তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা সবার
Published: 25th, February 2025 GMT
রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদরদপ্তরে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যার ১৬ বছর পূর্ণ হলো আজ। নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দুঃসহ স্মৃতিবহ এই দিনটিকে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করেছে সরকার। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে শহীদ পরিবারসহ সবাই।
দিবসটি উপলক্ষে আজ বনানীর সামরিক কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, বিভিন্ন স্থানে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতার পালাবদলের পর ইতিহাসের ভয়ংকর এই হত্যাকাণ্ড নতুন করে তদন্ত এবং নেপথ্যের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের দাবি ওঠে। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার হত্যাকাণ্ডের মূল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কারণ এর সঙ্গে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জড়িত, সে সঙ্গে ছিল বিদেশি ষড়যন্ত্রও। পরে ২৩ ডিসেম্বর এ ঘটনায় সাত সদস্যের স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক আ ল ম ফজলুর রহমানকে কমিশনের প্রধান করা হয়। সেই কমিশন এখন পর্যন্ত সেনাসদস্যসহ অন্তত ৩৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, আমরা স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। এর মধ্যে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় ইতোমধ্যে রায় দিয়েছেন বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট। মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এখন পর্যন্ত ২৮৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ১৩ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন নির্ধারিত আছে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৭৮ জন জামিন পেয়েছেন। আরও ৩০০ জনের জামিন আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।
এদিকে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, দিনটিকে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস (সরকারি ছুটি ব্যতীত) হিসেবে পালনের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন-সংক্রান্ত পরিপত্রের ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী দিবসটি যথাযথভাবে প্রতিপালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আজ সকাল ৯টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ও বিজিবি মহাপরিচালক এবং শহীদদের পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।
এদিকে বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের স্মরণে আজ সারাদেশে দোয়া মাহফিল করবে বিএনপি। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি জানান, দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি সকালে বনানীর সেনা কবরস্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং দোয়া অনুষ্ঠান করবে। সে সঙ্গে সারাদেশে জেলা-মহানগরে বিএনপির উদ্যোগে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। ঢাকায় আলোচনা সভা হবে বিকেল সাড়ে ৩টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেন, দিবসটি পালন উপলক্ষে বিজিবির যেসব স্থানে রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন হয়, সেসব স্থানে পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং সব সদস্য কালো ব্যাজ পরবেন। সেই সঙ্গে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় পিলখানায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদরদপ্তর পিলখানাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ হয়। পিলখানায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। এ ছাড়া নারী ও শিশুসহ আরও ১৭ জন নিহত হন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপলক ষ ব ড আর সদস য ব এনপ দ বসট
এছাড়াও পড়ুন:
মালদ্বীপের বাংলাদেশ মিশনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলাদেশ হাই কমিশন-মালদ্বীপের উদ্যোগে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি হাইকমিশনের হলরুমে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে হাইকমিশনের কল্যাণ সহকারী এবাদ উল্লাহর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মো. সোহেল পারভেজ।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। এরপর প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন হাইকমিশনের তৃতীয় সচিব মো. জিল্লুর রহমান এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা শিরিন ফারজানা। অতঃপর ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষ্যে নির্মিত দুটি প্রামাণ্যচিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। আলোচনা সভায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মালদ্বীপ বিএনপির সভাপতি মো. খলিলুর রহমান এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রবাসী ডাক্তার মোক্তার আলী লস্কর।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যের শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন বীর ভাষা সৈনিকদের। যাঁদের মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেয়েছি।তিনি মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাংলাভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি এবং মাতৃভাষা সংরক্ষণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে আলোকপাত করেন।
এছাড়াও ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতির জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন তিনি। মাতৃভাষা বাংলা ও বাংলাদেশের ভাবর্মূতি উজ্জ্বল করার জন্য সকল প্রবাসীদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানান হাইকমিশনার।
বাংলাদেশ হাই কমিশন-মালদ্বীপের উদ্যোগে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
এরপর ভাষা শহীদদের এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সকলের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য দোয়া করা হয়। সবশেষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নীলদরিয়া শিল্পীগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় পর্বে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে শিশুদের অংশগ্রহণে কবিতা আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারের সহধর্মিণী রোমানা রাজিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি শিশুদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু এবং তাদের অভিভাবক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/টিপু