এখনও খেলছেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ, অবাক কার্তিক
Published: 25th, February 2025 GMT
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। আগের আসরের সেমিফাইনালিস্ট দলটি এবারের আসরে প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৬ উইকেটে হেরে যায়। দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেটে হেরে বিদায় নেয় টুর্নামেন্ট থেকে। দলের ব্যর্থতার বড় কারণ হিসেবে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বাজে পারফরম্যান্সকে দায়ী করেছেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার দীনেশ কার্তিক।
ক্রিকবাজের এক টকশোতে কার্তিক বলেন, 'আমি ভেবেছিলাম ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পরই মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ অবসর নেবে। কিন্তু তারা এখনো খেলছে, যা দেখে আমি অবাক হয়েছি। তারা ১৬-১৭ বছর ধরে জাতীয় দলে আছে, কিন্তু দেশের জন্য কোনো বড় শিরোপা জিততে পারেনি।'
বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুনদের সুযোগ না পাওয়া নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন কার্তিক। তার মতে, সিনিয়র খেলোয়াড়দের দীর্ঘদিন ধরে খেলানোয় তরুণরা পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছে না। যদি ব্যর্থ খেলোয়াড়দেরই বারবার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে জুনিয়রদের মনোবল ভাঙা ছাড়া আর কিছুই হবে না, বলেন তিনি।
বিসিবির ক্রিকেট নীতিরও কঠোর সমালোচনা করেছেন কার্তিক। বিশেষ করে দেশের মাটিতে স্পিন সহায়ক উইকেট বানিয়ে সাফল্য পাওয়ার প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। নিউজিল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্পিন নির্ভর উইকেট বানিয়ে জেতার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। কিন্তু বিদেশে গেলেই তারা বিপদে পড়ে, বলেন সাবেক এই ভারতীয় ক্রিকেটার।
বিসিবির আর্থিক সক্ষমতার প্রসঙ্গ টেনে কার্তিক বলেন, 'ভারতের পর বাংলাদেশেরই একমাত্র বোর্ড, যারা ঋণমুক্ত। তাদের কোনো অর্থনৈতিক সমস্যা নেই। অথচ তারা আন্তর্জাতিক সাফল্য পাচ্ছে না, যা একদমই গ্রহণযোগ্য নয়।'
প্রসঙ্গত, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে ইনজুরির কারণে মাহমুদউল্লাহ খেলতে পারেননি। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে একাদশে ফিরেও ভালো করতে পারেননি, ১৪ বলে মাত্র ৪ রান করে আউট হয়েছেন। অন্যদিকে, মুশফিক প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে করেছেন মাত্র ২ রান। সর্বশেষ তিন ওয়ানডেতে তার সংগ্রহ মাত্র ৩ রান।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুপেয় পানি সংকটের স্থায়ী সমাধানের পথ
পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু ব্যবহারযোগ্য পানি পাওয়া এখন বিশ্বের বড় চ্যালেঞ্জ। অক্সফাম পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মানুষ এখনও ব্যবহারযোগ্য ও নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশে এখনও ৪১ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি সুবিধার বাইরে। কাজের কারণে আমাকে বরাবরই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেতে হয়। বাংলাদেশের এ অঞ্চলের উপকূল, যেগুলো এক সময় প্রকৃতির দানে পরিপূর্ণ ছিল; সেই সঙ্গে ছিল যথেষ্ট পরিমাণে সুপেয় পানির আধার, সেখানে এখন সুপেয় পানির সংকট। এক সময় যেই পানি ছিল ওই অঞ্চলের মানুষের প্রধান সম্বল; সংকট ছিল স্বল্পস্থায়ী; কালের ধারাবাহিকতায় এখন তা নিয়মিত এবং তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ সমস্যার কারণে দুর্যোগপ্রবণ মোট ১৯টি জেলার কোটি মানুষের জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়েছে।
সুস্থভাবে জীবন যাপনে একজন মানুষের প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে শহরাঞ্চলের মানুষের কাছে দৈনিক ৩-৪ লিটার পানি পাওয়া তেমন বিষয় নয়। একটি কল ঘুরিয়ে বা পরিশোধিত পানির বোতল খুললেই তাদের প্রয়োজন মিটে যায়। কিন্তু উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য এই পানি সংগ্রহ করতে গড়ে ১-২ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়। সেই সঙ্গে প্রয়োজন হয় আর্থিক বিনিয়োগের।
এই সংকটের একক কারণ হিসেবে অনেকে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করলেও নানা স্থানীয় কারণও এর সঙ্গে যুক্ত, চিড়িং চাষের আধিপত্য যার অন্যতম। চিংড়ি চাষ একদিকে জমির উর্বরতা নষ্ট করছে, অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির লবণাক্ততা বাড়াচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত কোনো নেতৃত্ব না থাকায় পানীয় জলের সমস্যা আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তঃসীমান্ত নদী গঙ্গা (পদ্মা) থেকে পানির প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে। এর শাখা নদী গড়াই থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের নদীগুলোতে পানি প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুপেয় পানির এই সংকট সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে নারীদের ওপর। উপকূলীয় অঞ্চলে নারীরাই সাধারণত পরিবারের জন্য পানি সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে পানি সংগ্রহের জন্য পথ পাড়ি দেওয়া তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে। অনেক সময় নিরাপদ পানির অভাবে নারীরা প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি পান করতে পারছেন না, যা তাদের স্বাস্থ্য বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
এ সমস্যার সমাধান কী?
এটা বলার আগে আমি এ অঞ্চলের খাবার পানির উৎসগুলোকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করতে চাই। ভূগর্ভস্থ পানি, ভূপৃষ্ঠের পানি এবং বৃষ্টির পানি। তবে উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভূপৃষ্ঠের পানির প্রধান উৎস হিসেবে পুকুরের পানিকেই ধরা হয়। সমস্যা সমাধানে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে এই পুকুর। পুকুরের পানিকে এক বিশেষ পরিশোধন ব্যবস্থায় (পিএসএফ) পরিশোধিত করে দৈনন্দিন খাবার ও রান্নার পানি হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। এ ছাড়া যেসব এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণের পরিমাণ কম সেসব এলাকায় বাড়িভিত্তিক বায়োস্যান্ড ফিল্টার (বিএসএফ) ব্যবহার করেও উপকূলীয় অঞ্চলের এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ পানির আওতায় আনা সম্ভব।
নম্বই দশকের শেষের দিকে এ অঞ্চলের পানি ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করে রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং (আরডব্লিউএইচ), যেখানে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সঞ্চয় করা হয়। এখানকার অনেক বাসাবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয়ে এই প্রক্রিয়ায় পানি সংগ্রহ করা হয়, যা শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর খাবার পানির
চাহিদা অনেকাংশেই মেটাতে সক্ষম। এ ছাড়া বর্তমানে পানীয় জল পরিশোধনে আধুনিক কিন্তু ব্যয়বহুল রিভার্স অসমোসিস ব্যবস্থার প্রচলন উল্লেখযোগ্য হারে দেখা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, পানীয় জল বিশুদ্ধকরণে ব্যবহারের এই পদ্ধতিটি পানি বিশুদ্ধকরণে কার্যকরী হলেও পরিশোধনকালে এর থেকে উৎপাদিত ময়লা পানি (গ্রে ওয়াটার) নিয়ে বিভিন্ন মহলে আপত্তি রয়েছে।
উপকূলীয় এই বিশাল জনগোষ্ঠীর সংকটে সরকার, দাতা সংস্থাসহ দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। তবে সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টার অভাবে মৌলিক এই সমাধানের স্থায়ী পথ এখনও অধরা থেকে গেছে। এই মুহূর্তে সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া কোনোভাবেই সুপেয় পানির এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে পানি ব্যবস্থাপনায় নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য টেকসই সমাধান বাস্তবায়ন করা এখন সময়ের দাবি।
দেবরাজ দে: উন্নয়নকর্মী