অপরাধীরা বেপরোয়া, আতঙ্কে মানুষ
Published: 25th, February 2025 GMT
দেশে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অপরাধীরা। তারা মানুষকে জিম্মি করে, অস্ত্র ঠেকিয়ে, গুলি করে অথবা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। এতে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তাহীনতাবোধ ও আতঙ্ক।
সর্বশেষ গত রোববার রাতে রাজধানীর বনশ্রীতে বাসায় ফেরার সময় এক সোনা ব্যবসায়ীকে গুলি ও কুপিয়ে জখম করে স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনার ভিডিও চিত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে আতঙ্ক তৈরি হয়।
শুধু বনশ্রীর ঘটনা নয়, বিগত কয়েক মাসে একের পর এক অপরাধের ঘটনা সামনে এসেছে। পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিক কালে ডাকাতি ও দস্যুতার (ছিনতাই) ঘটনায় মামলা বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে দেশে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৪২টি, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৯৯টি বেশি (৬৯ শতাংশ)। ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় গত ডিসেম্বরে মামলা হয়েছে ২৩০টি, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৯৫টি (৭০ শতাংশ) বেশি।
আরও পড়ুনবনশ্রীতে গুলি করে স্বর্ণালংকার লুটের ভিডিও ভাইরাল, ‘ও আম্মা গো’ বলে বারবার চিৎকার২১ ঘণ্টা আগেসব মিলিয়ে গত আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৪৫টি, যা ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের তুলনায় ৩৮২টি বেশি (৫০ শতাংশ)।
অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র সব সময় বোঝা যায় না। পুলিশ যে ঘটনাগুলোতে তাদের কাছে অভিযোগ যায় কিংবা মামলা হয়, সেগুলোই নথিবদ্ধ করে। অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী পুলিশের কাছে যান না ঝামেলার ভয়ে। থানাগুলো কখনো কখনো চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা না নিয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র বা টাকা হারানোর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেয়। অবশ্য পুলিশ বলছে, তাঁরা এখন আর মামলা নিতে অনীহা দেখায় না। এ কারণে মামলার সংখ্যা বেশি হতে পারে।
অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অপরাধ পরিস্থিতির উন্নতির অন্যতম নির্দেশক হলো, মানুষ ঘরে বাইরে কিংবা চলাচলে নিরাপদ বোধ করছে কি না। মানুষ এখন নিরাপদ বোধ করছে না।
পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিক কালে ডাকাতি ও দস্যুতার (ছিনতাই) ঘটনায় মামলা বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে দেশে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৪২টি, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৯৯টি বেশি (৬৯ শতাংশ)। ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় গত ডিসেম্বরে মামলা হয়েছে ২৩০টি, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৯৫টি (৭০ শতাংশ) বেশি।কেন এই পরিস্থিতি
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। শুরু থেকেই সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা এবং আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটানো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোটামুটিভাবে স্থিতিশীল করতে পেরেছে সরকার। তবে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
আরও পড়ুন‘তিনটি মোটরসাইকেলে ৭ জন এসে গুলি করে, তখন দৌড়াতে থাকি’২১ ঘণ্টা আগেজুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর দেশে তিন দিন পুলিশি কার্যক্রম ছিল না। পরে ধীরে ধীরে থানাগুলো চালু হয়, পুলিশি কার্যক্রম বাড়তে থাকে, কিন্তু স্বাভাবিক সময়ের মতো পুলিশ সক্রিয় নয় বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। আবার নতুন পরিস্থিতিতে পুলিশ কয়েকটি সমস্যায় ভুগছে। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোয় পুলিশে নতুন জনবল এসেছে। নতুন আসা পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা সংশ্লিষ্ট শহরের অপরাধী ও অপরাধপ্রবণতা সম্পর্কে অভিজ্ঞ নন। অপরাধের খবর জানা ও অপরাধীকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে তাদের সোর্স কম। এ ছাড়া পুলিশে মনোবলের সংকট কাটেনি। গাড়ি, আবাসন ইত্যাদি সমস্যাও আছে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর দেশে তিন দিন পুলিশি কার্যক্রম ছিল না। পরে ধীরে ধীরে থানাগুলো চালু হয়, পুলিশি কার্যক্রম বাড়তে থাকে, কিন্তু স্বাভাবিক সময়ের মতো পুলিশ সক্রিয় নয় বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।বিশ্লেষক ও পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্তভাবে বিশৃঙ্খলা ও অপরাধ দমন করতে পারছে না। এতে অপরাধীরা মনে করছে, তারা পার পেয়ে যাবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) থানা পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, অভিযানে গেলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তখন বল প্রয়োগ করা হলে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা থাকে। এ কারণে পুলিশকে অপরাধীরা এখন আর সেভাবে ভয় পাচ্ছে না। এ কারণেই তারা বেপরোয়া।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীতে ২৮৯টি মামলায় ৭৫৮ ‘ছিনতাইকারীকে’ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ১১৫ জনই জামিনে বেরিয়ে গেছেন। অনেক ক্ষেত্রে জামিন পেয়েছে যাচ্ছেন অল্প দিনের মধ্যে। যেমন গত ১৬ জানুয়ারি সূত্রাপুর থানার দস্যুতার এক মামলায় ফাইম খান নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি পরদিনই জামিন পেয়ে যান। পুলিশ বলছে, জামিন পেয়ে অপরাধীরা আবার অপরাধে জড়াচ্ছে।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা ও অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, কর্মসংস্থানের অভাবও এখন অপরাধ বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ।
ঢাকাসহ বড় শহরগুলোয় পুলিশে নতুন জনবল এসেছে। নতুন আসা পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা সংশ্লিষ্ট শহরের অপরাধী ও অপরাধপ্রবণতা সম্পর্কে অভিজ্ঞ নন। অপরাধের খবর জানা ও অপরাধীকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে তাদের সোর্স কম।এলাকাভেদে অপরাধীদের আলাদা আলাদা ধরনও পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ এলাকার অপরাধীদের বড় অংশের সঙ্গে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তাদের অনেকে সাম্প্রতিককালে জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়েছেন। গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী ও এর আশপাশের এলাকায় পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বেশি। আবার উত্তরার দিকে অল্পবয়সীদের অপরাধ–চক্রের তৎপরতা বেশি লক্ষণীয়। খিলগাঁও, মগবাজার, বাড্ডা ও মহাখালী এলাকায় আবার পেশাদার অপরাধীদের পাশাপাশি মৌসুমি অপরাধীদের তৎপরতা বেশি পেয়েছে পুলিশ।
এদিকে পুলিশ বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কিছু আইডি ও পেজ থেকে ধর্ষণ, ছিনতাই ও ডাকাতির বিষয়ে গুজবও ছড়ানো হচ্ছে। ছড়ানো হচ্ছে পুরোনো ভিডিও। ফলে মানুষের মধ্যে বেশি আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। কোনো সূত্র ছাড়াই অপরাধের মনগড়া কিছু পরিসংখ্যান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে।
‘গত ৬৫ ঘণ্টায় ৭২ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে’—গত দুই দিন এমন একটি খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একটি সংবাদমাধ্যম ফেসবুক পোস্টকে সূত্র ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গতকাল সোমবার জানিয়েছে, তথ্যটি সঠিক নয়। তারা ধর্ষণের মতো মারাত্মক অপরাধ নিয়ে অতিরঞ্জিত তথ্য, মিথ্যা পরিসংখ্যান প্রচার করা অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত; এটি জনমনে বিভ্রান্তির উদ্রেক ঘটায় বলে উল্লেখ করেছে।
পুলিশ বলছে, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ এলাকার অপরাধীদের বড় অংশের সঙ্গে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তাদের অনেকে সাম্প্রতিককালে জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়েছেন। গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী ও এর আশপাশের এলাকায় পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বেশি। আবার উত্তরার দিকে অল্পবয়সীদের অপরাধ–চক্রের তৎপরতা বেশি লক্ষণীয়।গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত শতাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট (আইডি) ও পেজ শনাক্ত করেছে পুলিশ। তবে কারও বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোর কমিটির উচ্চপর্যায়ের বৈঠকেও গুজব ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করব। অপর দিকে যারা গুজব ছড়িয়ে মানুষের মনে ভীতি তৈরি করবে, অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কী করছে সরকার
১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী একটি বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। এরপর রাজধানীর মগবাজার, মোহাম্মদপুরসহ কয়েকটি এলাকায় সড়কে প্রকাশ্যে ছিনতাই ও ডাকাতির ভিডিও এবং খবর ছড়িয়ে পড়ে। কিশোরগঞ্জের ভৈরবের অদূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভুয়া পুলিশ চেকপোস্ট বা তল্লাশিচৌকি বসিয়েও ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুনআ.লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
এমন পরিস্থিতিতে গত দুই দিন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। রোববার দিনভর বিক্ষোভের পর রাতেই রাজধানীর বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণালংকার লুটের ঘটনা ঘটে। ফেসবুকে এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে। এতে মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়। ওই রাতেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল বের করা হয়।
যারা গুজব ছড়িয়ে মানুষের মনে ভীতি তৈরি করবে, অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবেঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিকপরিস্থিতি এমন পর্যায় পৌঁছায় যে রাত তিনটায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা। সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানুষকে আশ্বস্ত করতেই আজকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সভা করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে আপনারা পরিস্থিতি টের পাবেন।’
সরকারকে এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। না হলে মানুষ ভয়ে কেনাকাটা করতে বের হবেন না। এতে ব্যবসা–বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অর্থনীতির ক্ষতি হবে।ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খানএদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম গতকাল রাজশাহীতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে, বিশেষ করে রাতে ছিনতাই। এ নিয়ে বিশেষ একটি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি বলেন, র্যাব, পুলিশের অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট (এটিইউ) ও ডিএমপি ঢাকায় একসঙ্গে বিস্তৃত টহল কার্যক্রম চালাবে। সেটা গতকাল রাত থেকেই শুরু হওয়ার কথা। তিনি বলেন, ‘দেখি, এভাবে পরিস্থিতি উন্নতি হয় কি না। এরপরও যদি না হয়, তাহলে বিকল্প চিন্তা করব।’
সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ
আগামী মাসের শুরুতে পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে। পাইকারি বাজারে রোজা উপলক্ষে নিত্যপণ্যের কেনাবেচা বেড়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে পোশাকের কেনাবেচাও শুরু হয়েছে। এখন আর্থিক লেনদেন বাড়বে। মানুষ কেনাকাটা করতে বাজার ও বিপণিবিতানে যাওয়া বাড়াবে। একই সঙ্গে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে।
আরও পড়ুনস্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কেন রাত তিনটায় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন১৯ ঘণ্টা আগেবিশেষ অভিযান অপারেশন ডেভিল হান্টের মধ্যেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না কেন, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের প্রথম কয়েক মাস পরিস্থিতির ওপর ততটা নিয়ন্ত্রণ না থাকার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য। এখন তো প্রায় সাত মাস হয়ে গেছে। এখন আর আইনশৃঙ্খলার অবস্থা খারাপ থাকা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, সরকারকে এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। না হলে মানুষ ভয়ে কেনাকাটা করতে বের হবেন না। এতে ব্যবসা–বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অর্থনীতির ক্ষতি হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স খ য ন ক পর স থ ত পর স থ ত র প ল শ বলছ অপর ধ দ র অপর ধ র র অপর ধ ব যবস থ ও অপর ধ এখন আর পর ধ র ফ সব ক এল ক য় বলছ ন গতক ল সরক র আতঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
নির্দেশনার পাশাপাশি তৎপরতাও বাড়াতে হবে
নিরাপদ পরিবেশে ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের জন্য এবং ঈদে বাসাবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের সার্বিক নিরাপত্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) যে ১৪টি নির্দেশনা জারি করেছে, তা গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করি। তারা বাসাবাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানে পাহারা জোরদার ও সার্বক্ষণিক নজরদারির ওপর জোর দিয়েছে।
আমরাও মনে করি, জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নাগরিকদেরও উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। নাগরিকেরা কোথায় কী মালামাল রেখে যান, সেটা তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যদের জানার কথা নয়। কিন্তু ডিএমপি যখন নাগরিকদের এসব নির্দেশনা ও সদুপদেশ দিচ্ছে, তখনই ঢাকা শহরে র্যাবের নামে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। বুধবার ভোরে র্যাবের নাম করে একদল ডাকাত ধানমন্ডির ৮ নম্বর সড়কে একটি ছয়তলা ভবনে প্রায় সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে। এমনকি ঘটনার সময় পুলিশ অভিযান চালাতে গেলে ডাকাতেরা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করে। পুলিশের ভাষ্য, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এর আগে ৯ মার্চ ও ১২ ডিসেম্বরও র্যাবের পরিচয়ে যথাক্রমে পুরান ঢাকা ও মোহাম্মদপুরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
আবাসিক এলাকায় একের পর এক ডাকাতির ঘটনা কী বার্তা দেয়? র্যাব গঠিত হওয়ার পর থেকে এর কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে তীব্র সমালোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র এই বাহিনীর সাতজন সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার সেই সমালোচনাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে গিয়ে নিজেরাই ‘উড়ে’ গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশন র্যাবের প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়নের সুপারিশ করেছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন পুরোপুরি বাতিলের কথা বলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বাংলাদেশে কোনো বাহিনী বাতিল বা পরিত্যক্ত ঘোষণার উদাহরণ আছে। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জাতীয় রক্ষীয় বাহিনী ভেঙে দেওয়া হয়। তাদের সদস্যদের সেনাবাহিনীতে একীভূত করা হয়েছিল।
ঈদে বাড়ি বা সড়কে মানুষ নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে অবশ্যই সজাগ থাকবে। এর অর্থ এই নয় যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও বেশি তৎপর থাকবে না। সাম্প্রতিক কালে ছিনতাই, ডাকাতি, চুরিসহ সব ধরনের অপরাধই বেড়ে চলেছে। তদুপরি যে খবরটি আমাদের বিচলিত করে, সেটি হলো এসব অপরাধের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্তমান কিংবা সাবেক সদস্যদের যুক্ত থাকা। যখন রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় নামে, তখন আর জনগণ নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারে না।
ডিএমপি ঢাকার বাসিন্দাদের ঈদের সময় সজাগ থাকতে বলেছে। আশা করি, অন্যান্য বড় শহরেও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঈদের সময় কেবল বাসাবাড়ি বা পর্যটন এলাকা নয়, চলাচলের পথও নিরাপদ রাখতে হবে। বিশেষ করে সড়কপথে ছিনতাই–ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। হাইওয়ে পুলিশকে এখানে আরও তৎপর হতে হবে। ঈদের সময় যানবাহনের অত্যধিক চাপ থাকে এবং কোনো কোনো সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অনেক সময় পরিবহনকর্মীদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশও থাকে। জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নিজেদের সজাগ রাখুক।