জাতিসংঘে রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিলো যুক্তরাষ্ট্র
Published: 25th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
জাতিসংঘে দুটি ভিন্ন ভোটে রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ শুরুর তিন বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিলো যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন নিউজ এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়,জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথমে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা এবং ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষ থেকে। তবে এদিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এর বিরোধিতা করে। যদিও শেষ পর্যন্ত নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবটি উত্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত এই প্রস্তাবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা ছিল না। ওয়াশিংটন ও মস্কো এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।
নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই মিত্র ‘ব্রিটেন ও ফ্রান্স’ এই প্রস্তাবে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ইউরোপীয় প্রস্তাবটি ৯৩ ভোটে অনুমোদন করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এতে বিরত না থেকে সরাসরি এর বিপক্ষে ভোট দেয়।
এছাড়া, রাশিয়া, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, সুদান, বেলারুশ, হাঙ্গেরি এবং আরও ১১টি রাষ্ট্র এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ৬৫টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। ইউক্রেনের প্রতি সমর্থনের ভাষা যুক্ত করার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটিও সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। তবে সংশোধিত প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত ভোটদানে বিরত থাকে।
অন্যদিকে, ১৫ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অসংশোধিত মার্কিন প্রস্তাবটি ১০ ভোটে গৃহীত হয়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়া এতে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
এম জি
.
উৎস: SunBD 24
কীওয়ার্ড: ইউক র ন
এছাড়াও পড়ুন:
হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের
‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।
এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।