জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী চিত্রপরিচালক জাহিদুর রহিম অঞ্জন আর নেই। তিনি সোমবার রাত সাড়ে আটটায় ভারতের বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ভাই, এক বোন ও অসংখ্য বন্ধু–স্বজন রেখে গেছেন। সাহিত্যিক শাহীন আখতার তাঁর স্ত্রী। জাহিদুর রহিম অঞ্জন ভাষাসৈনিক মিজানুর রহিমের সন্তান।
প্রথম আলোকে জাহিদুর রহিম অঞ্জনের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন তাঁর ছোট ভাই সাজ্জাদুর রহিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই চার মাস আগে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য ভারতে যান।

জানুয়ারি থেকে তিনি বেঙ্গালুরুতে ছিলেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি অপারেশন করা হয়৷ মূলত অপারেশন–পরবর্তী জটিলতায় তিনি আজ মারা যান। সাজ্জাদুর রহিম জানান, পরিবারের পক্ষে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হয়তো দুই–তিন দিন লেগে যেতে পারে।
জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে লিভারের জটিলতায় ভুগছিলেন জাহিদুর রহিম অঞ্জন। কয়েক মাস ধরে বেঙ্গালুরুর স্পর্শ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। গত সপ্তাহেই তাঁর লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। অস্ত্রোপচারের পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ছিলেন লাইফ সাপোর্টে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এই গুণী নির্মাতা।

কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’ গল্প অবলম্বনে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘মেঘমল্লার’ নির্মাণ করেন অঞ্জন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি পায় সিনেমাটি। এটি ছিল তাঁর প্রথম ফিচার ফিল্ম। প্রথম ছবির জন্যই তিনি ‘শ্রেষ্ঠ পরিচালক’ ও ‘শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা’ হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
সরকারি অনুদানে সর্বশেষ তিনি নির্মাণ করেন ‘চাঁদের অমাবস্যা’। শুটিং সম্পন্ন করে গত বছরেই সিনেমাটি মুক্তির পরিকল্পনা থাকলেও দেশের সার্বিক অবস্থা এবং নিজের অসুস্থতার কারণে মুক্তি দিতে পারেননি।

তবে শিগগিরই সিনেমাটি দর্শকদের সামনে নিয়ে আসতে আগ্রহী ছিলেন। প্রকাশ করেছিলেন সিনেমার পোস্টারও! তিনি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতেন।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনকর্মী, শর্টফিল্ম ফোরামের সাবেক সভাপতি ও চলচ্চিত্র শিক্ষকের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক ও স্মৃতিচারণা করছেন চলচ্চিত্রের সহকর্মী থেকে শুরু করে অগণিত মানুষ। শোক জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, আকরাম খানসহ অনেকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র প রথম অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

মহানবী (সা.)–র রাজনীতির মূল বৈশিষ্ট্য

মহানবী (সা.)–এর আবির্ভাবের আগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল নৈরাজ্যে ভরা। গোত্রভিত্তিক সমাজে ভেদাভেদই ছিল প্রধান। কলহ, যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি লেগেই থাকত। কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক কেন্দ্র না থাকায় আরব সমাজ ছিল বিভক্ত। নৈরাজ্যপূর্ণ আরবে মহানবী (সা.) যে অবিস্মরণীয় রাজনৈতিক বিপ্লব সাধন করেছিলেন তা বিশ্বের ইতিহাসে বিস্ময়কর।

 মহানবী (সা.)–র রাজনৈতিক দায়িত্ব

আল্লাহ–তাআলা ঘোষণা করেছেন, তিনিই এ সত্তা যিনি তাঁর রাসুলকে হেদায়াত ও দীনের হকসহ পাঠিয়েছেন, যাতে আর সব দীনের ওপর একে বিজয়ী করে তোলেন। এ বিষয়ে আল্লাহ সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। (সুরা আল ফাতহ, আয়াত: ২৮)। একই দায়িত্বের কথা তিনি সুরা তাওবা (আয়াত: ৩৩) এবং সুরা আস-সফ্‌ফেও (আয়াত: ৯) উল্লেখ করেছেন।

ইসলাম নামের পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধানকে একটি কেন্দ্রীয় বিশ্বাস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ছিল মহানবী (সা.)–এর দায়িত্ব, যেন তা মানবসমাজের সর্বস্তরে বাস্তবায়ন হয়।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর হিজরত কেন মদিনায় হলো?১৫ আগস্ট ২০২৩

মহানবী (সা.)–র রাজনীতির লক্ষ্য

ওপরের আয়াত থেকে বোঝা যায় মহানবী (সা.)–র রাজনীতি ছিল ইসলামের জন্য। ধর্মীয় চেতনাকে বদ্ধমূল করে আল্লাহ ভীরু চরিত্রবান মানুষ তৈরি করতে চেয়েছেন তিনি, যেন ধর্মীয় বিধান মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। তাহলেই সমাজের বর্বরতা ও নৈরাজ্য দূর করা সম্ভব। তাঁর রাজনীতির লক্ষ ছিল:

১. আল্লাহর পৃথিবীতে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর নির্দেশিত আইন প্রতিষ্ঠা করা।

২. শিক্ষা, অর্থ, সমাজ, সংস্কৃতির সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান পরিপালনের পরিবেশ সৃষ্টি করা।

৩. মানুষে মানুষে বৈষম্য, অনাচার, অবিচার, অন্যায় দূর করে সাম্য, শৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার ও সুষম শাসনের ব্যবস্থা করা।

৪. যোগ্য ও খোদাভীরু নেতৃত্বের মাধ্যমে সমাজ পরিচালনা করা।

৫. পরকালীন কল্যাণের পথকে সবার জন্য মসৃণ করে দেওয়া, যেন পার্থিব প্রবঞ্চনার গোলকধাঁধায় মানব জীবন বরবাদ হয়ে না যায়।

আরও পড়ুনবিয়ের পর খাদিজা (রা.) তাঁর সম্পদ কী করেছিলেন১৭ আগস্ট ২০২৩

মহানবী (সা.)–র রাজনীতির বৈশিষ্ট্য

মহানবী (সা.)-র রাজনীতির তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল:

১. চারিত্রিক ও নৈতিক শক্তি: সকল নবীর রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁদের চারিত্রিক ও নৈতিক শক্তি। তাঁদের নিষ্কলঙ্ক দীর্ঘজীবন যে পরার্থপর পরিচয় বহন করে, তা অন্য কোথাও মেলা ভার। মহানবী (সা.)–এর রাজনীতিতে এই বৈশিষ্ট্য ছিল সমুজ্জ্বল। ফলে তাঁর নিখাঁদ চরিত্রের প্রভাবকে শুধু রাজনৈতিক কার্যকলাপের দোহাই দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল না।

২। উপায়-উপকরণের পবিত্রতা: তিনি কোনো অন্যায় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার মতো উপায় অবলম্বন করে রাজনীতি করেননি। প্রতিপক্ষের সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগত আক্রোশ পোষণ করতেন না। চরম শত্রুর সঙ্গেও মানবিক আচরণ করতেন। তারা ইসলামের আদর্শ মেনে নিলে তাদের আগের সব দোষ মাফ করে দিতেন।

৩. উদ্দেশ্যের নিষ্কলুষতা: ইসলামের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা তাঁর ছিল কাম্য, ব্যক্তি প্রতিষ্ঠা নয়। না হলে তিনি কুরাইশের প্রস্তাব মেনে নেতৃত্ব গ্রহণ করে নিতে পারতেন।

এই তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য স্বার্থান্বেষী ও দুনিয়াদারদের রাজনীতি থেকে মহানবী (সা.)-কে পৃথক মর্যাদা দিয়েছে।

আরও পড়ুনহজরত শোয়াইব (আ.)–এর আবির্ভাব২০ আগস্ট ২০২৩

রাজনৈতিক জীবনের সূচনা

দীনে হককে আর সব দীনের ওপর বিজয়ী করা সংক্রান্ত যে দায়িত্বের কথা আল্লাহ–তাআলা কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বলেছেন, তার সবগুলো অবতীর্ণ হয়েছে মদিনায়। মদিনার সময়টি ছিল আল্লাহর বিধান প্রয়োগের সময়। মক্কার সময়টি মনন-মানসের প্রস্তুতিকাল।

৪০ বছর বয়সে নবুয়তপ্রাপ্তির মক্কায় যে সময়টুকু মহানবী (সা.) কাটিয়েছেন, তখন তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ। জাগতিক উপায়-উপকরণ বলতেও তেমন কিছু তাঁর হাতে ছিল না। তাই তিনি প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তখন। হিজরতের পর ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন।

আরও পড়ুনসুরা কাফে আল্লাহ বলেছেন মানুষ সৃষ্টির কারণ২০ আগস্ট ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ