কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হিসেবে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস সুন্দরবনে কাঁকড়া শিকার নিষিদ্ধ। তবে অসাধু জেলেরা মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে অবাধে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া শিকার করছেন। এতে কাঁকড়ার প্রজনন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সুন্দরবনসংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাছের চেয়ে বড় কারবার এখন কাঁকড়ার ব্যবসায়। উপজেলার জোড়শিং, ঘড়িলাল, বানিয়াখালী, দেউলিয়া বাজারসহ কাঁকড়া বিক্রির আড়তগুলোতে প্রতিদিন কয়েক শ মণ কাঁকড়া বেচাকেনা হচ্ছে। প্রজনন মৌসুমে শিকার নিষিদ্ধ হলেও তা উপেক্ষা করেই জেলেরা সুন্দরবন ও বনসংলগ্ন বিভিন্ন নদ-নদী থেকে কাঁকড়া ধরে আনছেন।

গত রোববার কয়রা উপজেলার কয়েকটি কাঁকড়ার আড়তে ঘুরে এর সত্যতা পাওয়া গেল। আড়তগুলোতে বস্তায় বস্তায় কাঁকড়া এসেছে সুন্দরবন থেকে। সেগুলো পরিমাপ আর দড়ি দিয়ে বাঁধায় ব্যস্ত লোকজন। কয়রার দেউলিয়া বাজার কাঁকড়া আড়তে কাঁকড়া বিক্রি করতে আসা দুই ব্যক্তি বললেন, ‘এখন কাঁকড়া শিকার নিষিদ্ধ হওয়ায় বন বিভাগ কাঁকড়ার পাস (অনুমতিপত্র) দেয় না। আমরা মাছ ধরার পাস নিয়ে বনে ঢুকে কাঁকড়া ধরে এনেছি। বোঝেনই তো বন্ধের সময় সবকিছু একটু ম্যানেজ করেই করা লাগে।’

গত বুধবার সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে থেকে কাঁকড়া আহরণের অভিযোগে আটক হন দুই জেলে। কয়রা আদালতে নেওয়ার সময় আবদুল্লাহ সরদার ও আফজাল হোসেন নামের আটক দুই জেলের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, সুন্দরবনের ভোমরখালী টহল ফাঁড়ির কুকুমারী খাল এলাকায় কাঁকড়া শিকারের সময় বন বিভাগের স্মার্ট টহল টিমের সামনে পড়ে গিয়েছিলেন বলে আটক হতে হয়েছে। ওই এলাকায় আরও অনেকের কাঁকড়ার নৌকা আছে। তাঁরা লুকিয়ে থাকায় ধরা পড়েননি।

রোববার কয়রার মহেশ্বরীপুর গ্রামসংলগ্ন সুন্দরবনের কয়রা নদীতে দেখা যায়, এক জেলে নৌকায় বসে নদীতে পেতে রাখা ‘চারো’ বা ‘আটোন’ নামের একধরনের কাঁকড়া শিকারের ফাঁদ তুলছেন। ফাঁদের ভেতর থেকে কাঁকড়া নিয়ে সিনথেটিক সুতা দিয়ে বেঁধে নৌকার মধ্যে রাখছেন তিনি। তার একটু সামনে আগাতেই সুন্দরবনঘেঁষা তেঁতুলতলার চর গ্রাম। সেখানকার বসতির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়রা নদী ধরে কাঁকড়া শিকারের ফাঁদ নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছিলেন ফরিদ হোসেন নামের এক জেলে।

ফরিদ হোসেন বলেন, এখন বনের মধ্যে যে কয়টি নৌকা আছে, সবগুলোই কাঁকড়াশিকারিদের নৌকা। বন্ধ মৌসুমে কাঁকড়া ধরে ডাঙায় আনা বড্ড ঝামেলার কাজ। জীবিত অবস্থায় কাঁকড়া নিয়ে আড়তে ফিরতে না পারলে সেই চালানের কোনো দামই পাওয়া যায় না। তবে কাঁকড়ার কারবার এখন বেশ লাভজনক। কাঁকড়া শিকার নিষিদ্ধ হলেও বন বিভাগের চোখ এড়িয়ে সুন্দরবনজুড়ে চলছে এই অবৈধ কাজ।

গতকাল সোমবার কয়রার সুন্দরবনসংলগ্ন দক্ষিণ বেদকাশী এলাকার গিয়ে দেখা যায়, সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া শিকার করে সবেমাত্র লোকালয়ে ফিরেছেন পরিমল মণ্ডল নামের এক জেলে। শাকবাড়িয়া নদীর তীরে নৌকা বেঁধে রাখছিলেন তিনি। নৌকার ওপর তিনটি প্লাস্টিকের ঝুড়িতে ভরা কাঁকড়া। তিনি বলেন, ‘ডাকাতদের ভয়ে সুন্দরবনের বেশি ভেতরে যাইনি।’ ‘বন্ধের সময় কাঁকড়া ধরলেন কীভাবে?’ জানতে চাইলে পরিমল বলেন, এলাকায় মহাজনদের কাছে একেকটা কাঁকড়া শিকারের নৌকার জন্য ৫০০ টাকা দিতে হয়। টাকা দিলে বন বিভাগের লোকেরাও আর বাধা দেন না।

সুন্দরবনের কয়রা নদীতে নৌকায় করে কাঁকড়া ধরার জন্য ফাঁদ ফেলেছেন এক জেলে। রোববার কয়রা নদীর পাড়ে।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র বন ব ভ গ এক জ ল র কয়র র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনে নৌকায় ৫০ কেজি হরিণের মাংস ফেলে পালালেন শিকারিরা

সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকার করে মাংস কেটে নৌকার পাটাতনে বিছিয়ে রেখেছিল শিকারির দল। জেলের ছদ্মবেশে নৌকা নিয়ে ফিরছিলেন লোকালয়ে। এ সময় বন বিভাগের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা হাজির হলে নৌকায় মাংস ফেলে খালের মধ্যে লাফিয়ে সাঁতরে গহিন বনে পালিয়ে যান শিকারিরা।

পরে নৌকার পাটাতনের নিচ থেকে ৫০ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করেন বনরক্ষীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুন্দরবনের মায়ের খাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

দুপুরে সুন্দরবন-সংলগ্ন কয়রা উপজেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে দেখা যায়, জব্দ করা হরিণের মাংস আদালতে আনা হয়েছে। আদালত ভবনের কাছাকাছি গর্ত খুঁড়ছেন এক ব্যক্তি। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন বনকর্মী। তাঁরা জানান, আদালতের নির্দেশে হরিণের মাংস মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে।

বন বিভাগের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, আজ সকালে তিনি কয়েকজন বনরক্ষী নিয়ে টহল দিতে ট্রলার নিয়ে বনে যান। আড়পাঙ্গাসিয়া নদী পেরিয়ে মায়ের খাল ধরে একটু আগাতেই একটি জেলেনৌকা দেখতে পান। দুজন নৌকায় বইঠা বাইছিলেন। তাঁদের নৌকার কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই তাঁরা নৌকা ফেলে খাল সাঁতরে গহিন বনে পালিয়ে যান। ঘন জঙ্গলে ঢুকে পড়ায় পিছু নিয়েও কাউকে আটক করা যায়নি।

আনোয়ার হোসেন বলেন, পালিয়ে যাওয়া শিকারিদের শনাক্ত করা গেছে। তাঁদের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সোরা গ্রামে। পরিত্যক্ত নৌকা তল্লাশি করে ৫০ কেজি হরিণের মাংস এবং মাছ ধরতে আসা জেলে হিসেবে বন বিভাগের অনুমতিপত্র পেয়েছেন।

সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, সুন্দরবনে যাঁরা হরিণ শিকার করেন, তাঁরা ফাঁদ বহন করেন না। জেলের ছদ্মবেশে মাছ ধরার জালের সঙ্গে দড়ি নিয়ে যান। বনের ভেতর বসে সেই দড়ি দিয়ে হরিণ ধরার ফাঁদ তৈরি করেন। তারপর হরিণের যাতায়াতের পথে ফাঁদ পেতে রাখেন। চলাচলের সময় প্রাণীগুলো সেই ফাঁদে আটকা পড়ে। পরে বনের ভেতরে মাংস কেটে লোকালয়ে এনে বিক্রি করা হয়। শিকার শেষে ফিরে যাওয়ার সময় ফাঁদগুলো বস্তায় ভরে জঙ্গলের ভেতর মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখা হয়। সময়-সুযোগ পেলেই তাঁরা আবার শিকারে আসেন।

বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হরিণ শিকারের জন্য সুন্দরবন অঞ্চলের ৩০টির মতো ছোট-বড় চক্র আছে। হরিণের মাংস, চামড়া ও শিং পাচারকারী এসব চক্রে জড়িত শতাধিক ব্যক্তি। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত সুন্দরবন থেকে ৭৫৭ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৩৬টি। আসামি করা হয়েছে ৮৪ জনকে। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫১৪ কেজি ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫২৩ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছিল।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হরিণ শিকারের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। সুন্দরবনে আগের তুলনায় বন্য প্রাণী শিকার কমে এসেছে। হরিণের মাংস জব্দের ঘটনা আজ কয়রা জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হবে। হরিণ নিধনে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাঙিয়ে তোলো ঈদের ছুটি...
  • সুন্দরবনের গাছে গাছে ফুল, মৌমাছির গুঞ্জন
  • সুন্দরবনে নৌকায় ৫০ কেজি হরিণের মাংস ফেলে পালালেন শিকারিরা
  • খুলনায় ৫০ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার
  • খুলনায় ৫০ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার 
  • আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের সাড়ে ৫ একর বনভূমি
  • যশোর সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে বার্ড ফ্লু শনাক্ত