পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড:মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়
Published: 25th, February 2025 GMT
পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। এখন মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনে করা মামলাটি এখনো বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
১৬ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ—বিজিবি) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। এতে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে তখন পিলখানায় নিহত হন ৭৪ জন। সেদিন পিলখানায় থাকা সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও নৃশংসতার শিকার হন।
পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় ৮৫০ জনকে আসামি করা হয়। দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই সবচেয়ে বড় মামলা। বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ মামলার রায় দেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগে চার আসামি মারা যান।
আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ ইতিমধ্যে আপিলের সারংক্ষেপ জমা দিয়েছে। আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত। আপিল শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে। এখন ক্রম অনুসারে শুনানি হতে পারে।আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মো.আমিনুল ইসলাম
দ্বিতীয় ধাপ পেরিয়ে হত্যা মামলা, আপিল কার্যতালিকায়
ফৌজদারি কোনো মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কারও মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যেটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। পিলখানা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৯ জন আসামি মারা গেছেন।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামির পক্ষে পৃথক ৭৩টি আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ে যাঁরা খালাস পেয়েছেন এবং যাঁদের সাজা কমেছে, এমন ৮৩ জন আসামির বিষয়ে ২০টি লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এই শুনানি হবে আপিল বিভাগে।
সারা দেশে বিশেষ আদালত গঠন করে বিদ্রোহের বিচার করা হয়। বিশেষ আদালত ৫৭টি মামলায় ৫ হাজার ৯২৬ জওয়ানকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিশেষ আদালতে বিচার চলার সময় মারা গেছেন ৫ জন।আইনজীবী সূত্রগুলোর তথ্যমতে, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ হওয়ার পর ২০২০ সালে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল করে। অন্যদিকে আসামিপক্ষ ২০২১ ও ২০২২ সালে পৃথক আপিল ও লিভ টু আপিল করে। আসামিপক্ষের আপিল ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। এরপর আসামিপক্ষের আপিল গত বছরের ২৩ জানুয়ারি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। আসামিদের এই আপিল চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ৪০৫ নম্বর ক্রমিকে ছিল।
এ মামলায় আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ ইতিমধ্যে আপিলের সারংক্ষেপ জমা দিয়েছে। আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত। আপিল শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে। এখন ক্রম অনুসারে শুনানি হতে পারে।
এ মামলার শুনানি শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মুলতবি চাওয়া হবে না বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
পিলখানায় নৃশংসতার ঘটনায় করা দুই মামলার মধ্যে হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ১৭৮ জন গত ১৯ জানুয়ারি বিচারিক আদালত থেকে জামিন (বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা) পেয়েছেন। অন্য আসামিরা কারাগারে আছেন।১৬ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি বিস্ফোরক মামলা
বিস্ফোরক আইনে করা মামলার সাক্ষী ১ হাজার ৩৪৪ জন। এখন পর্যন্ত ২৮৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ১৩ মার্চ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলার বিচারকাজ এখন কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে চলছে। এ মামলায় আসামি ৮৩৪ জন। তাঁদের মধ্যে ৫৭ জন মারা গেছেন। ২১ আসামি পলাতক।
পিলখানায় নৃশংসতার ঘটনায় করা দুই মামলার মধ্যে হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ১৭৮ জন গত ১৯ জানুয়ারি বিচারিক আদালত থেকে জামিন (বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা) পেয়েছেন। অন্য আসামিরা কারাগারে আছেন।
আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় প্রায় ২৫০ জনের জামিন আবেদন করা হয়েছে বিচারিক আদালতে। তাঁদের মধ্যে হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন এমন ১০০ জন রয়েছেন। অন্যরা হত্যা মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি (পিপি) বোরহান উদ্দিন গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ এবং আসামিদের জামিন আবেদনের ওপর আদেশের জন্য ১৩ মার্চ দিন ধার্য রয়েছে।
বিদ্রোহের বিচার
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিচার হয়েছে এই বাহিনীর নিজস্ব আইনে, যা সামারি ট্রায়াল (সংক্ষিপ্ত বিচার) নামে পরিচিত। তাতে ১০ হাজার ৯৭৩ জনকে বিভিন্ন ধরনের সাজা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৮ হাজার ৭৫৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অন্যরা প্রশাসনিক দণ্ড শেষে আবার চাকরিতে যোগ দেন।
এ ছাড়া সারা দেশে বিশেষ আদালত গঠন করে বিদ্রোহের বিচার করা হয়। বিশেষ আদালত ৫৭টি মামলায় ৫ হাজার ৯২৬ জওয়ানকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিশেষ আদালতে বিচার চলার সময় মারা গেছেন ৫ জন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক র যত ল ক য় র ষ ট রপক ষ র ঘটন য় কর আইনজ ব ব ড আর
এছাড়াও পড়ুন:
সাইফের ওপর হামলা: নিজেকে নির্দোষ দাবি করে অভিযুক্ত শরিফুলের জামিন আবেদন
গত ১৬ জানুয়ারি মাঝরাতে বলিউড সুপারস্টার সাইফ আলী খানের ওপর হামলা করেছিলেন এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। পুলিশের দাবি, এই তারকার বাসায় চুরি করার উদ্দেশ্যে ঢুকেছিলেন সেই ব্যক্তি। কিন্তু সাইফ বাধা দেওয়ায় আততায়ী তাঁকে ছুরি দিয়ে আক্রমণ করেছিলেন। সাইফের ওপর হামলার অভিযোগে বান্দ্রা পুলিশ শরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযুক্ত বাংলাদেশ নিবাসী। শরিফুল মুম্বাই সেশন কোর্টে জামিনের জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
মুম্বাইয়ের আর্থার রোড জেলে বন্দী আছেন শরিফুল। গ্রেপ্তার হওয়ার দুই মাস পর অভিযুক্ত জামিনের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। শরিফুল তাঁর আইনজীবী অজয় গাওলির মাধ্যমে আদালতের কাছে এক আবেদনপত্র পেশ করেছেন।
এই আবেদনপত্রে শরিফুল দাবি করেছেন, তিনি কোনো অপরাধ করেননি। আর তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে বলে এই আবেদনপত্রে বলা হয়েছে। এই আবেদনপত্রে আরও বলা হয়েছে যে শরিফুল তদন্তে পুরোপুরি সাহায্য করেছে। আর এফআইএর ভুয়া বলে আবেদনপত্রে দাবি করা হয়েছে। আইনজীবী জানিয়েছেন যে কল রেকর্ডিং এবং সিসিটিভির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণাদি প্রসিকিউশন আগে থেকে নিয়ে নিয়েছেন। আর তাই প্রমাণের সঙ্গে কাঁটাছেড়া করা বা সাক্ষীকে প্রতারণা করার মতো ভয় নেই।
আরও পড়ুনসাইফের হামলাকারীকে বান্দ্রা স্টেশনে দেখা গেছে, পুলিশের ৩৫টি দল অভিযানে১৭ জানুয়ারি ২০২৫গভীর রাতে হামলা করা হয়েছিল বলিউড তারকা সাইফ আলী খানের ওপর