গাইবান্ধায় দুর্বৃত্তদের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতা আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে শহরের স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ মাঠে আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন গাইবান্ধা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান এবং যুগ্ম সদস্যসচিব শেফাউর রহমান। আহত শরিফুল ইসলাম ও শেফাউর রহমান গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। মেহেদি হাসানকে প্রাথমিক শিক্ষার ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনার প্রতিবাদ ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাত ১২টা থেকে গাইবান্ধা সদর কার্যালয় ঘেরাও করে রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শতাধিক নেতা–কর্মী। পুলিশের আশ্বাস পেয়ে রাত দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে যান।

শিক্ষার্থীদের পক্ষে মো.

আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে গতকাল রাতে গাইবান্ধা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৯–১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শহরে মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা।

পুলিশ, আহত ছাত্রনেতা ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শহরের স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ মাঠে মাসব্যাপী আয়োজিত বাণিজ্য মেলার শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। রাত ১০টার কিছুক্ষণ আগে শরিফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান ও শেফাউর রহমান মেলা প্রাঙ্গণে যান। এ সময় একটি দোকানে এক নারীকে হেনস্তা করা হচ্ছিল। তখন শরিফুল ইসলামসহ ছাত্রনেতারা প্রতিবাদ করেন। এতে একদল দুর্বৃত্ত পরিকল্পিতভাবে তাঁদের ওপর হামলা চালায়। তাঁদের তিনজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। শরিফুল ইসলামের পেটের একটু ওপর থেকে ৫০টির মতো সেলাই দিতে হয়েছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদ এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাত ১২টা থেকে গাইবান্ধা সদর কার্যালয় ঘেরাও করে রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শতাধিক নেতা–কর্মী। তাঁরা থানার সামনে বসে ‘দুর্বল প্রশাসন, লজ্জা লজ্জা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে পুলিশের আশ্বাস পেয়ে রাত দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা থানা থেকে থেকে চলে যান।

আজ মঙ্গলবার সকালে গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘ গতকাল রাতেই তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাঁদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এ ঘটন গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের মুসলমানদের ‘টার্গেট’ করে ওয়াক্‌ফ বিল পাস করা হয়েছে: জামায়াত নেতা জুবায়ের

মুসলমানদের ‘টার্গেট’ করেই ভারতের লোকসভায় তড়িঘড়ি করে বিতর্কিত ওয়াক্‌ফ (সংশোধন) আইন পাস করা হয়েছে বলে মন্তব৵ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। মুসলমানদের যাতে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো যায়, সে কারণেই এটা করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ‘ভারতের সংখ্যালঘু নিরাপত্তার স্বরূপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এহসানুল মাহবুব এ কথা বলেন। ‘গণশক্তি সভা’ নামের একটি সংগঠন এই সভার আয়োজন করে।

আলোচনায় এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ওয়াক্‌ফ আইনের বিতর্কিত সংশোধন ঘিরে ভারতজুড়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনে বাংলাদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির ওপর ভর করেই এই অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা ও অগ্রগতি হয়ে আসছে। মুসলমানদের টার্গেট করেই তড়িঘড়ি করে লোকসভায় এ বিল পাস করা হয়েছে, যাতে মুসলমানদের বলির পাঁঠা বানানো যায়।

ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার নোংরা সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসার বশীভূত হয়ে মুসলিম নিধনে নেমেছে বলে মন্তব্য করেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা এহসানুল মাহবুব। তিনি বলেন, ‘মোদি সরকার যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তা এই উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে হুমকির মুখে ফেলবে। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে ব্যবহার করে মুসলিমদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার খেলা বন্ধ করতে হবে। শত শত কোটি ডলারের ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি কুক্ষিগত করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে মোদি সরকার।’

ভারত সরকার যদি অবিলম্বে ওয়াক্‌ফ বিল প্রত্যাহার না করে তাহলে বাংলাদেশের মানুষ বৃহত্তর কর্মসূচি দিয়ে ভারতকে উচিত জবাব দেবে বলে মন্তব্য করেন এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অবিলম্বে যদি এই মুসলিম নিধন, মুসলমানদের ওপর যে নির্যাতন–নিষ্পেশন এটি যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে এর বিরুদ্ধে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, অচিরেই আমাদের এই প্রতিবাদ এই ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; এই প্রতিবাদ রাস্তায় নেমে আসবে।’

ভারতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন–নিপীড়নের প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানান শহিদুল ইসলাম। বাংলাদেশের ‘ফ্যাসিবাদীরা’ পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা সেখান থেকে এ দেশের মানুষকে উসকানি দিচ্ছে, এ দেশে আরেকটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ উসকে দেওয়ার জন্য ভারত চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টাও তাদের বন্ধ করতে হবে। সে চেষ্টা যদি তারা বন্ধ না করে তাহলে এ দেশের মানুষ যেমন ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়ে দিয়েছে, ভারতের বিরুদ্ধেও সেভাবে রুখে দাঁড়াবে।’

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সাদেক রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হাবিবুর রহমান পলাশ। প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘ভারতে ইসলামবিদ্বেষ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৬ সালের রাজ্য (বিধান সভা) নির্বাচনে বিজেপির সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য মুসলমানদের টার্গেট করা হচ্ছে। এটা কি শুধু নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার অপচেষ্টা? বিশ্ববাসীকে সজাগ থাকতে হবে যেন ভারত কোনোভাবেই আরেকটি ইসরায়েলে পরিণত না হয়।’

সভায় আরও বক্তব্য দেন কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফেরদৌস আজিজ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, অ্যাডভোকেট শেখ ওমর, অ্যাডভোকেট শাহ মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, মো. হুমায়ুন কবির, জাতীয় নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল আহাদ নূর, জাতীয় স্বাধীন পার্টির চেয়ারম্যান এম এইচ খান মজলিস, বাংলাদেশ জনতা ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আবু আহাদ আল মামুন, জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মজুমদার, ভাসানী–ন্যাপের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ ভাসানী, গবেষক আলাউদ্দিন কামরুল, রুহুল আমিন ইয়াসির আক্তার প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ