নিরাপত্তা চেয়ে দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ
Published: 25th, February 2025 GMT
হত্যা, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, ছিনতাই, ডাকাতিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে গতকাল সোমবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তারা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন। এসব দাবিতে গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে গণপদযাত্রা শিক্ষা ভবনের সামনে আটকে দেয় পুলিশ। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন দ্রুত জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের দাবি করেছেন ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে আন্দোলনকারীরা। তারা বলেছেন, পদত্যাগ না করলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে মশাল মিছিল হবে।
গতকাল বিকেলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ ও ধর্ষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াসহ ৯ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে যাওয়ার সময় শিক্ষা ভবনের সামনে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। বাধা পেয়ে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে শিক্ষা ভবনের সামনে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু কেউ আসেননি। এরপর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে ফিরে যান আন্দোলনকারীরা।
রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
এর আগে রোববার রাত সোয়া ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হল প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়। ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র সাকিব আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা শহরের প্রতিটি অলিগলিতে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী আর ডাকাতরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এসব প্রতিরোধ করতে না পারার কারণে এই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাঁর চেয়ারে বসার নীতিগত যোগ্যতা হারিয়েছেন।’
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, সামগ্রিকভাবে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আমরা সিভিল পোস্ট থেকে চেষ্টা করছি আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করতে। জনজীবনে যেন আতঙ্ক না ছড়ায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। এ আন্দোলনে আমাদের সংহতি রয়েছে।
গতকাল কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিন।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছিনতাইয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি
রাজধানীর বনশ্রী, সবুজবাগ, খিলগাঁও ও রামপুরা থানা স্বর্ণ শিল্পালয় মালিক সমিতির সদস্য ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে গুলি করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। গতকাল দুপুরে ছিনতাইয়ের স্থানে প্রথমে মানববন্ধন করেন তারা। পরে বনশ্রীর মূল সড়ক অবরোধ করেন। তাদের দাবি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
ভিকারুননিসায় বিক্ষোভ
সহিংসতা ও ধর্ষণ বন্ধে রাজধানীর বেইলি রোডে বিক্ষোভ করেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তাদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন– ‘আমার বোন কবরে, ধর্ষক কেন বাইরে’, ‘ধর্ষকের চামড়া, তুলে নেব আমরা’, ‘আমাদের বাংলায়, ধর্ষকের ঠাঁই নাই’।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকে গিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রতীকী অবরোধ ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতীকী গায়েবানা জানাজা
ধর্ষকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিত এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগসহ সাত দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। সমাবেশ শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের প্রতীকী গায়েবানা জানাজা পড়েন শিক্ষার্থীরা।
আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে উদ্বেগ
সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানিয়েছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন স্থানে নৈরাজ্যকর অবস্থার পর সোমবার রাত সাড়ে ৩টায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাঁর বাসভবনে নাটকীয় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা শুধু দায়িত্বহীন নয়, সত্যের অপলাপ মাত্র।
বিবৃতিতে সই করেছেন বাম জোটের সমন্বয়ক ইকবাল কবির জাহিদ, কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোহাম্মদ শাহ আলম, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজলুর রশীদ ফিরোজ, মোশরেফা মিশু, মাসুদ রানা ও আব্দুল আলী।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও রুহিন হোসেন প্রিন্স পৃথক বিবৃতিতে বলেন, জানমালের নিরাপত্তা দিতে না পারার দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি দূর করার ক্ষেত্রে দায়িত্ব নেওয়ার বদলে দেখেও না দেখার নীতি অবলম্বন করছে।
গণফোরাম সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক ডা.
নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী এক বিবৃতিতে অব্যাহত নারী ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি বিবৃতিতে বলেছে, বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে, যা কোনো সভ্য দেশে কাম্য নয়।
আইনের কঠোর প্রয়োগ চায় আসক
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গণতন্ত্র যদি সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতেই থাকবে। বর্তমানে যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে নারীর চলাফেরার অধিকার সংকুচিত হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যদিও অনেক কঠোর আইন রয়েছে, তবে আইনগুলোর বাস্তবায়ন বা যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে কিনা, সেটি পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের নেতারা। পাশাপাশি সম্প্রতি ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা এসবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলা শাখার উদ্যোগে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এ হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
ধর্ষণ ও নারীদের প্রতি অবমানকর আচরণের প্রতিবাদে বরিশাল নগরীতে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। গতকাল ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের ব্যানারে এ কর্মসূচিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হয়। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের রৌমারীতে মানববন্ধন হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। শেরপুরের নকলা উপজেলায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে ছাত্রদলের ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নারায়ণগঞ্জে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন।
সাভারে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে রোববার রাতে এক নারী পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। সোমবার সকালে খবরটি কারখানায় ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিক্ষুব্ধরা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো ও প্রতিনিধি)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর স থ ত র ক অবর ধ র অবনত স মব র কর ছ ন র ঘটন গতক ল অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
আইনের হাত বনাম নিজের হাত
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিশেষত বাংলাদেশে গত ২৬ জুলাই-পরবর্তী আট মাসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। গণপিটুনি, স্থানীয়ভাবে বিচারকাজ পরিচালনা, মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ এসব অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং আইনশৃঙ্খলার ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস দানা বাঁধে, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। জনগণ যখন ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। এর ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ে।
এ সমস্যা নিরসনে যথাযথ আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে তার কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং মিথ্যা অভিযোগ ও গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি সুস্থ, ন্যায়ভিত্তিক ও স্থিতিশীল সমাজ গঠন সম্ভব।
অনেক সময় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ সময় এবং অর্থ ব্যয় করতে হয়। অতীতে বহু অপরাধের বিচার হয়নি; প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে এবং অপরাধীরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ব্যবহার করে অথবা আইন ও পুলিশি ব্যবস্থার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিচার কার্যক্রম প্রভাবিত বা অসম্পূর্ণ করে তোলে। অনেক সময় পুলিশের গাফিলতি ও প্রশাসনিক দুর্নীতির কারণে অনেক অপরাধী বিচারের আওতার বাইরে থেকে যায়, যা জনগণের আইনের প্রতি আস্থা হ্রাস করে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত অভিযোগকারীরা ন্যায়বিচার পান না। বরং মিথ্যা অভিযোগকারীরা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে সক্ষম হয়। আমরা দেখেছি, পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে জনগণ গণপিটুনির মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করছে। এটি মূলত সমাজে ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া ও প্রশাসনের প্রতি মানুষের ক্ষোভের ইঙ্গিত দেয়।
সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। তারা মনে করে, প্রশাসন বা পুলিশ তাদের কাজ সঠিকভাবে করছে না। ফলে তারা নিজেদের উদ্যোগে শাস্তি দিয়ে প্রশাসনকে শেখাতে চায়– কীভাবে ন্যায়বিচার করতে হয়। প্রশাসনকে বিচার শেখানোর উদ্দেশ্যে এটি করা হলেও যদি বারবার তা ঘটতে থাকে, তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। এভাবে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা কোনোভাবেই আইনি বা ন্যায্য পদ্ধতির অংশ নয়।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যখন জনগণ ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
একটি সুস্থ সমাজ গঠনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন অপরিহার্য। জনগণের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা রোধ এবং মিথ্যা অভিযোগকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সহজ হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে দেশ আরও নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক হবে। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো এবং বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করার মধ্য দিয়েই একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
উছমান গনি: শিক্ষক
usmgoni@gmail.com