স্লগ-সুইপে যে তিনিই দলের সেরা, সে দাবি নিয়ে কোনো তর্ক থাকতে পারে না। এই শট খেলেই যে তিনি অনেকবার সফল হয়েছেন, সেটাও অনস্বীকার্য। কিন্তু গতকাল ম্যাচ পরিস্থিতিতে তিনি যখন এই শটটি খেললেন, আর যেভাবে উইকেট দিয়ে এলেন; তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কুড়ি বছরের মতো তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা। ওয়ানডে আর টি২০ মিলিয়ে প্রায় ১৪টি আইসিসির আসর খেলা মুশফিকুর রহিমের কাছে অন্তত এমন শট আশা করেননি কেউ। ধারাভাষ্যকার ইয়ান স্মিথ তো বলেই দিলেন, ‘এত অভিজ্ঞতা নিয়ে এমন শট.
হয়তো তা শুনতে পাননি মুশফিক, কিন্তু যেভাবে মাথা নিচু করে বাইশ গজ ছাড়লেন তিনি, তাতে লজ্জা পেয়েছে বাংলাদেশি সমর্থকরা। শুধু মুশফিকুর রহিমই নন, দলের আরেক অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই বা কী করলেন এদিন। কিউই স্পিনার ব্রেসওয়েলকে ডাউন দ্য উইকেটে চালাতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে বসলেন। শুধু বাংলাদেশ দলেরই নয়, এই আসরে মোহাম্মদ নবিকে বাদ দিলে এরা দু’জনই সবচেয়ে বেশি বয়সী ক্রিকেটার। দু’জনে মিলে পাঁচশর বেশি ওডিআই খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে অথচ তাদের একজন এদিন করলেন ২ আরেকজনের রান ৪।
ভারতের বিপক্ষে শূন্য করার পর মুশফিকুর রহিমের কাছে এদিন দলের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। বাংলাদেশ দলের শুরুটাও নেহাত মন্দ ছিল না। ৪৫ রানের ওপেনিং জুটি এসেছিল। মিরাজ আউট হওয়ার পর দলের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ৬৪। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান তাওহিদ হৃদয় এসে কিছুটা যেন অস্বস্তিতে ছিলেন এদিন। তিনি ব্রেসওয়েলের বলে আউট হয়ে যাওয়ার পর শান্তকে নিয়ে যেখানে ইনিংস গড়ে তোলার দায়িত্ব ছিল মুশফিকের ওপর, সেখানে কিনা হৃদয় আউট হওয়ার ১৪টি বল পরই মুশফিকের আত্মঘাতী শট। যেখানে কিউই অধিনায়ক একপাশ থেকে টানা ব্রেসওয়েলকে বোলিং করিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর টার্ন দেখে। সেখানে কিনা তাঁর ওপরই চড়াও হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মুশফিক।
পিচ কন্ডিশন ও ম্যাচ পরিস্থিতিতে যে কৌশল বদলে নিতে হয়, সে কথা কিছুদিন আগেই বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পর বলেছিলেন ভারতীয় ওপেনার শুভমান গিল। বলেছিলেন প্রথমে পেসারদের খেলেছিলেন তিনি ফ্রন্টফুটে গিয়ে এবং স্পিনারদের খেলেছিলেন ব্যাকফুটে। বিরাট কোহলিও পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর বলেছিলেন কন্ডিশনের কারণে মাঝে তাঁকে শ্লথ খেলতে হয়েছিল। ৩৬ বছর বয়সে তাঁর এই সেঞ্চুরি ইনিংসের স্ট্রাইক রেট ঠিকই আছে। মুশফিক নিশ্চিত এসব সবার চেয়েও ভালো জানেন, কিন্তু তার পরও ভুল হয় তাঁর। তাহলে কি আটত্রিশ ছুঁইছুঁই বয়সই তাঁর দুর্বলতার কারণ। কেননা, যে শটটি তিনি এই বয়সে খেলেছিলেন, তা হয়তো বছর দশেক আগে হলে ছক্কা হয়ে যেত!
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাপারটাও কি ঠিক তাই। তিনিও সদ্য চল্লিশে পা দিয়েছেন। রিফ্লেক্স তাঁরও কি কমে যায়নি। এদিন সাত নম্বরে নেমে যেভাবে আউট হলেন, তা নিশ্চয় কোনো একাডেমিতে ক্রিকেট শিখতে যাওয়া কিশোরের কাছে উদাহরণ হতে পারে না। টানা বোলিং করে যাওয়া ব্রেসওয়েলের সেটাই ছিল কোটার শেষ ওভার। আর সেই ওভারের প্রথম বলেই কিনা চড়াও হলেন তিনি। যেখানে ১০৬ রানে ৪ উইকেট পড়ে গিয়েছে, একদিক আগলে রেখেছেন শান্ত, সেখানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ঠিক কী চাইছিলেন তখন? ক্যামেরার সামনে কখনও এই প্রশ্ন করলে হয়তো সৌজন্যমাখা উত্তর দেবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তিনি কিংবা মুশফিকুর রহিম; তারা দু’জনই তাদের স্বর্ণসময় পার করে এসেছেন বহু বছর আগেই।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েটে ক্লাস শুরু নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা
শিক্ষার্থী ও কুয়েট প্রশাসনের অনড় অবস্থানের কারণে সহসা কাটছে না খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অচলাবস্থা। সংকট নিরসনে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। প্রতিদিন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া শিক্ষক সমিতির নতুন আল্টিমেটামে আগামী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
কুয়েট সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে দেড় শতাধিক জন আহত হন। ওই দিন কিছু উশৃঙ্খল ছাত্র উপাচার্যকে মারধর, গালাগাল ও গায়ে থুথু দেয় বলে উপাচার্যের অভিযোগ। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য হল ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
গত ১৩ এপ্রিল দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বন্ধ থাকা কুয়েটে প্রবেশ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান শুরু করে। ১৪ এপ্রিল রাতে সিন্ডিকেট সভায় ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষে জড়িত ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার, আগামী ২ মে হল খোলা ও ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ১৫ এপ্রিল তালা ভেঙে ছয়টি হলে প্রবেশ করে।
এছাড়া ওই দিন তারা ৬ দফা দাবির পরিবর্তে উপাচার্যের অপসারণের ১ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ১৬ এপ্রিল উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও পোস্টার লাগায়। উপাচার্যকে বহাল রাখা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা শিক্ষার্থীদের শাস্তির দাবিতে পাল্টা মিছিল ও মানববন্ধন করেন কুয়েটের সব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী।
সর্বশেষ ১৭ এপ্রিল সকালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা শিক্ষার্থীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন কর্মচারীরা। আর উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে রাতে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। গত দুইদিন ধরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসের গেটে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা কোনো পক্ষকে বাধা দেয়নি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বহিরাগতরা তাদেরকে মারধর করার ঘটনায় থানায় মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। উল্টো বহিরাগত একজন ২২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে। এ ব্যাপারে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের পক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
তারা বলেন, ২ মাস ধরে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। হল বন্ধ ছিল, অনেকে হলে থেকে আশপাশের এলাকায় টিউশনি করে। তাদের টিউশনি বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। সে কারণে তারা তালা ভেঙে হলে উঠতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু হলে খাবার, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে তাদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারপরও উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বর্তমান উপাচার্যকে অপসারণ করে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে। সাময়িক বহিষ্কার করা ৩৭ জনের মধ্যে যে কয়জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।
অন্যদিকে কুয়েটের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম এম এ হাশেম বলেন, ছাত্ররা ভুল পথে আছে। তারা তালা ভেঙে হলে ঢুকে আইন লঙ্ঘন করেছে। তালা ভাঙা তাদের উচিত হয়নি। কারণ তালা দেওয়া হয়েছিল সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। তাদের উচিৎ আপাতত হল থেকে নেমে গিয়ে আগামী ২ মে হলে আসা।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সালাউদ্দিন ইউসুফ বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের দিন উপাচার্যের গায়ে ছাত্রদের হাত তোলা ঠিক হয়নি।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। আমাদের এক দফা দাবি হচ্ছে- যেসব ছাত্র দোষী সাব্যস্ত হবে, তারা শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ ক্লাসে ফিরে যাবো না।
এদিকে শিক্ষক সমিতির এ ঘোষণা নিয়ে নতুন জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হওয়া নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি কেন পদত্যাগ করবো? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থী ও কুয়েট প্রশাসন নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে কুয়েটে আগে থেকেই প্রায় দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে। এর উপর গত ২ মাস কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। এ অবস্থা চলমান থাকায় বাড়ছে সেশনজট।
কুয়েটের শিক্ষার্থী ওবায়দুল্লাহ বলেন, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ভর্তি হই। ইতোমধ্যে ৫ বছর পার হয়ে গেছে। আমরা ১ বছর ৩-৪ মাস সেশনজটের মধ্যে আছি। কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে, পরীক্ষা হবে তা অনিশ্চিত। ফলে সেশনজট আরও বাড়ছে।
২০১৯ ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের দেড় বছর সেশনজট ছিল। আরও ২ মাস পিছিয়ে গিয়েছি। গত ৪ মার্চের মধ্যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর আমাদের চাকরিতে ঢোকার কথা ছিল। কিন্তু এখনও পরীক্ষা বাকি রয়েছে।