সহকর্মীর বাহুর ওপরের অংশে ‘হাত রাখার’ পর সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেছেন নিউজিল্যান্ডের বাণিজ্যমন্ত্রী অ্যান্ড্রু বেইলি। গত সপ্তাহে তিনি ওই সহকর্মীর বাহুতে হাত রাখেন। অনেকে এটাকে বেইলির ‘কর্তৃত্বমূলক’ আচরণ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

সহকর্মীর বাহুতে হাত রাখার ঘটনার জন্য ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন অ্যান্ড্রু বেইলি। মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেও নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্টে তাঁর সদস্যপদ বহাল রয়েছে। নিজের পদত্যাগের বিবৃতিতে বেইলি বলেছেন, ‘আপনারা জানেন, মন্ত্রণালয়ে আমার দপ্তরে পরিবর্তন আনার জন্য অধৈর্য হয়ে পড়েছি।’

বিবৃতিতে বেইলি আরও লেখেন, ‘গত সপ্তাহে কাজ নিয়ে এক সহকর্মীর সঙ্গে আমার প্রাণবন্ত আলোচনা হয়। আলোচনা বেশ দীর্ঘ সময় গড়ায়। আলোচনার একপর্যায়ে আমি তাঁর বাহুর ওপরের অংশে হাত রেখেছিলাম, যা ঠিক হয়নি।’ এই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আনা হয়েছে বলে বেইলি নিজেই জানিয়েছেন।

বেইলি পদত্যাগ করেন গত শুক্রবার। পরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন এক সংবাদ সম্মেলনে এই খবর জানান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এক সহকর্মীর বাহুতে বেইলির হাত রাখার ঘটনা ঘটেছিল এরও তিন দিন আগে, ১৮ ফেব্রুয়ারি।

সোমবার লুক্সন বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে সরকার ‘বেশ দ্রুত’ এবং ‘যথেষ্ট ভালো’ পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে ৬৩ বছর বয়সী বেইলিকে মন্ত্রিসভায় অন্য কোনো দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কক্ষনো না’।

এর আগে গত অক্টোবর মাসে মদ প্রস্তুতকারী এক কর্মীকে ‘হতভাগা’ মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন বেইলি। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার পাশাপাশি বেইলি ওই কর্মীর কপালে ইংরেজি অক্ষর ‘এল’–এর মতো আকৃতি করে নিজের আঙুল রেখেছিলেন। ওই ঘটনায় তিনি পরে জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়েছেন।

নিউজিল্যান্ডের ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে ২০১৪ সালে প্রথম নির্বাচিত হয়েছিলেন অ্যান্ড্রু বেইলি। ২০২৩ সালের শেষে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লুক্সন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর বেইলিকে বাণিজ্য ও ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রী, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও উৎপাদনবিষয়ক মন্ত্রী এবং পরিসংখ্যানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সহকর ম র ব হ ত পদত য গ নমন ত র মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

ফুল অশ্রু গানে বিদায় সন্‌জীদা খাতুনকে

বাংলা নববর্ষে সূর্যোদয়ের প্রথম লগ্নে রমনার বটমূলে ছায়ানটের ‘এসো হে বৈশাখ’ গানের মূর্ছনায় এবারও মোহিত হবেন সবাই। তবে এবারের আয়োজনে থাকবেন না ছায়ানট ও বর্ষবরণের এই আয়োজনের রথী সন্‌জীদা খাতুন। বুধবার ছায়ানট এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অশ্রুসজল চোখে তাঁকে বিদায় জানান ছায়ানটের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, বর্তমান-প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সহযোগী এবং শুভাকাঙ্ক্ষী।

মঙ্গলবার দুপুর ৩টা ১০ মিনিটে স্কয়ার হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে ৯২ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। দুপুর ১২টায় ছায়ানটে সন্জীদা খাতুনের মৃতদেহ নিয়ে আসা হলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনুজরা। কর্মক্ষেত্রে মরদেহ ফুলে ফুলে ভরিয়ে তোলেন তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী ও শিক্ষার্থীরা। অশ্রুসিক্ত নয়নে শববেদির চারপাশ ঘিরে শেষবারের মতো দেখে নেন জীবন্ত এক ইতিহাস ও বাংলা সংস্কৃতি অঙ্গনের বটবৃক্ষ সন্‌জীদা খাতুনকে। পুরোটা সময় সম্মিলিত কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন ছায়ানটের শিল্পীরা। তাঁকে শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য মানুষের সারি প্রসারিত হয় ধানমন্ডি ২৭ পর্যন্ত। রোদে দাঁড়িয়ে থেকেও কারও কোনো ক্লান্তি ছিল না, ছিল শোকের চিহ্ন।

সন্‌জীদা খাতুনকে শেষবারের মতো দেখতে ছায়ানটে ছুটে আসেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সংগীতশিল্পী বুলবুল ইসলাম, ইফফাত আরা দেওয়ান, খায়রুল আনাম শাকিল, চন্দনা মজুমদার, নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ, আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, অভিনয়শিল্পী ত্রপা মজুমদারসহ অনেকে।

ভারতীয় হাইকমিশন, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, ঢাকা থিয়েটার, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ, সুরের ধারাসহ অনেক সংগঠন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। জাতীয় সংগীত ও ‘আগুনের পরশমণি’ গানের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ হয় ছায়ানট প্রাঙ্গণে। এর পর সেখান থেকে সোয়া ১টার দিকে সন্‌জীদা খাতুনের অধ্যাপনার ক্ষেত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের উদ্দেশে মরদেহ নেওয়া হয়। সেখানে সহকর্মীদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পর বেলা আড়াইটায় তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়।

শহীদ মিনার থেকে মরদেহ নেওয়া হয় বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। পরিবারের যারা দেশের বাইরে থাকেন, তাদের শেষ দেখার জন্য তা রাখা হয় হিমঘরে। এর পর জানা যাবে শেষকৃত্যের বিষয়ে। 

বিশিষ্টজনের স্মৃতিচারণ
বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক সমকালকে বলেন, সংগীতসাধনার বিষয়ে সন্‌জীদা খাতুনের একটা গভীর উপলব্ধি ছিল। বিশেষ করে রবীন্দ্রসংগীত এবং রবীন্দ্রজীবনী চর্চা করেছেন। অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো শোক প্রকাশ না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফুল অশ্রু গানে বিদায় সন্‌জীদা খাতুনকে