ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার জিরাবোতে নিজ বাড়িতে ডাকাতের হামলায় আহত হয়েছেন অভিনয়শিল্পী আজিজুর রহমান আজাদ। গত রোববার গভীর রাতে বাড়িতে ডাকাতের উপস্থিতি টের পেয়ে এগিয়ে গেলে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর আজাদকে উদ্দেশ্য করে গুলি করে ডাকাতেরা। এ সময় আজাদের শরীরে তিনটি গুলি লাগে। ডাকাতের আক্রমণে আজাদের মা ও স্ত্রীও আহত হয়েছেন। কী ঘটেছিল সেদিন অভিনয়শিল্পী আজাদের জিরাবো এলাকার বাড়িতে?

বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন আজাদ। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আজাদের স্ত্রী রোকসানা হক।

২০১৬ সাল থেকে অভিনয়ে পথচলা শুরু আজাদের। এক বছরের বেশি সময় ধরে নাটক ও বিজ্ঞাপন চিত্রে তাঁর ব্যস্ততা বেড়েছে। অভিনয়ের ব্যস্ততা ও পারিবারিক কারণে স্ত্রী-সন্তান ও মাকে নিয়ে বছরখানেক ধরে ঢাকার উত্তরায় থাকেন আজাদ। তবে প্রতি সপ্তাহে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জিরাবোর বাড়িতে যান। ছুটির দিন মা, স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে কাটিয়ে তারপর আবার ঢাকায় ফিরে আসেন।

গত বৃহস্পতিবার আজাদ উত্তরা থেকে জিরাবোর পৈতৃক বাড়িতে যান। শনিবার গভীর রাতে ডাকাতের গুলিতে আহত হন আজাদ, তাঁর স্ত্রী রোকসানা হক ও মা আজিজুন নাহার। আজাদের স্ত্রীর কপালে পাঁচটি ও মাথায় দুটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। মায়ের এক্স-রে করা হয়েছে। আজাদের এমআরআই করা হয়েছে, গুলিতে আহত জায়গায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।

নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ অভিনেতা, ডাকাতের আক্রমণে মা ও স্ত্রী আহতআজিজুর রহমান আজাদ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আজ দ র ন আজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

১৮ বছর আগে চাকরিচ্যুত ৮২ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার চাকরিতে পুনর্বহালের পথ খুলল

১৮ বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে চাকরিচ্যুত ৮৫ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মধ্যে ৮৩ জনের চাকরিতে পুনর্বহালের পথ খুলেছে। আর ৮৫ জনের মধ্যে মারা যাওয়া তিনজনের উত্তরাধিকারীরা আইন অনুযায়ী প্রাপ্য সুবিধাদি পাবেন। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এই ৮৫ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।

এ-সংক্রান্ত রায়ের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতদের করা আপিল মঞ্জুর ও পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন নিষ্পত্তি করে আজ মঙ্গলবার রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ সর্বসম্মতিতে এ রায় দেন।

রায়ের পর আপিলকারীদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন প্রথম আলোকে বলেন, ৮৫ জনের মধ্যে জীবিত ৮২ জন বকেয়া সব বেতন-ভাতা, আইনে প্রাপ্য সব সুবিধা ও জেষ্ঠ্যতাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল হবেন। চাকরিচ্যুতির কারণে যে সময়টা তাঁরা অফিসে উপস্থিত ছিলেন না, সেই সময়টা অসাধারণ ছুটি হিসেবে গণ্য হবে বলে রায়ে এসেছে। যে তিনজন মারা গেছেন, তাঁদের উত্তরাধিকারীরা নির্বাচন কমিশনে দরখাস্ত সাপেক্ষে আইন অনুসারে সব সুবিধাদি পাবেন, যা আবেদনকারী জীবিত থাকলে পেতেন। সর্বসম্মতিতে আপিল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এই রায়ের আলোকে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

আজকের রায়ে ৮৫ জনকে চাকরিতে পুনর্বহালের করতে দেওয়া সিদ্ধান্ত বাতিল করে আপিল বিভাগ ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর যে রায় দিয়েছিলেন, তা বাতিল করা হয়েছে। প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বাতিল করে আপিল বিভাগ ওই রায় দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগের ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর দেওয়া রায়কে কেন্দ্র করে চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা একটি আপিল ও চারটি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। যার ওপর ২০ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত রায়ের জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখ রাখেন। সে অনুসারে আজ রায় ঘোষণা করা হলো।

এর আগে ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল ৮৫ কর্মকর্তার আপিল মঞ্জুর করে তাঁরা চাকরিতে আছেন ধরে নিয়ে পাওনা পরিশোধসহ আইনে প্রাপ্য সব সুবিধা দিয়ে অবিলম্বে তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে রায় দিয়েছিলেন।

আদালতে আপিলকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। পুনর্বিবেচনার আবেদনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও মো. রুহুল কুদ্দুস শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল ইসলাম। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া।

মামলার পূর্বাপর

আইনজীবীদের তথ্যমতে, ২০০৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে ৩২৭ জনকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে অস্থায়ীভাবে নির্বাচিত করা হয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ের এই নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ৩২৭ জনের মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ৮৫ জনকে ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর চাকরিচ্যুত করা হয়। এর বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুত প্রার্থীরা মামলা করলে ২০০৯ সালের ২৩ মার্চ তা খারিজ করে রায় দেন প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল। এর বিরুদ্ধে তাঁরা আপিল করেন। ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল ৮৫ কর্মকর্তার আপিল মঞ্জুর করে চাকরিতে পুনর্বহালের পক্ষে রায় দেন।

প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক চারটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ২০১০ সালের ২৯ এপ্রিল আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে সরকারপক্ষ পৃথক আপিল করে। সরকারপক্ষের করা আপিলগুলো মঞ্জুর করে ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর রায় দেন আপিল বিভাগ। এই রায়ে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল দেওয়া রায় (৮৫ কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের পক্ষে) বাতিল করা হয়।

আপিল বিভাগের ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ২০২৩ সালে পৃথক পাঁচটি আবেদন করেন চাকরিচ্যুতরা। শুনানি নিয়ে একটি রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ গত বছরের ৬ নভেম্বর লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) মঞ্জুর করে আদেশ দেন। একই সঙ্গে এই আপিলের (রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষিতে উদ্ভূত) সারসংক্ষেপ চার সপ্তাহের মধ্যে দায়ের করতে আবেদনকারীপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই আপিলের সঙ্গে অপর চারটি রিভিউ আবেদন শুনানিতে থাকবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। পৃথক আবেদনের শুনানি শেষে আজ রায় দেন আপিল বিভাগ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ