গাইবান্ধায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন ছাত্র আহত হয়েছেন। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ মাঠে বাণিজ্য মেলায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। 

আহতদের গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গাইবান্ধা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম আকাশের অবস্থা বেশি গুরুতর। অপর আহত দুজন হলেন, মেহেদী হাসান ও যুগ্ম সদস্য সচিব শেফাউর রহমান। 

এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে শহরের ডিবি রোডে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। পরে রাত ১২টার দিকে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গাইবান্ধা সদর থানা ঘেরাও করে রাখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শতাধিক নেতাকর্মী। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহত ছাত্রনেতা, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শহরের স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ মাঠে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার শেষ দিন ছিল সোমবার। ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে শরিফুল ইসলাম আকাশ, মেহেদী হাসান ও শেফাউর রহমান মেলায় বেড়াতে যান। এ সময় একটি দোকানে এক নারীকে হেনস্তা করা হচ্ছিল দেখে শরিফুল ইসলামসহ ছাত্র নেতারা বাধা দেন। এ ঘটনায় একদল দুর্বৃত্ত তাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। এতে শরিফুল ইসলামসহ তিনজন গুরুতর আহত হন। শরিফুল ইসলাম আকাশের অবস্থা গুরুতর। তার পেটের একটু উপর থেকে প্রায় ৫০টির মতো সেলাই পড়েছে। অন্য দুইজনকেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলা শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মিয়া বলেন, ‌‘ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের একটি ন্যক্কারজনক প্রচেষ্টা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এতক্ষণে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমরা থানা ঘেরাও করে রাখবো।’ 

থানা ঘেরাও: এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদ এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাত ১২টা থেকে গাইবান্ধা সদর কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শতাধিক নেতাকর্মী। তারা থানার সামনে বসে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তারা স্লোগান দেন, ‘দুর্বল প্রশাসন, লজ্জা লজ্জা’। রাত দেড়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানা ঘেরাও কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। 

এ বিষয়ে গাইবান্ধা পুলিশ সুপার নিশাত এঞ্জেলা বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তার করতে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। দ্রুত  হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। ছাত্রদের শান্ত করার চেষ্টা করা চলছে।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঘ র ও কর ন ত কর র আহত

এছাড়াও পড়ুন:

ছিনতাই খুন লুটে ভয়ার্ত মানুষ

মহাসড়কে বাসের ভেতরে অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ। মধ্যরাতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে সোনাদানা ছিনতাই। দিনদুপুরে খোদ রাজধানীতে চলন্ত বাসে অস্ত্র ঠেকিয়ে লুটতরাজ। প্রান্তিক জনপদে ট্রিপল মার্ডার। বীরদর্পে দাপিয়ে বেড়ানো কিশোর গ্যাং। ‘ডেভিল হান্ট’ নামে বিশেষ অভিযানের মধ্যেও খুনোখুনি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, মব ভায়োলেন্স– এমন কোনো অপরাধ নেই, যা ঘটছে না। অপরাধের নানা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে ভীতি। অভিযানের মধ্যেও অপরাধীরা যখন এমন বেপরোয়া, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে উঠেছে নানামুখী প্রশ্ন।  

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলেছেন, ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বেশি পরিচালিত হচ্ছে বলে দৃশ্যমান। অভিযানে এরই মধ্যে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল যারা, অধরা তাদের ধরা। সংঘবদ্ধ অপরাধে যারা জড়িত, তাদের মধ্যে ধারণা জন্মেছে– তারা অভিযানের ফোকাসে নেই। এ কারণে অভিযানের পূর্ণ ফল আসেনি। প্রতিদিন ঘর থেকে বেরিয়ে আবার নিরাপদে ফিরতে পারবে কিনা, অনেকের মধ্যে এমন শঙ্কা ভর করেছে। আবার ঘরে ফিরে সেখানেও ডাকাত-চোর আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে। 

ভুক্তভোগীরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের দাবি করেছেন ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে আন্দোলনকারীরা। তারা বলেছেন, পদত্যাগ না করলে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে মশাল মিছিল হবে। রোববার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেন। রোববার রাত ৩টায় বারিধারার বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ধর্ষণ, খুন, চুরি ডাকাতির প্রতিরোধে প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগে কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় একই ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে বিশেষ অভিযান আরও জোরদার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন। 

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন যে আমাদের আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। তবে আমাদের চেষ্টা আছে এবং আত্মজিজ্ঞাসা আছে। ব্যর্থতা থেকে উত্তরণে আমাদের ব্যাপক চেষ্টা আছে, তাড়না আছে। প্রতিটি ব্যর্থতার ক্ষেত্রে ব্যাপক চেষ্টা আছে। তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তির হাতে হাজার হাজার কোটি টাকা আছে। টাকা থাকলে এবং বদ মতলব থাকলে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করা সম্ভব। সে বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।

ছিনতাই, ডাকাতি নিয়ে দেশবাসী যখন উদ্বিগ্ন, তখন ছিনতাই রোধে পুলিশের তিনটি বিশেষায়িত ইউনিট শিগগিরই মাঠে নামবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। গতকাল রাজশাহীর প্রাইমারি ট্রেনিং সেন্টারে এক কর্মশালায় তিনি এ তথ্য জানান। পুলিশপ্রধান বলেন, ছিনতাই রাতেও বেড়েছে, দিনেও বেড়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ, র‍্যাব ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট যৌথ টহল দেবে। এতেও উন্নতি না হলে আমাদের অন্য পরিকল্পনায় যেতে হবে।

পুলিশের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে সারাদেশে ২৯৪ জন খুন হন। একই মাসে ১৭১টি চুরি, ৭১ ডাকাতি, ১০৫টি অপহরণ এবং ১ হাজার ৪৪০ নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনা ঘটে।
রাজধানীসহ সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে বিশেষ অভিযানের মধ্যেও বেপরোয়া অপরাধীরা। ডেভিল হান্টে গত ১৬ দিনে ৯ হাজার ২৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা যা বলছেন 
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা সমকালকে বলেন, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো যথেষ্ট নয়। অপরাধীর বিষয়ে যে তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে থাকা দরকার, তারা তা পাচ্ছে না। আগে থেকেই অপরাধীর সম্পর্কে তথ্য থাকলে বেশির ভাগ অপরাধ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আমি যতদূর জানি, ঢাকায় যেসব পুলিশ সদস্য কাজ করছে, তারা সবাই নতুন। এ কারণে ঢাকায় তাদের নেটওয়ার্ক ঠিকমতো গড়ে ওঠেনি। 

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. উমর ফারুক সমকালকে বলেন, মানুষ এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে আছে, তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চাইছে। এর কারণ দুর্বল প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণহীন সমাজ ব্যবস্থা। এতে মানুষের মধ্যে এক ধরনের সোচ্চার ও উত্তেজনা মনোভাব তৈরি হয়েছে। যে কারণে সে মনে করে যেটা করছে, সেটাই সঠিক। সরকারও তা শক্তভাবে মোকাবিলা করতে পারছে না। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও বেশি কঠোর অবস্থান নিতে হবে। তবে শুধু গ্রেপ্তার কিংবা বল প্রয়োগ করে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যা বললেন
আতঙ্কজনক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে রোববার রাত ৩টার দিকে বারিধারা ডিওএইচএসে নিজ বাসায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন নিয়ে হাজির হন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দোসররা দেশ অস্থিতিশীল করতে সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে। আজ থেকে যেন কোথাও কোনো অপরাধ না ঘটে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি এই নির্দেশনা কার্যকর করতে না পারে, তাদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হবে ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিনে দিনে আরও উন্নত হবে। 
গতকাল সোমবারও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে অপারেশন আরও জোরদার করা হবে। অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল বাড়ানো হবে, চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হবে।

ঘটনার পরম্পরা
গতকাল ভোরে সায়েদাবাদের স্বামীবাগে মো. শামীম নামে এক যুবককে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। শামীম জানান, তিনি সায়েদাবাদ টার্মিনালে কাজ করেন এবং সেখানেই থাকেন। ভোরে কয়েকজন তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। গত রোববার রাতে আশুলিয়ায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে এক নারী পোশাককর্মী নিহত হন। নিখোঁজের এক দিন পর রোববার দুপুরে উদ্ধার করা হয়েছে আতিয়ার নামে এক ভ্যানচালকের লাশ। রোববার গভীর রাতে দক্ষিণখানে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে আরিফুল ইসলাম নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় রোববার রাতে অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদের ঘরে হানা দেয় ডাকাতরা। এ সময় আজাদসহ তিনজনকে গুলি করা হয়।  

গত শনিবার রাতে পটুয়াখালীর বাউফলের চরমিয়াজান গ্রামে ঘরে ঢুকে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে তার মা-বাবার সামনে থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বরিশালের গৌরনদীর সুন্দরদী গ্রাম থেকে গত বৃহস্পতিবার দুই কলেজছাত্রীকে অপহরণ করা হয়। এই অভিযোগে রোববার রাতে গৌরনদী মডেল থানায় মামলা হয়েছে। পরে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে আদাবরের শেখেরটেকে প্রকাশ্যে চাপাতি নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। চারজনের একটি দল রাসেল নামে এক যুবককে কুপিয়ে চলে যায়। মাদক কারবার ঘিরে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে বলে জানতে পারে পুলিশ। রোববার আদাবর এলাকায় হামলার ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, একটি রিকশায় তিন যাত্রী ছিলেন। রিকশা থামিয়ে চাপাতি দিয়ে যাত্রীদের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।

গত শুক্রবার রাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর মাঠে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা হানিফ আলীসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার দায় স্বীকার করে চরমপন্থি সংগঠন জাসদ গণবাহিনীর নেতা কালু গণমাধ্যমকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠান।

সম্প্রতি ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও দুই নারীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আবু রায়হান ইভান নামে এক শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় তাঁর কাছে থাকা ৪৫ হাজার টাকা ও একটি দামি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।

১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে উত্তরায় ভিক্টর পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে যাত্রীবেশী ৫-৬ যুবক অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই করে। ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে এক নারী ও পুরুষকে রামদা দিয়ে কোপানোর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮ ফেব্রুয়ারি রামপুরার বনশ্রী এলাকায় কাঁচাবাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শ্রমিক দলের নেতা জুয়েলকে গুলি করে তারই দলের আরেক গ্রুপ। ১৩ ফেব্রুয়ারি ইস্কাটনের দিলু রোড এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন দুই রিকশার যাত্রী। শনিবার এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত নৈশপ্রহরী নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আগে থেকেই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে অনুসরণ
বনশ্রীতে কুপিয়ে ও গুলি করে ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের ২০০ ভরি স্বর্ণালংকার ও লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গতকাল মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এ সময় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের আইনের আওতায় না আনলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

বনশ্রীর সি ব্লকের ৫ নম্বর সড়কের ‘অলংকার জুয়েলার্স’-এর মালিক আনোয়ার ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির নিচতলায় পরিবার নিয়ে থাকেন। রোববার রাত পৌনে ১০টায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় দোকানে থাকা ২০০ ভরি স্বর্ণের গহনা ব্যাগে নিয়ে যান। ব্যাগে ১ লাখ টাকাও ছিল। ১০টা ৫০ মিনিটে বাসার সামনে পৌঁছামাত্র তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ঘিরে ধরে। তিনজন মোটরসাইকেল থেকে নেমে তাঁর ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাধা পেয়ে আনোয়ারকে কুপিয়ে ও গুলি করে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। পাশের ভবন থেকে ছিনতাই ও গুলির দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন বাসিন্দারা। রাতেই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

আনোয়ারের ওপর হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তাঁর স্ত্রী হোসনে আরা বেগম জানান, চিৎকার শুনে তিনিসহ পরিবারের সবাই ঘর থেকে বের হয়ে দেখেন, আনোয়ারকে গুলি করছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার সময় বাড়ির প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। বাড়ির দারোয়ান মো. পিয়ারু নিচতলার একটি কক্ষে শুয়ে ছিল। চিৎকার শুনে এগিয়ে আসেনি। গেটও খুলে দেয়নি। হোসনে আরা বলেন, দারোয়ান আমাকে জানায়, গেটের চাবি খুঁজে পাচ্ছে না। ছিনতাইকারীরা চলে যাওয়ার অনেক পরে গেট খুলে দেয়। আমাদের ধারণা, এই ঘটনার সঙ্গে দারোয়ান এবং বাড়ির ম্যানেজার জড়িত থাকতে পারে। 

৭ নম্বর রোডের মারিয়া ইলেকট্রনিক্সের মালিক মাহাবুব আলম টিটো বলেন, রাত পৌনে ১১টায় আনোয়ার আমার দোকানে আসেন। দু’জন কথা বলছিলাম। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেলে সাতজন আনোয়ারের বাসার দিকে চলে যায়। মিনিটখানেক পর আনোয়ারও বাসার উদ্দেশে চলে যান। তিনি যাওয়ার পরপরই শব্দ ও চিৎকার শুনি। দোকান থেকে বের হয়ে দেখি, ওই তিন মোটরসাইকেল নিয়ে দুর্বৃত্তরা একই পথ ধরে চলে যাচ্ছে। আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আনোয়ারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তিনি জানান, আনোয়ার তাঁর কাছে আসার আগে ৭ নম্বর রোডের মুখে মোটরসাইকেল নিয়ে একজনকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। মাথায় হেলমেট ছিল। আনোয়ার আসার পর ওই ব্যক্তি চলে যায়। এর পরই তিনটি মোটরসাইকেলে সাতজন রোডে প্রবেশ করে। আহত আনোয়ার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রামপুরা থানার ওসি আতাউর রহমান আকন্দ বলেন, গুলি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় গতকাল মামলা হয়েছে। ঘটনাস্থল ও এর আশপাশে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

কালীগঞ্জে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি
গাজীপুরের কালীগঞ্জে স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রদীপ কর্মকারের (৬৫) বাড়িতে সোমবার ভোরে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাত দল টাকা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নেয়। স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হলে এলাকাবাসী ডাকাতদের ধাওয়া করে। ভুক্তভোগী প্রদীপ রায় কর্মকার জানান, রাত ৩টার দিকে বাঁশ দিয়ে মই তৈরি করে মুখোশ পরিহিত একদল ডাকাত দোতলার বারান্দায় ওঠে। তারা সাত ভরি স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন, গোপাল মূর্তি, ২০ হাজার টাকাসহ মূল্যবান মালপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা)

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ