সুনামগঞ্জে বিএনপির ১২টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভার আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে এসব কমিটি ঘোষণার পর জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায় দলের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া দিরাই উপজেলায় কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ করেছেন দলের একাংশের নেতা–কর্মীরা।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুজন কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতিতে দিনভর সুনামগঞ্জ শহরের একটি রেস্তোরাঁয় বৈঠক করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতারা। পরে রাতে ১২টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভার আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রতিটি কমিটিতে একজন আহ্বায়ক ও চারজন করে যুগ্ম আহ্বায়কের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য কোনো পদ বা সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়নি।

১৬ ইউনিটের আংশিক কমিটি ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুনাজ্জির হোসেন।

কমিটি ঘোষণার পর রাত ১১টার দিকে জগন্নাথপুর উপজেলায় সংগঠনের এক পক্ষ আনন্দ মিছিল বের করে। পরে জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্টে দুই পক্ষের নেতা–কর্মীদের মধ্যে প্রথম কথা–কাটাকাটি এবং পরে হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একই সময় দিরাই উপজেলা শহরে ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ মিছিল করেন একাংশের নেতা–কর্মীরা।

ঘোষিত কমিটির মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় আহ্বায়ক হিসেবে আছেন ফারুক আহমদ (লিলু), সুনামগঞ্জ পৌরসভায় সাইফুল্লাহ হাসান (জুনেদ), বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় রাজু আহমেদ, জামালগঞ্জ উপজেলায় শফিকুর রহমান, তাহিরপুর উপজেলায় বাদল মিয়া, মধ্যনগর উপজেলায় আবে হায়াত, ধর্মপাশা উপজেলায় লিয়াকত আলী, শান্তিগঞ্জ উপজেলায় জালাল উদ্দিন, জগন্নাথপুর উপজেলায় আবু হুরায়রা ছাদ, জগন্নাথপুর পৌরসভায় সালাউদ্দিন মিঠু, ছাতক উপজেলায় ফরিদ উদ্দিন আহমদ, ছাতক পৌরসভায় শামছুল ইসলাম, দোয়ারাবাজার উপজেলায় আলতাফুর রহমান (খসরু), দিরাই উপজেলায় আমির হোসেন, দিরাই পৌরসভায় মিজানুর রহমান এবং শাল্লা উপজেলায় আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম।

গত বছরের ৪ নভেম্বর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে কলিম উদ্দিন আহমদকে আহ্বায়ক করে ৩২ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে কমিটিতে দলের নেতা আবদুল হকসহ (স্বাক্ষর ক্ষমতাসম্পন্ন) আরও পাঁচজনকে যুক্ত করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি প্রথম বৈঠকে জেলার ১৬টি ইউনিট কমিটি ভেঙে দেয়। পরে এসব কমিটির আহ্বায়ক পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। এতে প্রায় ৪০০ জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়ে। জেলা কমিটির নেতারা বৈঠক করে এসব জীবনবৃন্তান্ত যাচাই-বাছাই করেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি এসব কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও জেলা কমিটির নেতারা কিছু নাম নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ওই দিন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র উপজ ল য় স ন মগঞ জ ই উপজ ল প রসভ য় ব এনপ র কম ট র ক কম ট

এছাড়াও পড়ুন:

সাজেক যেন ‍যুদ্ধবিধ্বস্ত নগরী

মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে রিসোর্ট, কটেজ, রেস্তোরাঁর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগুনে পুড়ে গেছে ৩৪টি রিসোর্ট, সাতটি রেস্টুরেন্ট, ১৮টি দোকান ও ৩৬টি বসত ঘর। বর্তমানে সেখানে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

এদিকে, গতকাল সোমবার সাজেকে যেসব পর্যটক অবস্থান করছিলেন, তারা মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে গন্তব্যে ফিরে গেছেন। পর্যটক ভ্রমণে প্রশাসন নিরুৎসাহিত করার কারণে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে আজ কেউ ভ্রমণে আসেননি।

সাজেকে ভ্যালির যে অংশে আগুনে লেগেছে, হঠাৎ দেখলেই মনে হবে, যেন এটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত কোনো নগরী। মঙ্গলবার সকাল থেকেই সেনাবাহিনী, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুনের বাকি অংশ নেভানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছেন সেখানে। বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট লাইন সচলে কাজ করছেন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের কর্মীরা। 

আরো পড়ুন:

সাজেকে অগ্নিকাণ্ড: তদন্ত কমিটি গঠন

সাজেক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করল প্রশাসন

এলাকাবাসী জানান, আজ সকাল থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা আগুনে পুড়ে যাওয়া তাদের প্রতিষ্ঠানের পোড়া টিন ও ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করেন। এত বড় ক্ষতি কীভাবে সামাল দেবেন সেই চিন্তায় রয়েছে সবার চোখে মুখে।

ব্যবসায়ীরা জানান, সাজেকের অধিকাংশ রিসোর্ট কাঠ ও বাঁশের তৈরি। এ কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সাজেক ভ্যালিতে ফায়ার সার্ভিসের কোনো স্টেশন নেই। প্রাথমিকভাবে সেনাবাহিনী ও স্থানীয়রা মিলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। আগুন লাগার তথ্য জানতে পেরে খাগড়াছড়ি দীঘিনালা উপজেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রওনা দেন। তবে, পাহাড়ি পথের কারণে তাদের সাজেকে পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। এরপর তারা কাজ শুরু করলেও পানি না থাকায় দূর গ্রাম থেকে বারবার পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়। পাশাপাশি বাতাসের তীব্রতার কারণেও আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে সবাইকে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিতভাবে কাজ করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসী  

সাজেক কটেজ ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন বলেন, “সাজেকে আমাদের মোট ১২৬টি রিসোর্ট-কটেজ, ৬৪টি দোকান ও ২১টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এরমধ্যে পুড়েছে ৩৪টি রিসোর্ট, সাতটি রেস্টুরেন্ট ও ১৮টি দোকান। সে হিসেবে আগুনে পুড়েছে এক তৃতীয়াংশ রিসোর্ট, দোকান ও রেস্টুরেন্ট। বাকিগুলো ঠিক আছে। আমাদের যাদের রিসোর্ট পুড়ে গেছে, তাদের তো এমনিতেই লোকসান, তার ওপর বাকি যাদের ব্যবসা হওয়ার কথা, সেগুলোও যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সবাই লোকসানে থাকবে। তাই সাজেকে পর্যটনের কথা চিন্তা করে অন্তত পর্যটক ভ্রমণে প্রশাসন যে নিরুৎসাহিত করেছে, সেটা তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানাই।”

তিনি বলেন, “অনেকেই লেখালেখি করছেন, এখানে নাশকতা থাকতে পারে কিনা, কিন্তু আমরা জানি এখানে কোনো নাশকতা ঘটেনি। এটা একটা দুর্ঘটনা। নাশকতার কোনো হুমকি নেই। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা অনেক পরিশ্রম করেছেন। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “ভবিষ্যতে আগুন থেকে সাজেকবাসীকে রক্ষা করার জন্য এই পর্যটন কেন্দ্রে একটি ফায়ার স্টেশন এবং পানির রিজার্ভার প্রয়োজন।”

১৬৭ নম্বর রুইলুই মৌজার হেডম্যান লাল থাঙ্গা লুসাই বলেন, “আগুনের ঘটনায় আমার বাড়িসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনা পুড়ে গেছে।”

শতরঞ্জি ইকো রিসোর্টের মালিক নাইমুল ইসলাম বলেন, ‌“আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি আমার রিসোর্ট উদ্বোধনের কথা ছিল। আগুনে পুড়ে আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। অন্তত ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার।”

বিজিবি খাগড়াছড়ি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. আ. মোস্তাকিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন গিয়ে বলেন, “এটা কোনো নাশকতার ঘটনা নয়। যেহেতু রিসোর্টগুলো অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, তাই কোনো একটা রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত। এরপর আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সাজেকে একটা ফায়ার স্টেশন থাকা জরুরি।”

বাঘাইছড়ি সেনা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল আমিন বলেন, “ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখানে পানির রিজার্ভার থাকা প্রয়োজন। পানির রিজার্ভার থাকলে আগুনের ক্ষয়ক্ষতি আরো কম হতো।”

সাজেক কটেজ ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চাই থোয়াই চৌধুরী জয় বলেন, “গতকাল রাতে যেসব পর্যটক ছিল, তারা আজ সকালে চলে গেছেন। তাদের কারো কোনো সমস্যা হয়নি।”

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, “ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চলছে। কটেজ মালিক সমিতি পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহের বিষয়ে আমাদের জানিয়েছেন, যেন সেটা তুলে নেওয়া হয়। আমরা বিষয়টি বিবেচনার জন্য মিটিং আহ্বান করেছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ