সুন্দরবনে মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে মা কাঁকড়া শিকার
Published: 25th, February 2025 GMT
কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হিসেবে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস সুন্দরবনে কাঁকড়া শিকার নিষিদ্ধ। তবে অসাধু জেলেরা মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে অবাধে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া শিকার করছেন। এতে কাঁকড়ার প্রজনন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সুন্দরবনসংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাছের চেয়ে বড় কারবার এখন কাঁকড়ার ব্যবসায়। উপজেলার জোড়শিং, ঘড়িলাল, বানিয়াখালী, দেউলিয়া বাজারসহ কাঁকড়া বিক্রির আড়তগুলোতে প্রতিদিন কয়েক শ মণ কাঁকড়া বেচাকেনা হচ্ছে। প্রজনন মৌসুমে শিকার নিষিদ্ধ হলেও তা উপেক্ষা করেই জেলেরা সুন্দরবন ও বনসংলগ্ন বিভিন্ন নদ-নদী থেকে কাঁকড়া ধরে আনছেন।
গত রোববার কয়রা উপজেলার কয়েকটি কাঁকড়ার আড়তে ঘুরে এর সত্যতা পাওয়া গেল। আড়তগুলোতে বস্তায় বস্তায় কাঁকড়া এসেছে সুন্দরবন থেকে। সেগুলো পরিমাপ আর দড়ি দিয়ে বাঁধায় ব্যস্ত লোকজন। কয়রার দেউলিয়া বাজার কাঁকড়া আড়তে কাঁকড়া বিক্রি করতে আসা দুই ব্যক্তি বললেন, ‘এখন কাঁকড়া শিকার নিষিদ্ধ হওয়ায় বন বিভাগ কাঁকড়ার পাস (অনুমতিপত্র) দেয় না। আমরা মাছ ধরার পাস নিয়ে বনে ঢুকে কাঁকড়া ধরে এনেছি। বোঝেনই তো বন্ধের সময় সবকিছু একটু ম্যানেজ করেই করা লাগে।’
গত বুধবার সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে থেকে কাঁকড়া আহরণের অভিযোগে আটক হন দুই জেলে। কয়রা আদালতে নেওয়ার সময় আবদুল্লাহ সরদার ও আফজাল হোসেন নামের আটক দুই জেলের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, সুন্দরবনের ভোমরখালী টহল ফাঁড়ির কুকুমারী খাল এলাকায় কাঁকড়া শিকারের সময় বন বিভাগের স্মার্ট টহল টিমের সামনে পড়ে গিয়েছিলেন বলে আটক হতে হয়েছে। ওই এলাকায় আরও অনেকের কাঁকড়ার নৌকা আছে। তাঁরা লুকিয়ে থাকায় ধরা পড়েননি।
রোববার কয়রার মহেশ্বরীপুর গ্রামসংলগ্ন সুন্দরবনের কয়রা নদীতে দেখা যায়, এক জেলে নৌকায় বসে নদীতে পেতে রাখা ‘চারো’ বা ‘আটোন’ নামের একধরনের কাঁকড়া শিকারের ফাঁদ তুলছেন। ফাঁদের ভেতর থেকে কাঁকড়া নিয়ে সিনথেটিক সুতা দিয়ে বেঁধে নৌকার মধ্যে রাখছেন তিনি। তার একটু সামনে আগাতেই সুন্দরবনঘেঁষা তেঁতুলতলার চর গ্রাম। সেখানকার বসতির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়রা নদী ধরে কাঁকড়া শিকারের ফাঁদ নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছিলেন ফরিদ হোসেন নামের এক জেলে।
ফরিদ হোসেন বলেন, এখন বনের মধ্যে যে কয়টি নৌকা আছে, সবগুলোই কাঁকড়াশিকারিদের নৌকা। বন্ধ মৌসুমে কাঁকড়া ধরে ডাঙায় আনা বড্ড ঝামেলার কাজ। জীবিত অবস্থায় কাঁকড়া নিয়ে আড়তে ফিরতে না পারলে সেই চালানের কোনো দামই পাওয়া যায় না। তবে কাঁকড়ার কারবার এখন বেশ লাভজনক। কাঁকড়া শিকার নিষিদ্ধ হলেও বন বিভাগের চোখ এড়িয়ে সুন্দরবনজুড়ে চলছে এই অবৈধ কাজ।
গতকাল সোমবার কয়রার সুন্দরবনসংলগ্ন দক্ষিণ বেদকাশী এলাকার গিয়ে দেখা যায়, সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া শিকার করে সবেমাত্র লোকালয়ে ফিরেছেন পরিমল মণ্ডল নামের এক জেলে। শাকবাড়িয়া নদীর তীরে নৌকা বেঁধে রাখছিলেন তিনি। নৌকার ওপর তিনটি প্লাস্টিকের ঝুড়িতে ভরা কাঁকড়া। তিনি বলেন, ‘ডাকাতদের ভয়ে সুন্দরবনের বেশি ভেতরে যাইনি।’ ‘বন্ধের সময় কাঁকড়া ধরলেন কীভাবে?’ জানতে চাইলে পরিমল বলেন, এলাকায় মহাজনদের কাছে একেকটা কাঁকড়া শিকারের নৌকার জন্য ৫০০ টাকা দিতে হয়। টাকা দিলে বন বিভাগের লোকেরাও আর বাধা দেন না।
সুন্দরবনের কয়রা নদীতে নৌকায় করে কাঁকড়া ধরার জন্য ফাঁদ ফেলেছেন এক জেলে। রোববার কয়রা নদীর পাড়ে।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন র বন ব ভ গ এক জ ল র কয়র র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
কয়রায় নৌকায় ৬২ কেজি হরিণের মাংস ফেলে পালাল চোরা শিকারিরা
খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবনে অবৈধভাবে শিকার করা হরিণের ৬২ কেজি মাংস উদ্ধার করেছেন কোস্টগার্ড ও বন বিভাগের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা। আজ শনিবার ভোরের দিকে কয়রা উপজেলার ঘড়িলাল গ্রামসংলগ্ন কপোতাক্ষ নদে যৌথ অভিযান চালিয়ে এসব মাংস উদ্ধার করা হয়। তবে এ সময় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি, মাংস ফেলে পালিয়ে যায় চোরা শিকারিরা।
ঘড়িলাল গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গ্রামের পাশের একটি ছোট নদী পেরোলেই সুন্দরবনের গহিন জঙ্গল। হরিণশিকারিরা ছদ্মবেশে বনে ঢুকে নাইলনের দড়ি দিয়ে একধরনের ফাঁদ বানিয়ে হরিণের যাতায়াতের পথে রাখে। চলাচলের সময় প্রাণীগুলো সেই ফাঁদে আটকে যায়। এরপর বনের ভেতর থেকেই মাংস কেটে লোকালয়ে এনে তা বিক্রি করা হয়।
বন বিভাগের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা কপোতাক্ষ নদ ধরে কয়রার ঘড়িলাল গ্রামের কাছাকাছি পৌঁছে ভোরের আবছা আলোয় একটি নৌকা দেখতে পাই। এতে বসে দুজন বইঠা বাইছিল। আমাদের ট্রলারটি ওই নৌকার কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই তাঁরা কপোতাক্ষ নদে ঝাঁপিয়ে পালিয়ে যান। পরে পরিত্যক্ত নৌকাটি তল্লাশি করে ভেতরের একটি পাত্রে বরফ দেওয়া অবস্থায় ৬২ কেজি হরিণের মাংস পেয়েছি।’
বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবন–সংলগ্ন কয়রায় ৩০টির বেশি চোরা শিকারি চক্র ফাঁদ পেতে হরিণ নিধন করে। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শুধু কয়রা থেকে ২০৪ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে সুন্দরবনের ছেড়ারখাল এলাকা থেকে ৯০ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করেন সুন্দরবনের খাঁশিটানা বন টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা।
এসব চোরা শিকার বন্ধে বন বিভাগের পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, ‘আমরা বন্য প্রাণী শিকারে জড়িত ব্যক্তিদের তথ্যদাতাকে পুরস্কার দিচ্ছি। এতে আগের তুলনায় বন্য প্রাণী শিকার কমেছে। আজ জব্দ করা হরিণের মাংস মাটিতে পুঁতে বিনষ্ট করা হবে।’