হবিগঞ্জে ১৩ কিলোমিটার পথে রাতে চলতে মানা পুলিশের, কারণ কী
Published: 25th, February 2025 GMT
হবিগঞ্জের সাতছড়ি আঞ্চলিক সড়ক (ঢাকা-সিলেট পুরোনো মহাসড়ক) দিয়ে রাত ১০টার পর জনসাধারণ ও যান চলাচল নিষেধ করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, নিরাপত্তার স্বার্থে এমন ব্যবস্থা। এ সময় মানুষ চলতে পারবে বিকল্প সড়ক দিয়ে। তবে এলাকাসীর দাবি, পুলিশের এই সিদ্ধান্তে মানুষের ভোগান্তি বাড়াবে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জের মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া ঢাকা-সিলেট পুরোনো মহাসড়ক ধরে চুনারুঘাট উপজেলা সদরে যাতায়াত চলে। ওই ১৩ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে রাত ১০টার পর যান চলাচল না করার জন্য মাধবপুর থানার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত ১০টার পর এ সড়কে চলাচলকারী কিছু যানবাহনকে বিকল্প সড়ক ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে চলাচল করতে বলা হয়।
পুলিশের ভাষ্য, এই ১৩ কিলোমিটার সড়কটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এবং চা-বাগানবেষ্টিত হওয়ায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। কেউ বিপদে পড়লেও তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের এ সিদ্ধান্ত।
চুনারুঘাট শহরের বাসিন্দা আইযুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক হয়ে চুনারুঘাট উপজেলা সদরে যাওয়ার একমাত্র সহজ পথ হলো সাতছড়ি আঞ্চলিক সড়ক। ২০ কিলোমিটার ঘুরে শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে চুনারুঘাট যাওয়ার কোনো কারণ নেই। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। তিনি পুলিশের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এ বিষয়ে সোমবার মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গতকাল উপজেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সভায় মাধবপুর উপজেলার শাহজাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এই সড়কে নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরেন। এ কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে জনসাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে রাত ১০টার পর বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়েছে। তবে রাস্তা বন্ধ রাখার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। প্রতিদিন পুলিশের ভ্রাম্যমাণ দল দায়িত্ব পালন করছে। মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া এলাকায় পুলিশের তল্লাশিচৌকি থাকবে। কেউ চুনারুঘাট যেতে চাইলে পুলিশি পাহারায় যেতে পারবেন।
আইনশৃঙ্খলার স্বার্থ দেখিয়ে পুলিশ সড়কে এভাবে যাতায়াত বন্ধ করতে পারে কি না, জানতে চাইলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) এ এন এম সাজেদুর রহমান বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয় জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত পুলিশ থেকে নেওয়া হয়নি। তবে বিষয়টি হলো, এই সড়কে চলাচলে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, বিকল্প সড়ক ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ত ১০ট র পর ম ধবপ র ব কল প উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদযাত্রা: সদরঘাটে চিরচেনা ভিড়
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী সোম কিংবা মঙ্গলবার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হবে। ঈদের আনন্দ পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী ছাড়ছেন অনেকেই। যারা ঢাকা থেকে নৌপথে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে চান, তাদের বেশিরভাগের প্রথম গন্তব্য সদরঘাট নৌ টার্মিনাল। এখান থেকেই লঞ্চে করে যাত্রা করেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের উদ্দেশে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরে সদরঘাটে গিয়ে দেখা গেছে সেই চেনা দৃশ্য—যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। নৌপথে যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সদরঘাট টার্মিনালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। লঞ্চে প্রবেশমুখে দায়িত্ব পালন করছেন আনসার সদস্যরা।
ঈদযাত্রা নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, অতিরিক্ত ভাড়া কিংবা বাড়তি যাত্রী নিলেই বাতিল করা হবে লঞ্চের লাইসেন্স।
শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৫০টি যাত্রীবাহী লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে যাবে। দুপুরের মধ্যে বেশকিছু লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে চলে গেছে।
টার্মিনালে দেখা গেছে, পন্টুনে নোঙর করা লঞ্চগুলোর সামনে কর্মচারীরা যাত্রীদের ডাকছেন। যাত্রীদের চাপও অনেক। লঞ্চের ডেকে যাত্রীরা বসে আছেন। কেবিনের টিকিট আগেই বুকিং হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময়েই লঞ্চগুলো ছেড়ে যাচ্ছে।
এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের সামনে কথা হয় রাজ্জাক হোসেন নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করব। রাস্তায় যানজট হতে পারে, তাই আগেভাগেই বাসা থেকে চলে এলাম। চাহিদা বেশি থাকলেও কেবিন কম। আমাদের কেবিন বুকিং করা ছিল। লঞ্চের যাত্রায় কোনো কষ্ট নেই। তাই, বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে প্রতিবছরই লঞ্চে বরিশালে গ্রামের বাড়িতে যাই। যারা এখন আসছেন, তারা ডেকে বসে যাবেন।”
বরগুনাগামী এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চে কথা হয় আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, চার বছর আগে ঈদের সময় লঞ্চে জায়গা পাওয়া যেত না। অনেক সময় ছাদে ঝুঁকি নিয়ে যেতে হতো। আজ আগের মতো ভিড় না থাকলে যাত্রীর চাপ আছে মোটামুটি। লঞ্চ বলা হলেও এটা বিরাট একটা জাহাজ। হাজার হাজার লোক উঠলেও বোঝা যায় না। ডেকে শুয়ে-বসে যাওয়া যায়। বাসে ভ্রমণ করলে আমার পা ব্যথা করে। এ কারণে বাসে আমি যাই না।”
এমভি জামাল-৮ লঞ্চের যাত্রী আলেয়া বেগম বলেন, “আমি পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় যাব। লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যা ৭টায়। রাস্তায় জ্যাম হতে পারে, তাই আগেভাগে বাসা থেকে বের হয়ে চলে এসেছি। লঞ্চের যাত্রা আরামদায়ক। এবার আরামে বাড়ি যেতে পারব।”
এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চের সুপারভাইজার কালাম হোসেন বলেন, “আমাদের লঞ্চে ৮০টি কেবিন আছে। ইতোমধ্যে সব বুকিং হয়ে গেছে। যাত্রীর চাপ ভালোই আছে।”
অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার সদস্য ও এমভি অভিযান লঞ্চের মালিক হামজা লাল শেখ বলেন, আজ যাত্রীর চাপ আছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পর্যাপ্ত লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সুরভি শিপিং লাইনস কোম্পানির পরিচালক রেজিন উল কবির বলেন, ঢাকা সদরঘাট থেকে বরিশালে বিশেষ সার্ভিস শুরু হয়েছে। যাত্রী পরিবহনে বরিশাল-ঢাকা রুটে সরাসরি চলাচল করছে ২৬টি লঞ্চ। ২৫ মার্চ শুরু হয়েছে ঈদের বিশেষ সার্ভিস। ২৬টি লঞ্চ তিন ভাগে ভাগ হয়ে ঈদে বিশেষ সার্ভিস পরিচালনা করছে। বরিশাল ও ঢাকার কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করার ব্যবস্থা আছে।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন বলেছেন, নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তার জন্য বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা–কর্মচারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও হয়রানি বরদাশত করা হবে না। নির্ধারিত সময়ে পন্টুন থেকে লঞ্চ ছাড়ছে। এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
ঢাকা/এএএম/রফিক