দুই ম্যাচে ৩৪০ ডট বল, যা বললেন শান্ত
Published: 25th, February 2025 GMT
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৩৬ রান করে বাংলাদেশ। ৩০০ বলের এই খেলায় ১৮১ বল ডট খেলেছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। মানে ৩০.১ ওভার কোনো রানই নেননি বাংলাদেশি ব্যাটাররা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এজন্যই পেরে উঠেনি বাংলাদেশ। তাতে শেষ ম্যাচ খেলার আগে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দলের। এর আগে প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ১৫৯ বল ডট দিয়েছিলো বাংলাদেশ। ভারত ও নিউজিল্যান্ড দুই ম্যাচ মিলিয়ে বাংলাদেশের ডট দিয়েছে ৩৪০ বল বা ৫৬ দশমিক ৪ ওভার।
এমনিতেও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে সমস্যার শেষ নেই। ইনিংস বড় করায় মনোযোগে ঘাটতি, ম্যাচ পরিস্থিতি পড়তে না পারা, বল নির্বাচন ঠিকঠাক করতে না পারা, প্রয়োজনের সময় বিস্ফোরক হতে না পারা, এমন অনেক ঘাটতিই আছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলির একটি এই ডট বলের আধিক্য। তিনশ ছোঁয়া স্কোর বা বড় ইনিংস নিয়মিত গড়তে না পারার পেছনে বড় একটি কারণ এটি।
বর্তমানে ক্রিকেটে চলছে ‘বাজবল’ যুগে। যেখানে ওয়ানডেতেও ব্যাটাররা খেলে টি-টোয়েন্টি স্টাইলে। ফরম্যাট বিবেচনা না করেই দ্রুত রান তুলতে মনোযোগী তারা। কিন্তু বাংলাদেশ সেসবের ধার ধারতে রাজি নয়। চলমান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তারা ‘ডট বল’ দেওয়াকে যেন ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত করেছে!
বাংলাদেশ যে এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে, তা মেনে নিলেন দলটির অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও। ম্যাচ শেষে এর ব্যাখ্যা দিয়ে নামজুল হোসেন শান্ত বললেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই এই জায়গাটায় উন্নতির সুযোগ আছে। আমরা নিয়মিত ৩০০ করি না। এটি সত্যি কথা। এটি মেনে নিতেই হবে। তবে আমার মনে হয় আজ যদি ডট বলের কথা বলেন, একটা সময় ৫–১০ ওভার পরপরই আমাদের উইকেট পড়েছে। এটা ডট বল বেশি হওয়ার একটা কারণ। বড় জুটি গড়তে পারলে এত বেশি ডট বল হয়তো হতো না।’
শান্ত বলেন, ‘এই অভ্যাসটা তৈরি করা জরুরি যে, নিয়মিত আমরা কীভাবে তিনশ করতে পারি। আমরা হয়তো একদিন-দুদিন তিনশ করি। এখান থেকে বের হওয়ার জন্য অনুশীলনে বলেন, নিয়মিত কীভাবে ভালো উইকেটে খেলা যায়, নিয়মিত বড় দলের বিপক্ষে এই ধরনের স্কোর গড়া যায়, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আজকের ম্যাচে ডট বল হওয়ার কারণ, আমরা মাঝের ওভারগুলোয় কিছুক্ষণ পরপরই উইকেট দিয়ে দিয়েছি।’
শান্তদের সাম্প্রতিক হতশ্রী পারফরম্যান্স দেখে ক্রিকবাজের ম্যাচ বিশ্লেষণে সাবেক ভারতীয় ওপেনার দিনেশ কার্তিক বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট খুব শিগগির জিম্বাবুয়ে বা আয়ারল্যান্ডের পর্যায়ে নেমে যেতে পারে। সাকিবের পর তারা যেন সব বিভাগে নিষ্প্রভ। এটা সত্যিই হতাশাজনক।’
এই ব্যর্থতার বলয় ভাঙতে এলোমেলো ক্রিকেট থেকে বের হয়ে আসতে চান শান্ত, ‘আমরা সিরিজ জিতলেও বেশির ভাগ সময় ঘরের মাঠে জিতি। দেশের বাইরে সিরিজ কমই জেতা হয়। আইসিসি ইভেন্টেও একই অবস্থা। একদিন বোলিং ভালো হয় না, আরেক দিন ব্যাটিং খারাপ হয়, আরেক দিন ফিল্ডিং খারাপ হয়। কেমন যেন এলোমেলো ক্রিকেট হয়। আমাদের এটা থেকে বের হয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের
‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।
এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।