুন আমাদের সংস্কৃতি জগতের মহিরুহ ছিলেন। এখন ক্রান্তিকাল চলছে। এই সময়ে তাঁর চলে যাওয়ায় হতাশার মধ্যে পড়ে গেছি আমরা। তাঁর থাকাটা আমাদের জন্য একটি জোরের জায়গা ছিল। যে কোনো পরামর্শে এ মানুষটিকে আমরা কাছে পেতাম। তিনি ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁকে যারা অনুসরণ করতেন, তাদের কাছে তিনি ব্যক্তি নন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছিলেন। সবদিক থেকেই অনুসরণীয় একজন মানুষ ছিলেন। তাঁর আত্মা শান্তি পাক– এটাই চাওয়া।
মামুনুর রশীদ
বহু গুণে গুণান্বিত একজন মানুষ ছিলেন সন্জীদা খাতুন। এ মানুষটিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম একটি যুগলবন্দি হিসেবে– ওয়াহিদুল হক এবং সন্জীদা খাতুন। তারা ছায়ানট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ছায়ানটের প্রগতিশীল ভূমিকা ছিল সবসময়ই। ১৯৬৬ সাল থেকে তারা রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেন। শুধু রবীন্দ্রসংগীত চর্চা নয়, রবীন্দ্রচর্চাও করে গেছেন আজীবন। এ দেশে রবীন্দ্রচর্চায় মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন ওয়াহিদুল হক ও সন্জীদা আপা। দেশের সংস্কৃতিতে যে ধরনের প্রগতিশীল ভূমিকা গ্রহণ করা হয়েছে, তার মধ্যে সন্জীদা আপা সবসময় থাকতেন। কাজী মোতাহার হোসেনের যোগ্য কন্যা তিনি। সন্জীদা আপার বাবা নজরুলের বন্ধু ছিলেন। ছোটবেলা থেকে যে আবহে তিনি বড় হয়েছেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেটা অক্ষুণ্ন ছিল। সন্জীদা খাতুনের মতো এ ধরনের একজন মানুষের আবার জন্ম নেওয়া শতবর্ষের ব্যাপার। যখনই কোনো প্রস্তাব নিয়ে তাঁর কাছে যেতাম, তিনি খুব ইতিবাচকভাবে দেখতেন। কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের মধ্যে মতানৈক্য হতো। আবার পরক্ষণেই তা ঠিক হয়ে যেত। তিনি রেখে গেলেন অনেক কিছু। তাঁর সৃষ্টিকর্ম তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে আজীবন। একজন সন্জীদা খাতুনের চিরবিদায় মানেই উজ্জ্বল এক জ্যোতিষ্কের নিভে যাওয়া। এই মহারথীর জীবনের সমাপ্তি প্রশান্তির হোক– এটাই আমার চাওয়া।
রামেন্দু মজুমদার
বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন অর্থাৎ ১৯৬১ সাল থেকে সন্জীদা খাতুনের সঙ্গে আমার পরিচয়। দীর্ঘদিন তিনি বিরুদ্ধ পরিবেশের মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা চালিয়ে গেছেন। তৈরি করেছেন অনেক প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে বড় কীর্তি হলো ‘ছায়ানট’। এসবের মধ্য দিয়ে শুদ্ধসংগীতের প্রচার এবং আমাদের প্রগতিশীল ধ্যানধারণা, মুক্তিযুদ্ধ সময়কার ভূমিকা– সব মিলিয়ে তিনি আমাদের সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর শূন্যতা দীর্ঘদিন অনুভূত হবে। সব কাজেই তিনি গম্ভীর এবং দৃঢ়চেতা ছিলেন। তিনি কোনো রকম আপস করতেন না। যাই করা হোক না কেন, তিনি চাইতেন সবচেয়ে ভালো কাজ।
আতাউর রহমান
আমি তাকে মিনু আপা বলে ডাকতাম। মিনু আপা নেই– ভাবতেই পারছি না। রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন আমাকে। তখন আমি বললাম, আমি তো গানের লোক নই, আমাকে কেন এর সাধারণ সম্পাদক বানানো হলো। মজা করে তাঁকে বললাম, আমাকে কী ভাড়াটিয়া হিসেবে বানানো হলো? সন্জীদা খাতুন একজন জ্ঞানী, সুগায়িকা ও সংগঠক ছিলেন। এই তিনটি গুণকে তিনি সমন্বিত করেছিলেন। এই মানুষটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই পরিচয়। তিনি খুব কঠোর ছিলেন। কাজের বিচ্যুতি পছন্দ করতেন না।